সানজানা রহমান যুথী
বইপ্রেমীরা জানেন বই শুধু জ্ঞান বা বিনোদনের উৎস নয়, এটি একটি অনুভূতির নাম। প্রতিটি বই যেন নিজের একটা আলাদা গল্প, একেকটা ছোট্ট জগৎ। এই বইগুলোর জন্য যদি ঘরেই একটি ভালোবাসায় ভরা লাইব্রেরি তৈরি করা যায়, তবে তার চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে! তাহলে চলুন জেনে নিই, কীভাবে নিজের ঘরে সহজেই একটি স্বপ্নের লাইব্রেরি বানিয়ে ফেলা যায়-
১. উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করুন
লাইব্রেরি বানানোর প্রথম ধাপ হলো সঠিক জায়গা বেছে নেওয়া। ঘরের এমন একটি কোণ নির্বাচন করুন যেখানে নীরবতা এবং আরাম থাকে। প্রাকৃতিক আলো আসা, হালকা বাতাস চলাচল এমন জায়গা সবচেয়ে ভালো। যদি সম্ভব হয়, আলাদা একটি ছোট ঘর বরাদ্দ করুন। না হলে শোবার ঘরের একপাশ, বসার ঘরের কোণ, অথবা এমনকি বারান্দার একাংশও ব্যবহার করা যেতে পারে।
২. দৃষ্টিনন্দন বুকশেলফ তৈরি করুন
লাইব্রেরির প্রাণ হলো বুকশেলফ। বইয়ের পরিমাণ অনুযায়ী শেলফের ডিজাইন ঠিক করুন। চাইলেই বাজার থেকে তৈরি বুকশেলফ কিনে নিতে পারেন, অথবা কারিগর দিয়ে মনের মতো করে বানিয়ে নিতে পারেন। দেয়ালঘেঁষা উঁচু শেলফ, মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত ফিটিং বুকশেলফ কিংবা ফ্লোটিং ওয়াল শেলফ তৈরি করতে পারেন। পছন্দের উপর নির্ভর করবে আপনার সিদ্ধান্ত। তবে শেলফ যেন মজবুত হয় এবং বইয়ের ওজন সহ্য করতে পারে, সেটি নিশ্চিত করতে ভুলবেন না।
৩. বই সাজানোর অভিনব পদ্ধতি গ্রহণ করুন
বইগুলো এলোমেলোভাবে না রেখে একটি নির্দিষ্ট ছকে সাজান। বিষয়ভিত্তিক, লেখকভিত্তিক, সিরিজভিত্তিক বা এমনকি রঙভিত্তিক করেও সাজানো যেতে পারে। অনেকেই আলাদা করে ফিকশন, নন-ফিকশন, আত্মজীবনী, উপন্যাস ইত্যাদি ভাগ করে রাখেন। চাইলে বিশেষ প্রিয় বইগুলোকে আলাদা তাকেও রাখতে পারেন। সুন্দরভাবে সাজানো লাইব্রেরি শুধু পড়ার অভিজ্ঞতাই নয়, দেখতেও অসাধারণ লাগে।
৪. আরামদায়ক পড়ার কোণ তৈরি করুন
লাইব্রেরি মানে শুধু বই সাজিয়ে রাখা নয়, বরং সেখানে বসে নিরিবিলিতে বই পড়ার মজাও যেন থাকে। তাই একটি আরামদায়ক চেয়ার বা রকিং চেয়ার রাখুন। সঙ্গে একটি ছোট টেবিলও থাকতে পারে। নরম কুশন, হালকা কম্বল এবং পড়ার জন্য সঠিক উচ্চতার আলো-এই জিনিসগুলো লাইব্রেরির পরিবেশকে আরও মনোরম করে তুলবে।
৫. পর্যাপ্ত আলো ও বাতাসের ব্যবস্থা করুন
বই পড়ার জন্য আলোর প্রয়োজন অপরিসীম। সম্ভব হলে প্রাকৃতিক আলোয় ভরা কোনো জায়গা নির্বাচন করুন। পাশাপাশি রাতে পড়ার জন্য সফট আলোয় একটি স্ট্যান্ড ল্যাম্প বা ওয়ার্কিং লাইট রাখুন। আলো যেন চোখের জন্য আরামদায়ক হয়, সেটি অবশ্যই খেয়াল রাখুন। ভালো বাতাস চলাচলের ব্যবস্থাও থাকা জরুরি, কারণ আর্দ্রতার কারণে বইয়ে ছত্রাক ধরতে পারে।
৬. দৃষ্টিনন্দনভাবে সাজানো
লাইব্রেরিতে নিজের মনের মতো করে সাজাতে পারেন। দেয়ালে প্রিয় লেখকের উক্তি লিখে ফ্রেম করে ঝুলিয়ে দিতে পারেন। টেবিলে রাখতে পারেন ছোট্ট ইনডোর গাছ, মোমবাতি, আর্ট-পিস বা বুকমার্কের সংগ্রহ। চাইলে লাইব্রেরির এক কোণে একটি বোর্ড রাখতে পারেন, যেখানে বই পড়ার লক্ষ্য বা রিভিউ নোট করতে পারবেন।
৭. বইয়ের নিয়মিত যত্ন নিন
লাইব্রেরি বানানোর পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো বইয়ের যত্ন নেওয়া। নিয়মিত ধুলা পরিষ্কার করুন। বইয়ের পৃষ্ঠাগুলো যেন পোকামাকড়ের শিকার না হয়, সেজন্য মাঝে মাঝে খোলা বাতাসে বই ঝাড়ুন। অতিরিক্ত আর্দ্রতা রোধ করতে চাইলে ডিহিউমিডিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন। পুরনো বইগুলোর বাঁধাই নষ্ট হলে সময়মতো ঠিক করিয়ে নিন। বইয়ের মাঝখানে কখনও বেশি মোটা কিছু রাখবেন না, এতে বইয়ের মেরুদণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
৮. লাইব্রেরিকে প্রাণবন্ত রাখুন
নতুন বই সংগ্রহ করা, পুরোনো বই পড়া, বই নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনার আয়োজন করুন।এভাবেই লাইব্রেরির পরিবেশ প্রাণবন্ত রাখতে পারবেন। চাইলে মাসে একদিন লাইব্রেরি ডে পালন করতে পারেন, যেখানে একদিন শুধু বই পড়া এবং লাইব্রেরি গোছানোর জন্য বরাদ্দ থাকবে।
ঘরের একটি লাইব্রেরি শুধু বই রাখার জন্য নয়, এটি আপনার ভালোবাসা, রুচি এবং অভ্যাসের প্রতিচ্ছবি। সময় নিয়ে নিজের পছন্দমতো সাজিয়ে তুলুন প্রিয় লাইব্রেরি। তাহলেই এখানে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত হবে প্রশান্তিময়, মধুর এবং স্মরণীয়। মনে রাখবেন, একটি সুন্দর লাইব্রেরি তৈরি করা মানে নিজের আত্মার জন্য একটি নির্ভরতার জায়গা গড়ে তোলা।
কেএসকে/এএসএম