৫ বছরে যেসব প্রভাব পড়লো জনজীবনে

0
2


আজ থেকে ঠিক পাঁচ বছর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) আনুষ্ঠানিকভাবে কোভিড-১৯ কে একটি গ্লোবাল প্যানডেমিক (বৈশ্বিক মহামারি) হিসেবে ঘোষণা করেছিল। সেদিন থেকে অমূল পরিবর্তন হয়ে যায় বিশ্বব্যাপী মানুষের জীবনযাপন।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে প্রথম এই কোভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়, এরপর ভাইরাসটি দ্রুতগতিতে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। ২০২০ সালের ১১ মার্চের ঘোষণার মধ্য দিয়েই এটি স্পষ্ট হয়ে যায় যে এই করোনা ভাইরাস শুধুমাত্র একটি দেশ বা অঞ্চলের সমস্যা নয়, বরং এটি সমগ্র বিশ্বের জন্য একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সংকট।

ওয়ার্ল্ডওমিটার ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত সার বিশ্বে মারা গেছেন ৭০ লাখ ১০ হাজার ৬৮১ জন। আক্রান্ত হয়েছিল প্রায় এর শতগুণ।

আজ পাঁচ বছর পরে এসে এই ভাইরাস আর প্রাণঘাতী নয়। ভ্যাকসিন, চিকিৎসা আর মানুষের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার অভিযোজন, সবকিছু মিলিয়ে মানুষ আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে ঠিকই, কিন্তু মহামারির কিছু প্রভাব এখনো রয়ে গেছে জনজীবনে। চলুন জেনে নেই এ বৈশ্বিক মহামারির কোন কোন প্রভাব আমরা আজও বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছি প্রতিদিনের জীবনে-

১. সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা
মহামারির পর থেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা অনেকেরই অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ভিড়ের জায়গা, সামাজিক অনুষ্ঠান এবং গণপরিবহনে অনেক মানুষের মধ্যে যেতে এখন অস্বস্তি বোধ করেন তারা।

২. মাস্ক পরা
মাস্ক পরা এখন আর স্বাস্থ্যবিধি নয়, এটিও এখন একটি অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। বাইরে বের হলে বা ভিড় জায়গায় মাস্ক পরা এখন সাধারণ বিষয়। ধুলোর জন্য আগে থেকেই হয়তো মাস্ক ব্যবহার করতেন অনেকে, তবে এখন জীবাণু বিষয়েও তারা সতর্ক হয়ে গেছেন।

৩. হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং হাত ধোয়ার অভ্যাস
হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং নিয়মিত হাত ধোয়া এখন আর মহামারির দিনগুলোর মতো কঠোর নিয়ম না থাকলেও এটি দৈনন্দিন রুটিনের অংশ হয়ে গিয়েছে। তবে এই অভ্যাসটি সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এটি অন্যান্য রোগ প্রতিরোধেও সাহায্য করে।

৪. ওয়ার্ক ফ্রম হোম
মহামারিকালে যখন লকডাউনে চলে গেলো সারাদেশ, এমনকি বিশ্বও, তখন অফিসের কাজ বাড়ি থেকে করার মাধ্যমেই টিকে ছিল অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো চলেছে সম্পূর্ণ অনলাইন নির্ভর। তবে লকডাউন উঠে যাওয়ার পরও এর স্থায়ী প্রভাব থেকে গেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান সে সময় বুঝতে পেরেছে যে অফিসের সব কর্মচারীর সশরীরে উপস্থিত থাকার প্রয়োজন নেই। এতে অফিসের অর্থনৈতিক চাপও কমে। তাই এখন এটি একটি সাধারণ প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি কর্মজীবন এবং ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতেও সাহায্য করছে। ফলে মহামারির পর অনেকেই এখন নির্দিষ্টভাবে রিমোট চাকরি খুঁজছেন।

৫. ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার বৃদ্ধি
অনলাইন ক্লাস, ভার্চুয়াল মিটিং এবং ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে সেসময়। এটি আমাদের জীবনকে আরও সহজ এবং দ্রুতগতির করে তুলেছে। যারা মহামারির আগে হয়তো কম্পিউটার ও মোবাইল ফোনের বিস্তারিত ব্যবহার সম্পর্কে তেমন জানতেন না, তারাও করোনাকালে এ বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করে ফেলেছেন কাজের প্রয়োজনে।

৬. স্বাস্থ্য জটিলতা
মহামারির সব প্রভাবই যে ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে, তা নয়। করোনাকালে যারা আক্রান্ত হয়েছেন এবং কোভিড-১০ ভাইরাসকে পরাজিত করে বেঁচে ফিরেছেন, তাদের অনেকেরই নানারকম স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিয়েছে পরবর্তীতে। এর মধ্যে ভিটামিনের ঘাটতি, লিভার ও ফুসফুসের সমস্যা, ডায়াবেটিস, শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তির সমস্যা, স্মৃতিজনিত সমস্যা ও মানসিক রোগ অন্যতম।

তবে সেই সঙ্গেই মানুষ এখন স্বাস্থ্যের প্রতি বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। নিয়মিত শরীরচর্চা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, এবং মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া এখন অগ্রাধিকার পাচ্ছে।

৭. পরিবার এবং বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো
মহামারি আমাদের পরিবার এবং কাছের মানুষদের সঙ্গে বেশি সময় কাটানোর গুরুত্ব বুঝিয়েছে। এটি সম্পর্কগুলোকে আরও মজবুত করেছে।

৮. ভ্যাকসিনের প্রতি আগ্রহ
কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের জন্য সারা বিশ্বের মানুষ যেভাবে দম আটকে অপেক্ষা করেছিল সে সময়ে, তা মানুষকে টিকার গুরুত্ব বুঝিয়েছে। ফলে স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য ভ্যাকসিনের বিষয়ে মানুষ আগের চেয়ে সচেতন হয়েছে।।

৯. মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন
মহামারি মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং বিষণ্নতা বাড়িয়েছে। অনেক মানুষ যেমন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন, তেমনই সামগ্রিকভাবে মানুষ এখন মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন এবং কাউন্সেলিং বা থেরাপির সাহায্য নিচ্ছেন।

১০. পরিবেশ সচেতনতা
মহামারি আমাদের প্রকৃতি এবং পরিবেশের গুরুত্ব বুঝিয়েছে। লকডাউনের মানুষ যখন ঘরবন্দী, তখন প্রকৃতি যেভাবে নিজের সৌন্দর্য নিয়ে বিকশিত হয়েছিলো, তা মানুষকে ভাবতে বাধ্য করে যে প্রকৃতির জন্য ক্ষতিকর কতোকিছুই না করে মানুষ, না ভেবেই। ফলে অনেকেই এখন পরিবেশবান্ধব জীবনযাত্রা এবং টেকসই অভ্যাস গ্রহণে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

কোভিড-১৯ মহামারি আমাদের জীবনকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে শিখিয়েছে। কতো পরিবার প্রিয়জন হারিয়েছে, একই পরিবারে বেশিরভাগ সদস্যের মারা যাওয়ার ঘটনাও কম নয়। তবে আমরা যারা বেঁচে আছি, তাদের স্বাস্থ্যবিধি, সম্পর্ক এবং সামাজিক দায়িত্বের ওপর অনেক স্থায়ী প্রভাব ফেলেছে এই মহামারি। স্বাস্থ্যজনিত নানা জটিলতায় হয়তো ভুগছেন অনেকেই, তবে ইতিবাচক মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনগুলোকেও ছোট করে দেখার সুযোগ নেই।

এএমপি/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।