‘অ্যান্টিভেনম থাকলেও পেল না ঈসাদ, পথে গেল প্রাণ’ গত ২৯ অক্টোবর একটি জাতীয় প্রচারিত প্রতিবেদনটি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নজরে এসেছে। কমিশন জানিয়েছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম থাকা সত্ত্বেও সেবাপ্রার্থীর চিকিৎসা না পেয়ে মারা যাওয়ার এ অভিযোগটি অত্যন্ত মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক। এ ঘটনা জাতীয় মানবাধিকার কমিশন স্বঃপ্রণোদিত অভিযোগ (সুয়োমটো) গ্রহণ করেছে।
বুধবার (৩০ অক্টোবর) কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা ইউশা রহমানের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে।
কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির অধিকার মৌলিক মানবাধিকার। কোনো ধরনের গাফিলতি বা অব্যবস্থাপনায় যদি তা বিঘ্নিত হয় সেটি মানবাধিকারের লঙ্ঘন। ওই ঘটনাটি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক এবং কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারে না।
গৃহীত সুয়োমটোতে একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদনের বরাতে উল্লেখ রয়েছে, বিষধর সাপে দংশিত হওয়ায় বাকপ্রতিবন্ধী স্কুলপড়ুয়া এক শিশুকে কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। তবে সেখানে তাকে অ্যান্টিভেনম না দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পথে মৃত্যু হয় ১০ বছরের শিশু ঈসাদ ভূঁইয়ার।
ঈসাদ উপজেলার কায়েমপুর ইউনিয়নের পানিয়ারূপ গ্রামের মানসিক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী আমিন ভূঁইয়ার ছেলে। গত ২৭ অক্টোবর বাড়ির কাছে খেলাধুলা করার সময় বিষধর সাপে দংশন করে তাকে। তার চিৎকার ও কান্নাকাটির এক পর্যায়ে বাড়ির লোকজন পায়ে ক্ষত পান। দুটি দাগ দেখে পরিবারের সদস্যরা বুঝতে পারেন, তাকে সাপে দংশন করেছে।
তারা জানান, দুপুর ২টার দিকে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে জরুরি বিভাগে দায়িত্বে থাকা কর্মীরা জানান, অ্যান্টিভেনম নেই। তারা চিকিৎসা না দিয়ে ও রেজিস্ট্রার খাতায় নাম না লিখে কুমিল্লায় যেতে বলেন। এ সময় কসবার ওষুধের দোকানেও অ্যান্টিভেনম পাওয়া যায়নি।
তবে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নিজাম উদ্দিন বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম আছে। একই কথা বলেছেন ঘটনার দিন দায়িত্বে থাকা ডা. আকিব ইকরাম। তার ভাষ্য, ঘটনার সময় তিনি দুপুরের খাবার খেতে বাসায় ছিলেন। জরুরি বিভাগ থেকে বিষধর সাপে দংশনের রোগী এসেছে কি না, তাকে জানানো হয়নি।
সুয়োমটোতে উল্লেখ রয়েছে, সংবাদ প্রতিবেদনে উল্লিখিত কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আকিব ইকরামের অনুপস্থিতির বিষয়টি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। অ্যান্টিভেনম না পেয়ে শিশু ঈসাদ ভূঁইয়ার মৃত্যুর দায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বরত চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টরা কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। বর্ষা এবং বর্ষা পরবর্তী সময়ে গ্রামাঞ্চলে সাপে কাটা রোগীর মৃত্যুর খবর প্রায়ই প্রচারিত হয় একই সাথে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসমূহে অ্যান্টিভেনম না থাকার বিষয়টিও উঠে আসে। সাপে কাটার খবর বেশিরভাগ সময়ে গ্রামাঞ্চলে হলেও সেখানে অ্যান্টিভেনম না পাওয়ার বিষয়টি অগ্রহণযোগ্য।
এ অবস্থায় কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. আকিব ইকরামসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বলেছে কমিশন। পাশাপাশি এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তিরোধে দেশের প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যান্টিভেনম প্রাপ্যতা এবং চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবকে বলা হয়েছে।
এফএইচ/বিএ/জিকেএস