টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম রান করা অপি এখন কোচ-নির্বাচক

0
3


টেস্ট অভিষেকের আগেই তার নাম ডাক ছড়িয়ে পড়েছিল। তাকে সবাই চিনতে শুরু করেছিল। কারণ, বাংলাদেশ বিশ্বকাপ খেলার এবং টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার আগেই মেহরাব হোসেন অপির নামটি সবার জানা হয়ে গিয়েছিল।

কিভাবে? কারণ, তিনি যে বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরিয়ান! বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে ১৯৯৯ সালের ২৫ মার্চে ঢাকায় হওয়া তিনজাতি ক্রিকেটে ঢাকা স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দারুণ এক সেঞ্চুরি (১১৬ বলে ৯ বাউন্ডারি ২ ছক্কা) করে বসেন ওপেনার মেহরাব হোসেন অপি। সেটাই একদিনের ক্রিকেটে বাংলাদেশের কোন ব্যাটারের প্রথম শতক।

ওই সেঞ্চুরি অপিকে শুধু বাড়তি পরিচিতি এনে দেয়নি। তার জনপ্রিয়তাই শুধু বাড়েনি। ক্রিকেটার ও পারফরমার হিসেবেও দিয়েছিল প্রতিষ্ঠা। মোটকথা, টেস্ট দলে থাকা নিয়ে মেহরাব হোসেন অপির মনে কোন সংশয়, সন্দেহ ছিল না। তিনি জানতেন অভিষেক টেস্টের দলে থাকবেন। এবং বাস্তবেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। নারায়ণগঞ্জের শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুতের সাথে পুরনো ঢাকার মেহরাব হোসেন অপিই ইনিংস উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের।

জাগো নিউজের সাথে সেই টেস্ট অভিষেকের সময়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অপি তাই বলে এতটুকু বাগাড়ম্বর করেননি। নিজের কৃতিত্ব বড় করে না দেখে বিষয়টাকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করেন, ‘আমার দলে থাকা নিয়ে সংশয় ছিল না। কারণ হলো, ৯৯‘র বিশ্বকাপের সময় থেকেই আমার আর বিদ্যুতের পার্টনারশিপটা প্রায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছিল। আমরা খুব ভালভাবেই নিজেদের জুটি হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলেছিলাম।’

Mehrab Opi

‘আমার মনে হয় নিজেদের যোগ্যতা দিয়েই আমরা দুজন উদ্বোধনী জুটিটা গড়েছিলাম। আমাদের যে দলটা নির্বাচন করার পর সবাই খুব খুশি ছিলাম যে- আমরা টেস্ট জগতে পা রাখবো। জীবনের প্রথম টেস্ট খেলবো। তবে আমি কনফিডেন্ট ছিলাম আমি খেলবো।’

‘আমি তখন ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটে আবাহনীর হয়ে খেলি। তবে কোন ১১ জন খেলানো হবে, তা অবশ্য জানতাম না। তখন দল সাজানো আর একাদশ নির্বাচন ও ঘোষণার নিয়মটা এখনকার কালচারের মত না। এখন যেমন খেলার আগের দিনই অন্তত ১২ জন ডিক্লেয়ার করে দেয়া হয়। তখন ওসব ছিল না। তখন টিম ডিক্লেয়ার হতো মাঠে যাওয়ার পর ওয়ার্মআপ শেষে।’

Mehrab Opi

আপনি কখন জানলেন, আপনি খেলছেন? অপি জানালেন, ‘টসের আগে ওয়ার্মআপ করার পর কোচ ইমরান ভাই টিম ডিক্লেয়ার করলেন। মানে জানিয়ে দিলেন, কোন ১১ জন খেলবে। কার ব্যাটিং পজিশন কি হবে।’

ম্যাচের স্মৃতি তেমন একটা মনে নেই। এটুকু মনে আছে যে, ‘প্রথম ওভার ফেস করেছিল বিদ্যুৎ (শাহরিয়ার হোসেন)। বোলার ছিলেন জাভাগাল শ্রীনাথ। আমার এখনো মনে আছে প্রথম ওভারটি ছিল মেডেন। আমি দ্বিতীয় ওভারে জহির খানের বলে সিঙ্গেলস নিলাম। সেটাই ছিল বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম রান আমার। আমার গর্ব হয় আমি দেশের হয়ে প্রথম টেস্ট খেলেছি এবং দেশের প্রথম টেস্ট রানটি আমার। অনেক কিছুই প্রথম থাকার অনুভুতি অন্যরকম। একটা টেস্ট দলে থাকা। প্রথম টেস্ট খেলার অনুভুতি অন্যরকম।’

Mehrab Opi

অভিষেক টেস্ট খেলা দলকে সংবর্ধনা জানাবে বিসিবি। আপনিও হবেন সম্মানিত। কেমন লাগছে। অনুভুতিটা কি? ‘প্রথমতঃ অসম্ভব ভাল লাগছে এই ভেবে যে যাদের সাথে ক্রিকেট ক্যারিয়ার জড়িত, যাদের সাথে একসাথে খেলেছি একটা বড় সময়। অনেক স্মৃতি আর অনেক মধুর স্মৃতি যাদের সাথে জড়িয়ে আছে, ভাল লাগার স্মৃতিগুলোই বেশি। তাদের সাথে আবার দেখা হবে। কথা হবে। ভাব বিনিময় হবে। আনন্দে মেতে উঠতে পারবো। সেটা ভেবেই আমার মনে আনন্দের ফলগুধারা বইছে। বলতে পারেন আমি যারপরনাই আনন্দিত। পুলকিত, রোমাঞ্চিত। আমি সামনের দিকে তাকিয়ে আছি। মুখিয়ে আছি। কখন সবার সাথে দেখা হবে।’

খেলা ছাড়ার পর ক্রিকেট ছাড়েননি অপি। মাঠের মানুষ, মাঠেই ছিলেন। ক্লাব কোচিংকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন অপি। মোহামেডান ও অন্যান্য ক্লাবের কোচিং প্যানেলে ছিলেন। এখন আছেন ক্রিকেট বোর্ডে। কাজ করছেন জুনিয়র লেভেলের সিলেক্টর হিসেবে।

ব্যক্তি জীবনে ৩ ছেলের পিতা অপি। ‘আল্লাহ পাকের রহমতে আমার ৩ ছেলে। বড় ছেলে নিউইয়র্কে থাকে। হি ইজ এমবিএ। পরেরটা ১৭ বছর বয়সে পা দিয়েছে। এবার এসসি পরীক্ষা দিল। সবচেয়ে ছোটটার বয়স ১১ বছর। ক্লাস ফোরে পড়ে।’

Mehrab Opi

ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি? ‘ক্রিকেটের সাথেই আছি। কোচ ছিলাম। বিসিবির ও বিভিন্ন ক্লাব ক্রিকেটেও কোচিং করিয়েছি। খেলা শেষে অল্প কিছুদিন বাবার গার্মেন্টস ব্যবসা দেখেছি। এখন কোচিং ছেড়ে সিলেক্টরের ভূমিকায়। এইজ গ্রুপের সিলেক্টর হিসেবে আছি। আল্লাহ যতদিন সুস্থ রাখবেন ক্রিকেটের সাথেই জড়িয়ে থাকতে চাই।’

এআরবি/আইএইচএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।