জয়ের জন্য প্রয়োজন ৩৭১ রান। চতুর্থদিন শেষ বিকেলে ২১ রান তুলে অপরাজিত থেকে মাঠ ছেড়ে যান দুই ওপেনার জ্যাক ক্রলি এবং বেন ডাকেট। শেষ দিন প্রয়োজন ৩৫০ রান। চতুর্থ ইনিংসে, পঞ্চম দিন- ৩৫০ রান তাড়া করার সাহস অন্তত এই যুগে কেউ করবেই না। যেখানে ভারতীয় দলে রয়েছেন জসপ্রিত বুমরাহর মত বোলিং অস্ত্র। প্রথম ইনিংসে যিনি নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। ৪টি ক্যাচ মিস না হলে বুমরাহর নামের পাশে থাকতো ৯ উইকেট।
৩৫০ রান! শেষ দিন, চতুর্থ উইকেট- চিন্তারও তো বাইরে। কিন্তু দুই ভদ্র মহাশয় টেস্ট ক্রিকেটে যে নতুন যুগের সূচনা করেছিলেন, তা দিয়ে টেস্টের ইতিহাস ওলট-পালট করে দিয়েছিলেন আগেই। এবার লিডসের হেডিংলিতে আরও একবার করলেন।
ব্রেন্ডন ম্যাককালাম আর বেন স্টোকস। দু‘জনই নিউজিল্যান্ডের। প্রথমজন সরাসরি নিউজিল্যান্ডের, শেষেরজন নিউজিল্যান্ড বংশোদ্ভূত। ইংল্যান্ড ক্রিকেটের হাল তাদের হাতে। তাদের অভিধানে `হার‘ বলতে কোনো শব্দ নেই। যেমন, যে পরিস্থিতিই থাকুক, জিততে হবে- এটা হলো এই কোচ এবং অধিনায়কের মূল দর্শক। যাকে আধুনিক ক্রিকেটের ভাষায় বলা হচ্ছে, `বাজবল ক্রিকেট।‘
এই বাজবল ক্রিকেট দিয়েই এর আগে অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করেছে ইংল্যান্ড। এবার আরও একটি অসম্ভবকে সম্ভব করে ছাড়লো ইংলিশরা। ভারতের করা ৩৭১ রান তাড়া করে ফেললো! অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স। ৫ উইকেটের জয়ে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেলো ইংল্যান্ড।
পরাজয়ের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হল শুভমান গিলের দল পাঁচটি শতরান করেও হার বাঁচাতে পারেনি। টেস্ট ক্রিকেটের ১৪৮ বছরের ইতিহাসে এমন লজ্জার নজির আর দ্বিতীয়টি নেই।
হেডিংলেতে প্রথম ইনিংসে শতরান করেছেন যসস্বি জয়সওয়াল, শুভমান গিল এবং রিশাভ পান্ত। দ্বিতীয় ইনিংসে শতরান এসেছে লোকেশ রাহুল এবং রিশাভ পান্তের ব্যাট থেকে। সব মিলিয়ে ভারতীয় ব্যাটাররা পাঁচটি শতরানের ইনিংস খেলেও দলকে জেতাতে পারেননি ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে।
অথচ প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ডের অলি পোপ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে বেন ডাকেট শতরান করে জয় ছিনিয়ে নিয়েছেন। প্রথম ইনিংসে হ্যারি ব্রুক করেন ৯৯ রান। এক রানের জন্য শতরান হাতছাড়া হয় তার। এই তালিকায় শীর্ষে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া। তারা ১৯৪৮ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্টের পঞ্চম দিন লিডসেই ৪০৪ রান তুলে জয় ছিনিয়ে নিয়েছিল।
ভারতের হারের সবচেয়ে বড় দায় ফিল্ডারদের। এত খারাপ ফিল্ডিং শেষবার তাদের কবে করতে দেখা গিয়েছিল মনে পড়ছে না। পুরো ম্যাচে সাতটা ক্যাচ পড়েছে। তারমধ্যে একাই জসস্বি জয়সওয়াল চারটি ক্যাচ ছেড়েছেন। তার মধ্যে প্রথম ইনিংসে দুটো ক্যাচ ছেড়েছেনর পান্ত। একটা জাদেজা। জশস্বির চারটে ক্যাচের জন্য ১৬৬ রান খেসারত দিতে হয়েছে ভারতকে।
পাল্লা দিয়ে খারাপ হয়েছে ভারতের ফিল্ডিং। সহজ বাউন্ডারি ছেড়ে দিয়েছে। এক রানের জায়গায় দু’রান হয়েছে। ফলে ইংলিশ ব্যাটারদের ওপর চাপ কমে যায়। পাঁচ দিনের টেস্টে ভারত এত ক্যাচ কখনও ছাড়েনি। ভারতের ফিল্ডিং কোচ টি দিলীপকে নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। প্রতিটা ম্যাচের পরে সেরা ফিল্ডারকে পদক দেন তিনি। এ বার হয়তো খারাপ ফিল্ডিংয়ের জন্য তাকে ফিল্ডারদের জরিমানা করতে হবে।
আইএইচএস/জেডএইচ