বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেছেন, বিএনপি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন দাবি করেছিল, কিন্তু এখন যারা উপদেষ্টা আছেন তারা হয়তো যৌক্তিক সময়ের অর্থটা বুঝতে পারছেন না। আমরা চাই না দেশের জনগণ রাস্তায় নেমে তাদের বুঝিয়ে দিক যৌক্তিক সময় কোনটা।
সোমবার (২ জুন) জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ঢাকা বার ইউনিটের উদ্যোগে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪ তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন।
কায়সার কামাল বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়েছে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন। এই দাবি হঠাৎ করে বলা হয়নি। যেদিন প্রফেসর ইউনূস সাহেব শপথ নিয়েছিলেন সেদিনই আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছিলেন রাজনৈতিকভাবে আমরা তাকে সমর্থন করি, কিন্তু যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন দাবি করছি। যৌক্তিক সময়ের অর্থটা এখন যারা উপদেষ্টা আছেন তারা হয়তো বুঝতে পারছেন না। আমরা চাই না দেশের জনগণ রাস্তায় নেমে তাদের বুঝিয়ে দিক যৌক্তিক সময় কোনটা।
‘উপদেষ্টারা নির্বাচন দিতে কেন ভয় পান বা দেরি করছেন, দেশের মানুষ কিন্তু বুঝতে পারছেন’- যোগ করেন তিনি।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের এই মহাসচিব আরও বলেন, আইনজীবী সমাজের প্রতি অনুরোধ জানাবো ২০০৬ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর থেকে আমরা আইনজীবী সমাজ বিরামহীনভাবে আইনের শাসন কায়েম করার জন্য, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি, তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, মানুষের বাকস্বাধীনতা, ভোটাধিকার, সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। আপাতত একটু বিরতি নিয়েছি। যদি প্রয়োজন পড়ে এই আইনজীবী সমাজ রাস্তায় নামবো ভোটের দাবিতে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে, আইনের শাসন কায়েমের লক্ষ্যে।
তিনি আরও বলেন, দেশে যে মব জাস্টিস কালচার তৈরি করা হয়েছে সেজন্য তো হাজার হাজার মায়ের বুক খালি হয়নি। যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি দেখতে পাচ্ছি সেজন্য তো আমার ভাই রক্ত দেননি। আমরা চাই এই বাংলাদেশ একটি স্বাধীন, সার্বভৌম আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ হবে। যে বাংলাদেশে আইনের শাসন থাকবে, ন্যায়বিচার থাকবে, সাংবিধানিক অধিকারগুলো প্রত্যেক নাগরিক পাবে।
‘সেজন্যই বিএনপি ৩১ দফা রাষ্ট্র কাঠামো ঘোষণা করেছে। যে রাষ্ট্র কাঠামো আমার আপনার মুক্তির গ্যারান্টি দিচ্ছে, যে রাষ্ট্র কাঠামো এ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার গ্যারান্টি দিচ্ছে, যে রাষ্ট্র কাঠামো কৃষকদের গ্যারান্টি দিচ্ছে, যে রাষ্ট্র কাঠামো স্বাস্থ্য অধিকার কর্মীদের গ্যারান্টি দিচ্ছে, যে রাষ্ট্র কাঠামো মানবাধিকার কর্মীদের গ্যারান্টি দিচ্ছে, দেসশের ১৮ কোটি মানুষের গ্যারান্টি দিচ্ছে, নিরাপত্তা দিচ্ছে। আইনজীবী সমাজের দায়িত্ব তারেক রহমানের এই ৩১ দফা বাস্তবায়নে কাজ করা।’
জিয়াউর রহমান সম্পর্কে তিনি বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সবচেয়ে বড় আদর্শ ছিল সততা ও দেশপ্রেম। ডিসিপ্লিনে বিশ্বাস করতেন। আইনজীবী হিসেবে কোর্ট প্রাঙ্গণে আমরা যারা নেতৃত্বে আছি কতটুকু ডিসিপ্লিন ফলো করছি। ফ্যাসিস্ট রেজিমের সময় আওয়ামী আইনজীবীরা যেভাবে অত্যাচার চালাতেন আইনজীবীদের ওপর এবং আদালতে হুঙ্কার দিতেন, আজকেও যদি আইনজীবী ফোরামের নেতারা সেই কাজ করেন তাহলে পার্থক্য কোথায়? জিয়াউর রহমানের ডিসিপ্লিন তো সে কথা বলে না।
তিনি বলেন, তারেক রহমান বলেছেন, শেখ হাসিনার এই পতনের মাধ্যমে আমাদের অনেক কিছু শিক্ষণীয় আছে। আমরা এমন কোনো কাজ করবো না যেন দুর্দিনে আমাদের পালিয়ে যেতে হয়। জিয়াউর রহমানের কর্মীরা কখনো পালাতে শিখে নাই। আমরা বিএনপির অনেক দুর্যোগ দুর্দিন দেখেছি, ওয়ান ইলেভেনের সময় একটা নেতাকর্মীও পালিয়ে যায়নি। তখন দেশনেত্রী বলেছিলেন, এই দেশের মাটিতে মরতে চাই। তিনি দেশ ছেড়ে পালাননি।
তিনি নেতাকর্মী ও আইনজীবীদের জিয়ার আদর্শকে ধারণ নিজেদের মধ্যে সততা ও দেশপ্রেম অনুভব করার কথা বলেন।
ঢাকা বার ইউনিটের আহ্বায়ক খোরশেদ আলমের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব নিহার হোসেন ফারুকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি আলহাজ বোরহান উদ্দিন ও ইকবাল হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক হোসেন আলী খান হাসান, মকবুল হোসেন ফকির ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মহি উদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ।
এমআইএন/এমকেআর