‘লুটপাটের বাজেটে’ এবারও শ্রমিকের স্বার্থ উপেক্ষিত

0
0


অভ্যুত্থান-পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষিত বাজেটকেও ‘লুটপাটের বাজেট’ আখ্যা দিয়ে এ বাজেটে দেশের প্রায় সাড়ে সাত কোটি শ্রমিকের স্বার্থ উপেক্ষিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ।

সংগঠনটি বলছে, এবারের বাজেট সাম্রাজ্যবাদী লগ্নিপুঁজির সর্বোচ্চ মুনাফা ও লুটপাটের স্বার্থে প্রণীত হয়েছে। ফলে সাম্রাজ্যবাদী লগ্নিপুঁজি ও তার দালাল পুঁজির শোষণ-লুণ্ঠন আরও তীব্রতর হয়ে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য আরও বাড়বে। যা সামাজিক অস্থিরতাকেও বাড়িয়ে তুলবে।

সোমবার (২ জুন) সন্ধ্যায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এক বিবৃতিতে সংগঠনটি এ মন্তব্য করেছে। বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের কেন্দ্রীয় সভাপাতি চৌধুরী আশিকুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাস যৌথভাবে এ বিবৃতি দেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেটের এক তৃতীয়াংশ (২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা) ঘাটতি বাজেট, যার অবশ্যম্ভাবী চাপ পড়বে নিম্নআয়ের শ্রমিক-কৃষক ও জনগণের ওপর। তিন বছর ধরে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের বেশি হলেও সরকারের মজুরি বোর্ড ঘোষিত নিম্নতম মজুরিতে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশ ধরা হয়েছে। যার কারণে প্রতি বছরই শ্রমিকদের প্রকৃত মজুরি কমে যাচ্ছে।

এতে বলা হয়, দেশের প্রায় সাড়ে সাত কোটি শ্রমিকের জন্য জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও রেশনিং চালুর দাবি বিগত সরকারের মত অন্তর্বর্তী সরকারও উপেক্ষা করেছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের বেশি, কলকারখানা বন্ধ হয়ে বেকাত্বের পাল্লা ভারী করে চললেও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিশ্বব্যাংক চলতি বছরে আরও ৩০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাওয়ার তথ্য তুলে ধরলেও বাজেটে এসব বিষয় মোকাবিলায় কোনো সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা নেই।

আরও পড়ুন

প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘অতীতের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার গতানুগতিক বাজেট’ আখ্যায়িত করে নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রচলিত রাষ্ট্রব্যবস্থায় সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালালদের স্বার্থরক্ষাকারী সরকারের বাজেট সবসময় জাতীয় ও জনস্বার্থবিরোধী। সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালালদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের নীতি নির্দেশে প্রণীত বাজেটে অর্থ উপদেষ্টা শুধু বাজেট পেশ করার দায়িত্বটুকুই পালন করেছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, এবারের বাজেটে সমসাময়িক বিশ্ব পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক মন্দা ও আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের কারণে বেপরোয়া বৃদ্ধি পাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যসহ শিক্ষা, চিকিৎসা, যাতায়াতসহ জীবন-জীবিকার সব ব্যয়।

নয়া উপনিবেশিক ও আধা সামন্ততান্ত্রিক বাংলাদেশে সব বাজেটেই কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ জাতীয় ও জনস্বার্থের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো শুধু উপেক্ষিতই হয় না, সাম্রাজ্যবাদী প্রভুর স্বার্থে লগ্নিপুঁজির সর্বোচ্চ মুনাফার হাতিয়ারে পরিণত হচ্ছে। সাম্রাজ্যবাদীদের বিশ্বযুদ্ধ প্রস্তুতির পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিরক্ষা খাতের গুরুত্ব বাজেটে দিন দিন বাড়ছে। সাম্রাজ্যবাদ-সামন্তবাদমুক্ত একটি জাতীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থায়ই শুধু জাতীয় ও জনস্বার্থকে গুরুত্ব দিয়ে বাজেট প্রণয়ন সম্ভব।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জাতীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা কায়েম ছাড়া শ্রমিক-কৃষক-জনগণের স্বার্থরক্ষাকারী বাজেটের প্রত্যাশা করা অলীক স্বপ্ন ছাড়া কিছুই নয়। তাই একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যকে সামনে রেখে জাতীয় ন্যূনতম মূল মজুরি ৩০ হাজার টাকা ঘোষণা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, সর্বস্তরে স্বল্পমূল্যে রেশনিং চালুসহ ১০ দফা দাবিতে দেশব্যাপী ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে।

এফএইচ/এমকেআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।