দেশের অষ্টম বিভাগীয় শহর ময়মনসিংহ। ২০১৫ সালের ১৩ অক্টোবর গেজেট প্রকাশের মধ্য দিয়ে ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর ও নেত্রকোনা জেলা নিয়ে যাত্রা শুরু হয় বিভাগের। এরপর থেকেই জনসংখ্যার চাপ আরও বাড়তে থাকে। চোখ ধাঁধানো উন্নয়নের বদলে বাড়তে থাকে নানা ভোগান্তি। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় যানজটের ভোগান্তি বছরজুড়ে থাকলেও বর্ষা মৌসুমে ভোগায় পানি। বেশিরভাগ এলাকায় জমে হাঁটুপানি। বাসাবাড়িতে পানি ওঠায় মানুষকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
এবারও বর্ষা মৌসুমে নগরবাসী ভোগান্তিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ, খালগুলো এখনো খননসহ পরিষ্কার করার কাজের কোনো ফলাফল নেই। অনেক এলাকায় ড্রেন নির্মাণকাজ বন্ধ। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে অনেক ঠিকাদার ড্রেন ও সড়ক নির্মাণকাজ অর্ধেক রেখে গা-ঢাকা দিয়েছেন। ফলে কিছু এলাকায় ঢিলেঢালাভাবে কাজ চললেও বেশিরভাগ কাজ বন্ধ রয়েছে।
আসন্ন বর্ষা মৌসুমে ড্রেনের নোংরা পানি খুঁড়ে রাখা সড়কে উঠবে। পাশাপাশি খুঁড়ে রাখা সড়কে জমবে পানি। সবমিলিয়ে নগরীতে জলাবদ্ধতার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন (মসিক) সূত্রে জানা যায়, সড়ক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য বিশেষ প্রকল্প হিসেবে ৮৬টি প্যাকেজে বরাদ্দ দেওয়া হয় এক হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা। গত বছরের ডিসেম্বরে প্রকল্পের মেয়াদকাল শেষ হলেও কাজ হয়েছে মাত্র ৪০ শতাংশ। সিটি করপোরেশনের ৭০ কিলোমিটারের মধ্যে ২৪ কিলোমিটার ড্রেন ও ৪৬ কিলোমিটার রাস্তার টেন্ডার বাতিল করা হয়েছে। ঠিকাদারের গা-ঢাকা ও রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে এ পর্যন্ত ১৪০ কোটি টাকার কাজ বাতিল করা হয়েছে।
জলাবদ্ধতা নিরসনে নগরীর বিভিন্ন খাল খনন ও পরিষ্কারে ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৫ লাখ ১৬ হাজার ৮৫০, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫৪ লাখ ৮৫ হাজার ৮৪০, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬০ লাখ ৩০ হাজার এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৬৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয় করেছে সিটি করপোরেশন। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে খাল খনন ও পরিষ্কার কাজ চলমান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ময়মনসিংহ নগরীর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত বিভিন্ন খালের মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৯ কিলোমিটার। সেহড়া, মাকড়জানি, কাটাখালী, বগামারী, গোহাইলকান্দি ও আকুয়া খাল দিয়ে নগরীর পুরোনো ৯টি ওয়ার্ডের পানি পাগারিয়া নদীতে নিষ্কাশিত হয়। বর্ষা মৌসুমেও এসব খাল হয়েই পানি নিষ্কাশন হয় নদীতে।
সরেজমিন দেখা যায়, জলাবদ্ধতা নিরসনের অংশ হিসেবে খনন করা হচ্ছে নগরীর আকুয়া খাল। কিন্তু খনন করা মাটি ফেলা হচ্ছে পাড়ে। এতে বর্ষা মৌসুমে সেই মাটি আবার মিশে যেতে পারে খালে। ফলে পানি চলাচল বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতে পারে।
স্থানীয়রা জানান, কেওয়াটখালীতে সড়ক ও ড্রেনের উন্নয়নকাজ বন্ধ রয়েছে। অসম্পূর্ণ রয়েছে গোহাইলকান্দি এলাকায় রাস্তার ও ড্রেনের কাজ। ভাটিকাশর, বলাশপুর ও নতুনবাজার রাস্তারও একই অবস্থা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আকুয়া খালের বেশিরভাগ অংশ ময়লা-আবর্জনায় ভরপুর। আসছে বর্ষার আগে খালটি পুরোপুরি পরিষ্কার করা না হলে ভোগান্তিতে পড়তে হবে বাসিন্দাদের।
বাড়েরা এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘অনেক এলাকায় রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। ফলে বর্ষার পানি ড্রেন দিয়ে খালে নামতে পারবে না। রাস্তায় পানি উঠে ভোগান্তি বাড়াবে। জনভোগান্তির বিষয়টি মাথায় রেখে বর্ষা মৌসুমের আগেই দ্রুত কাজ সম্পন্ন করা প্রয়োজন।’
আকুয়া এলাকার বাসিন্দা ফিরোজ আলম বলেন, ‘দায়সারাভাবে খাল পরিষ্কার করায় তা কোনো কাজে আসছে না। খননের মাটি পাশেই রাখা হচ্ছে। বর্ষায় এসব মাটি আবারও খালে পড়বে। এতে খননকাজ কোনো কাজেই আসবে না।’
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) মো. আজহারুল হক জাগো নিউজকে বলেন, বর্ষা মৌসুমকে সামনে রেখে গত বছরের ডিসেম্বর থেকে নগরীর বিভিন্ন খাল ও ড্রেন পরিষ্কারের অভিযান শুরু হয়। সিটি করপোরেশনের নিজস্ব তহবিল থেকে খাল খনন চলছে। সড়ক সংস্কার ও ড্রেন নির্মাণের বাতিল হওয়া টেন্ডারগুলো রিটেন্ডার করার জন্য কয়েকদিনের মধ্যে কাজ শুরু করা হবে।
সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুমনা আল মজীদ বলেন, এবার বর্ষায় যেন নগরীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হয়, সেজন্য আমাদের পরিকল্পনাসহ কাজ চলছে। তবে অনেক এলাকায় কাজ বন্ধ রয়েছে। খালগুলো পরিষ্কারের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশনের দিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তবে জলাবদ্ধতা থেকে রেহাই পেতে নগরবাসীকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ড্রেনে ডাবের খোসা, চিপসের প্যাকেট ও পলিথিন ফেলা যাবে না। এতে অনেক সময় ড্রেন দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে না পেরে পানি রাস্তায় উঠে পড়ে।
এসআর/এএসএম