বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে সপ্তম হোন কামরুল

0
2


কামরুল ইসলাম ৪৩তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সপ্তম হয়েছেন। তিনি নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। পারিবারিক টানাপোড়েনের কারণে জীবনে অনেক সংগ্রাম করেছেন। তিনি টাঙ্গাইলের পুলিশ লাইনস আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসান আদর্শ কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে অনার্স পাস করেন।

বর্তমানে তিনি সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কক্সবাজার জেলায় কর্মরত। তার বিসিএস যাত্রার গল্প ও নতুনদের পরামর্শ নিয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম

জাগো নিউজ: আপনার শৈশব ও বেড়ে ওঠা সম্পর্কে বলুন—
কামরুল ইসলাম: আমার জন্ম টাঙ্গাইল সদরের যমুনা নদীর তীরে। খুবই চমৎকার মিতালি ছিল যমুনার সাথে। দুরন্ত ডানপিটে ছিলাম শৈশবে। নদীতীরের একটি প্রাইমারি স্কুলে পড়তাম। ক্লাস টু পর্যন্ত মাত্র তিনটি করে বই ছিল। আর তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৬টি করে বই। মা সপ্তাহে প্রায়ই এক টাকা করে দিতেন। সেই টাকায় স্কুলে রঙিন আইসক্রিম খেয়ে জিহ্বা রঙিন বানাতাম। আমার এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না সেসময়। কুপির আগুনে পড়তে হতো। অনেক পরে বিদ্যুৎ পেয়েছি।

জাগো নিউজ: বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?
কামরুল ইসলাম: আমি শব্দটাকে ‘স্বপ্ন’ না বলে ‘সংসার’ বলতে চাই। স্বপ্ন শব্দটা শুনলে কেমন যেন দূরের অসম্ভব অধরা কিছু মনে হয়। বিসিএসের সাথে আমার দুষ্টু-মিষ্টি সংসার শুরু হয় ইঞ্জিনিয়ারিং পাসের দেড় বছর পরে। পাস করে বের হয়ে আমি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এজিএম হিসেবে চাকরি শুরু করি। চাকরির দেড় বছরের মাথায় এসে আমাকে চাকরি না-হয় বিসিএস যে কোনো একটা বেছে নেওয়ার অন্তিম পর্যায়ে এসে দাঁড়াতে হয়। আমি চাকরিতে রিজাইন দিয়ে অনিশ্চিত পথে হাঁটতে শুরু করি। এই সময়েই মূলত বিসিএসের সাথে সত্যিকারের পথচলা শুরু।

জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই, প্রস্তুতি কিভাবে নিয়েছেন?
কামরুল ইসলাম: বিসিএসের যাত্রা শুরু ২০২১ সালের শুরুতে। রুয়েটে পড়ার সময়ে আমার মনে হতো বিসিএস অনেক কঠিন পথ। আমাকে দিয়ে হবে না। তাই এই পথে হাঁটার দুঃসাহস করিনি। ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ক চাকরির প্রস্তুতি শুরু করি। সেসময় একটা চাকরিও পেয়ে যাই। এরপর কিছু ঘটনা ঘটেছে, যা আমাকে বিসিএসের পথে আসতে বাধ্য করেছে। প্রিলিমিনারির প্রস্তুতিতে বেসিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। নবম-দশম শ্রেণির বোর্ড বই বেশ কয়েকবার মন দিয়ে পড়েছিলাম। লিখিত প্রস্তুতি টানা ৬ মাস নিয়েছিলাম। তখন একদিনও বাদ দিইনি পড়াশোনা। শুনতে হাস্যকর লাগলেও এটা সত্য যে, ঈদের দিনও আমি এই রুটিন থেকে বের হইনি। লিখিত এক্সামে আমার অ্যাপ্রোচ ছিল আমি অল্প লিখবো, কিন্ত সবার থেকে ব্যতিক্রম লিখব। আইডিয়াটা পেয়েছিলাম শ্রদ্ধেয় আকবর আলী খান স্যারের একটা বই পড়ার সময়। আলহামদুলিল্লাহ সবশেষে বিসিএসকে জয় করতে পেরেছি।

আরও পড়ুন

জাগো নিউজ: ৪৩তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডার পেয়েছেন, অনুভূতি কেমন?
কামরুল ইসলাম: অনুভূতি প্রকাশ করার জন্য আলাদা ভাষা থাকা উচিত বলে মনে হয় না। যতটুকু খুশি হলে কারো চোখের দুই কোণে একফোটা অশ্রু জমবে, চারিপাশ ঝাপসা মনে হবে। ঠিক ততটুকু আনন্দ আচ্ছন্ন করেছিল আমাকে। তখন মনে হচ্ছিল সময় থমকে গেছে, পরক্ষণেই আবার দ্রুত সময় চলে যাচ্ছিল।

জাগো নিউজ: আড়াল থেকে কেউ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন?
কামরুল ইসলাম: তেমন কাউকে পাশে পাইনি। তবে আমার বড় ভাই আমাকে কঠিন সময়গুলোতে খুবই সাপোর্ট করেছেন।

জাগো নিউজ: নতুনরা বিসিএসের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?
কামরুল ইসলাম: নতুনদের উদ্দেশ্যে পছন্দের একজন স্যারের একটি কথা বলতে ইচ্ছে করছে, ‘Never fall in the trap of Comfortness’। যা পড়বেন বুঝে পড়বেন, পড়তে ইচ্ছে না করলে জোর করে পড়বেন না। মনে রাখতে হবে, ‘Learning is a very uncomfortable process’। ডিসিপ্লিন মানুষকে মুক্ত করে, আর ইনডিসিপ্লিনড লাইফ মানুষকে শেকলবন্দি করে। জীবনকে একটা শৃঙ্খলের মধ্যে আনুন। বিসিএস নামক ট্রেন জার্নিতে কখনো ট্রেন দ্রুত চলবে, কখনো ক্রসিংয়ে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হবে। ধৈর্যহারা হওয়া যাবে না। শুধু ট্রেনে বসে থাকতে হবে আত্মবিশ্বাস নিয়ে। ইনশাআল্লাহ ট্রেনই একদিন আপনাকে গন্তব্যে নিয়ে যাবে।

জাগো নিউজ: এই পেশায় থেকে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
কামরুল ইসলাম: আসলে ভবিষ্যৎ নিয়ে তেমন কোনো পরিকল্পনা নেই। শুধু স্বপ্ন দেখি আজ থেকে বিশ-পঁচিশ বছর পর আমার মেয়ে মুক্ত বাতাসে ফড়িংয়ের মতো উড়ে বেড়াতে পারবে। যেখানে থাকবে না কোনো ধর্ষণ কিংবা নিরাপত্তার ভয়। সেই স্বপ্নের দেশ গড়তে অংশীদার হতে চাই।

এসইউ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।