কর্মকৌশল ঠিক করতে আজ বসছেন আর্থিকখাত সংশ্লিষ্টরা

0
2


বাংলাদেশের জন্য অনুমোদন করা ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের পরবর্তী কিস্তি ছাড়ের আগে আগামী ডিসেম্বরে ঢাকা সফরে আসবে আইএমএফ মিশন। এই মিশন সামনে রেখে সংস্থাটির শর্ত পূরণের কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা আজ(১৮ নভেম্বর) অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন।

এতে গুরুত্ব পাচ্ছে কর জিডিপি, আইএমএফের শর্ত প্রতিপালন রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা, অটোমেশন সহ নানা বিষয়। এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এনবিআর কর্মকর্তারা জানান, কর জিডিপি বাড়ানোর কৌশল ও রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি আইএমএফকে অবহিত করবে তারা। এসব বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা ঠিক হবে আজ। আইএমএফের ঋণের শর্তের আলোকে আয়কর, শুল্ক ও ভ্যাট খাতে কীভাবে বিশাল অঙ্কের রাজস্ব আদায় করা হবে, তার রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, এনবিআরের চেয়ারম্যান, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ বিভাগ ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের মনোনীত কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত থেকে প্রস্তাবিত কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করবেন।

বাংলাদেশকে দেওয়া ঋণের শর্ত পূরণে বেশ পিছিয়ে এনবিআর। গত ৫ আগস্ট সরকারের পালাবদলের পর গত ২৪ সেপ্টেম্বর আইএমএফ ও এনবিআরের বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দশমিক ৫ শতাংশ কর বাড়ানোর শর্ত কেন এনবিআর পূরণ করতে পারেনি সে বিষয়ে জানতে চায় আইএমএফ। পাশাপাশি কর অব্যাহতির সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা, রেমিট্যান্সে কর বসানো, সরকারি ও বেসরকারি চাকরিজীবীদের একই রকম কর কাঠামোতে নিয়ে আসা, বিভিন্ন ফান্ডে বিনিয়োগের বিপরীতে কর ছাড় কমানো, করপোরেট রিটার্ন দাখিল অটোমেশনে নিয়ে আসা, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি রাজস্ব কৌশল প্রণয়ন করতে এনবিআরকে পরামর্শ দেয় আইএমএফ।

জানা গেছে, অর্থবছরের বাকি সময়ে যেভাবে আইএমএফের শর্ত পূরণ করা হবে, তার একটি কর্মপরিকল্পনা সাজিয়েছে এনবিআর। যা বুধবারের বৈঠকে ঠিক করা হবে।

আইএমএফের শর্ত মেনেই এনবিআর চলতি অর্থবছরের বাজেটে বেশি শুল্ক কর বসিয়েছে। এর ফলে কর-জিডিপি অনুপাত শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ বাড়বে বলে ধারণা করছে এনবিআর। অন্যদিকে কর জিডিপি ও কর জাল বাড়াতে এবার আয়কর রিটার্ন ও আয়কর রেজিস্ট্রেশন অনলাইনে করার দিকে জোড় দিয়েছে এনবিআর।

আরও পড়ুন>>>

এবার ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দেশের সব তফশিলি ব্যাংক, মোবাইল ফোন অপারেটর এবং বেশ কিছু বহুজাতিক কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের ই-রিটার্ন জমার সময় সহায়ক কোনো নথি বা কাগজপত্র আপলোড করার বাধ্যবাধকতা দূর করা হয়েছে। ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস এর (এমএফএস অ্যাকাউন্ট) মাধ্যমে কর পরিশোধের ফি কমানো হয়েছে।

সূত্র জানায় এনবিআরের পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৭২ হাজার ৯০০ কোটি টাকা এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরের তা ৫ লাখ ৬৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা। অথচ বর্তমানে দেশের কর-জিডিপি অনুপাত ৭ দশমিক ৬০ শতাংশ। আইএমএফ চায় এটাকে বাড়িয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৮ দশমিক ৬০ শতাংশ ও ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৯ দশমিক ১০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। জুলাই আগস্ট ও তার পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এ লক্ষ্য এনবিআরের জন্য চ্যালেঞ্জের। তা সত্ত্বেও সংস্থাটি কিছু কৌশল ঠিক করেছে। এসব কৌশল বাস্তবায়ন করা গেলে আইএমএফের শর্তমতো কর-জিডিপি অনুপাত বাড়বে বলে মনে করছেন এনবিআর কর্মকর্তারা। এসব কৌশলের মধ্যে রয়েছে অটোমেশন, এনবিআরকে পেপারলেস করা, সেবা দাতার ভোগান্তি কমানো, দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় আনা ও কর ফাঁকিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।

আরও জানা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে রাজস্ব ঘাটতি। এই বাস্তবতায় রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য পূরণ করাটা কঠিন বলে মনে করছেন এনবিআরের কর্মকর্তারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, বিগত সরকার রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছে তা অনেকটাই অমূলক। কেননা ভঙ্গুর অর্থনীতিতে এত বড় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা চ্যালেঞ্জের।

চলতি অর্থবছরে এনবিআরের জন্য সব মিলিয়ে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার শুল্ক ও কর অর্থাৎ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।

বুধবারের বৈঠকের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. জিয়াউল আবেদীন বলেন, আইএমএফের লক্ষ্য পূরণে কোন সংস্থা কতদূর এগিয়েছে তার একটা পর্যালোচনা হবে। আমাদের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তাদের জানাবো।

আইএমএফের লক্ষ্য পূরণ হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের বেশিরভাগ লক্ষ্যই এরই মধ্যে পূরণ হয়েছে। আইএমএফের লক্ষ্য নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না।

জানা গেছে, ২০২৬ সাল পর্যন্ত মোট ৭কিস্তিতে অনুমোদিত আইএমএফের ঋণ ছাড়ে এনবিআর, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন দপ্তরের জন্য শর্ত রয়েছে ৩৮টি। এসব শর্ত ও সংস্কার প্রস্তাবের একটি দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলে ঋণ ছাড় পিছিয়ে যেতে পারে। তাই পরবর্তী কিস্তি ছাড়ের আগে শর্ত মানার ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

এসএম/এসআইটি/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।