গরু চোর সন্দেহে প্রতিবন্ধীর হাত-পায়ের নখ প্লাস দিয়ে তুলে নির্যাতন

0
3


বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি:

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে গরু চুরির অপবাদ দিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে এক শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীকে। প্লাস দিয়ে দাঁত ও পায়ের আঙুলের নখ তুলে নেয়া ছাড়াও শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়েছে জসিম মোল্লা (২৫) নামের ওই প্রতিবন্ধীকে।

তিনি বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচার দাবি করেছেন গ্রামবাসী। গত রোববার এ ঘটনায় প্রতিবন্ধীর ভাই নিজাম মোল্যা বাদী হয়ে ফরিদপুর ৭ নম্বর আমলি আদালতে ১১ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেছেন।

প্রতিবন্ধী জসিমকে নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শান্তির দাবিতে গত সোমবার (১ আগস্ট) সন্ধ্যায় পৌরসদরের তালতলা বাজারে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে এলাকাবাসী। জসিম মোল্যা বোয়ালমারী উপজেলার গুনবহা ইউনিয়নের নয়ানিপাড়া গ্রামের মৃত মো. শুকুর মোল্লার ছেলে। তিনি সরকারের ভাতাপ্রাপ্ত একজন বাক প্রতিবন্ধী।

জসিমের বড় ভাই নিজাম মোল্যা জানান, গত ২৩ জুলাই হতে তার ভাই জসিম নিখোঁজ ছিলেন। তারা জসিমের সন্ধান চেয়ে মাইকিংসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও প্রচারণা চালাই। পরে গত ২৭ জুলাই গভীর রাতে কমলেশ্বরদি গ্রাম দিয়ে আসার পথে গ্রামবাসী জসিমকে আটকায়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে সন্তোষজনক উত্তর দিতে না পারায় জসিমের ওপর নির্যাতন চালিয়ে গুরুতর আহত করে। গরু চোর হিসেবে তারা জসিমকে পিটিয়ে সারা শরীর থেঁতলে দেয় এবং প্লাস দিয়ে দাঁত ও পায়ের নখ তুলে নেয়।

মামলার আসামিরা হলেন, উপজেলার দাদপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জাফর মোল্যা, শারবানদিয়া গ্রামের আনোয়ার হোসেন, আওলাদ ফকির, জালাল মল্লিক, শামিম হক, জিতিস মাহাতুর, বাশার মোল্যা, বাচ্চু, সাহেব মল্লিক, আব্দুর রহমান ও মনিরুল ইসলাম।

দাদপুর ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জাফর মোল্যা জানান, সম্প্রতি দাদপুর ইউনিয়নে ৮-১০টি গরু চুরি হয়েছে। গত ২৭ জুলাই রাতে জানতে পারি কমলেশ্বরদি মাহাতো পাড়ার বাসিন্দা খগেন মাহাতোর রাত ১টার দিকে গরু চুরি হয়েছে। এ নিয়ে রাতেই মাইকিং করে এলাকাবাসী। রাত ৪টার দিকে গরুসহ জসিমকে এলাকাবাসী আটক করে মারধর করে। খবর পেয়ে বুধবার সকালে বিষয়টি চেয়ারম্যানকে জানাই। চেয়ারম্যান দ্রুত পুলিশকে ফোন দিয়ে জসিমকে উদ্ধার করে আইনের হাতে দিতে বলেন। জয়নগর ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই সুব্রত ঘটনাস্থলে এসে জসিম ও উদ্ধারকৃত গরু থানায় নিয়ে যায়। জসিম যে প্রতিবন্ধী বিষয়টি কেউ প্রথমে বুঝতে পারেনি।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীনের বিষয়টি নিশ্চিত করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. খালেদুর রহমান বলেন, জসিমের একটি দাঁত ও পায়ের আঙ্গুলের নখ উঠানো দেখা গেছে। এছাড়া তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। হাসপাতালের ৪ তলার ১০ নম্বর বেডে তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে জসিম একটু সুস্থ হয়েছে।

বুধবার (৩ আগস্ট) দুপুরে ফরিদপুর পিবিআইয়ের পরিদর্শক মো. সালাউদ্দিন জানান, প্রতিবন্ধীর বিষয়টি নিয়ে আদালতের নির্দেশনা এখনো আমরা হাতে পাইনি। নির্দেশনা পাওয়ার পর তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বোয়ালমারী থানার ওসি মুহাম্মদ আব্দুল ওহাব বলেন, খবর পেয়ে ওই রাতে পুলিশ আহত অবস্থায় প্রতিবন্ধী জসিমকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। তার বিরুদ্ধে গরু চুরির একটি অভিযোগ থানায় দেয়া হয়। কিন্তু আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারি জসিম প্রকৃতই শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী। তাই বাদী তার অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেন। ঘটনার দিন ওই এলাকার লোকজন থানায় এসে বলেছিল চুরি হওয়া গরুসহ জসিমকে মাঠে পাটক্ষেত থেকে ধরা হয়েছে। তবে সে যে প্রতিবন্ধী তা এলাকাবাসী বুঝতে পারেনি।
আরও পড়ুন: বেশি দামে সার বিক্রির অভিযোগে চুয়াডাঙ্গায় দুই ব্যবসায়ীকে লাখ টাকা জরিমানা
ইউএইচ/