অপরাধ জগতের আধিপত্যের লড়াই, রাজনৈতিক বিরোধ নাকি বিদ্বেষ? উত্তর প্রদেশের সাবেক এমপি আতিক আহমেদের হত্যাকাণ্ড ঘিরে চলছে নানা চর্চা। কারণ যেটাই হোক, গণমাধ্যম আর পুলিশের সামনে এমন হামলায় প্রশ্নবিদ্ধ আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি। ১৪৪ ধারা জারি করে রাখলেও সমালোচনায় বিদ্ধ যোগী আদিত্যনাথের সরকার। খবর এনডিটিভির।
হত্যাকাণ্ড এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য আমৃত্যু কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছিলেন উত্তর প্রদেশের সাবেক এমপি আতিক আহমেদ। শনিবার (১৫ এপ্রিল) রাতের তাকে পুলিশ হেফাজতে মেডিকেল পরীক্ষার জন্য কারাগার থেকে হাসপাতালে নেয়া হচ্ছিলো। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিকরাও, টেলিভিশনে চলছিল লাইভ সম্প্রচার। এ সময় ভিড়ের মধ্যে থেকেই আতিকে ঠিক মাথায় বন্দুক ধরে গুলি করে কাকে হত্যা করা হয়। নিহত হন তার ভাই তার ভাই আশরাফ আহমেদও। এ ঘটনার পরই রীতিমতো শোরগোল পড়ে গেছে ভারতজুড়ে।
জানা গেছে, মাফিয়া ডন থেকে উত্তর প্রদেশের রাজনীতিক হয়ে ওঠা এই আতিক আহমেদকে ২২ সেকেন্ডেই গুলিতে ঝাঁঝড়া করে দেয় হামলাকারীরা। ময়নাতদন্তে তার শরীরে মিলেছে ৮টি বুলেট। অন্যদিকে ভাই আশরাফকে ৫টি বুলেট ছোড়া হয়। ঘটনাটি নিয়ে সরব স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতিকরা। তারা বলছেন, নিঃসন্দেহে আতিক একজন বির্তকিত মানুষ। কিন্তু সেটির অজুহাতে হত্যাকাণ্ডকে জায়েজ করার সুযোগ নেই বলেও মত তাদের।
বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে সমাজবাদী পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি রাম গোপাল যাদব বলেন, মুখ্যমন্ত্রী হুমকি দিয়েছিলেন, সন্ত্রাসীদের ধুলোয় মিশিয়ে দেয়া হবে। পুলিশি হেফাজতে তাকে হত্যা করা হতে পারে বলে সুপ্রিম কোর্টে নিজেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন আতিক আহমেদ। নিরাপত্তা বাড়ানোরও দাবি করেছিলেন তিনি। কিন্তু ঠিক সেভাবেই হত্যার শিকার হতে হলো তাকে। রাম গোপাল যাদবের প্রশ্ন, কখনও দেখেছেন, একজন আসামিকে রাত ১০টায় মেডিকেল পরীক্ষার জন্য নেয়া হচ্ছে? এটা ঠান্ডা মাথায় খুন।
তবে সব চর্চার ঊর্ধ্বে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতার ইস্যুটি নিয়েই চলছে তোলপাড়। প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে, যোগী আদিত্যনাথের শাসন ব্যবস্থাকেও।
সমাজবাদী পার্টির রাজ্য সভার এমপি কপিল সিপাল বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর কিছু মহল উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছে যে, একজন সন্ত্রাসী কমলো। কিন্তু অপরাধীকে সর্বসম্মুখে হত্যাও কী ন্যায়সঙ্গত? তার অর্থ কী দাঁড়াচ্ছে? চাইলেই, যে কেউ ভারতের রাস্তায় অপরাধ করতে পারে!
বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেসও। দলটির এমপি মহুয়া মৈত্র্য বলছেন, যোগী আদিত্যনাথের আরেকটি নাম হলো ‘মিস্টার ঠোক দো’। এর মানেটা সবার কাছেই স্পষ্ট। তার শাসনামলে যে পরিমাণ এনকাউন্টার, হত্যা-গুমখুন হয়েছে, অতীতে কখনোই উত্তর প্রদেশ এমনটা ছিল না। তিনি জঙ্গলরাজ চালাচ্ছেন, একনায়কের ভিন্নরূপ।
রাজ্যে ক্ষমতাসীনদের দাবি, আতিক আহমেদের বয়ানে ফাঁস হয়ে যাচ্ছিলো বিরোধীদের গোপন তথ্য। সে কারণেই কৌশলে তাকে দৃশ্যপট থেকে সরানো হলো। বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং জানান, টিভি বির্তকেই উঠে এসেছে যে, আতিক আহমেদ সমাজবাদী পার্টির গোপন তথ্য দিতে যাচ্ছিলেন পুলিশকে। সে কারণেই এমন করুণ পরিণতি ভোগ করতে হলো তাকে। সবাই নিজ-নিজ মতাদর্শ দিয়ে ঘটনার বিচার করছেন। তদন্তের পরই সব স্পষ্ট হবে। কিছুদিন আগেই তো উড়িষ্যায় বিজেপি এমপিকে হত্যা করা হলো। সেসময় কোথায় ছিল, আইনের শাসন আর নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন?
মূলত, অপরাধ জগতে ব্যাপক প্রভাব থাকলেও ১৯৮৯ সাল থেকে উত্তর প্রদেশের বিধানসভায় পাঁচবার নির্বাচিত হন ষাটোর্ধ্ব আতিক আহমেদ। লোকসভার এমপিও ছিলেন তিনি। পুলিশি হেফাজতে তার জানাজা-দাফন হলেও, সাধারণ মানুষের ঢল ছিল চোখে পড়ার মতো।
এসজেড/