রিপোর্টার মোঃ আলফু আহমেদ
হবিগঞ্জ সদর।
Dr. Opurbo Chowdhury
London, England
“REMDESIVIR IS AN INVESTIGATIONAL PRODUCT AND HAS NOT BEEN APPROVED ANYWHERE GLOBALLY. THE SAFETY AND EFFICACY OF REMDESIVIR FOR ANY USE HAVE NOT BEEN DETERMINED.”
“REMDESIVIR একটি আন্তর্জাতিক পণ্য এবং এটি বিশ্বব্যাপী কোনওভাবে এখনো অনুমোদিত হয় নি। যে কোনও ব্যবহারের জন্য REMDESIVIR সুরক্ষা এবং কার্যকরতা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি”
ইংরেজি ক্যাপিটাল লেটারে লাল রঙে সতর্কতার সাথে উপরের কথাগুলো লেখা আছে Gilead নামক আমেরিকান একটি ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের ওয়েবপেইজে । তাদের তৈরী করা একটি মেডিসিন Remdesivir নিয়ে প্রিন্ট মিডিয়া থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই কথা বলছে এখন । কেন এটি নিয়ে কেউ কেউ এতো লিখছে, কি কি লিখছে এবং আসল তথ্যগুলো কি কি, এ নিয়ে লিখবো এখন ।
গত চার মাসে নতুন করোনা ভাইরাসে বিশ্বব্যাপী মিলিয়ন মানুষ আক্রান্ত হওয়ার পর ডাক্তার, বিজ্ঞানী, ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান, সরকারগুলো, কেউ বসে নেই । ড্র্যাগ, ভ্যাকসিন, প্লাজমা থেরাপি, কতভাবেই চিকিৎসকরা চেষ্টা করছে এই ভাইরাসটি দমাতে । Remdesivir নিয়ে খুব বেশি কথা হচ্ছে । এর কারণ, ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার অনুগত মেডিক্যাল পরামর্শক টিম এই মেডিসিন নিয়ে প্রেস কনফারেন্স করেছে অনেক কথা বলছে । তারপর থেকে মিডিয়াতে আরো বেশি বলা বেড়ে গেছে ।
মে’র শুরুতে বিবিসির নিউজ হলো :
_________________________
“The US’s Food and Drug Administration (FDA) has authorised emergency use of the Ebola drug remdesivir for treating the coronavirus. A recent clinical trial showed the drug helped shorten the recovery time for people who were seriously ill. However, it did not significantly improve survival rates.”
“মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) করোনভাইরাস চিকিৎসার জন্য ইবোলা ওষুধ Remdesivir জরুরি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। সাম্প্রতিক একটি ক্লিনিকাল পরীক্ষায় দেখা গেছে যে – এই ওষুধ গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তিদের পুনরুদ্ধারের সময়কে হ্রাস করতে সহায়তা করেছে। তবে এটি বেঁচে থাকার হার উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াতে পারেনি।”
সহজ করে বললে, ওষুধটি আমেরিকান কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিতে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া গুরুতর অসুস্থ্য করোনা ভাইরাসের রোগীকে দেয়া যাবে, তবে এটি শুধুমাত্র সুস্থ হওয়া কিছুটা তাড়াতাড়ি করেছে কারো কারো, কিন্তু মৃত্যু থামাতে পারে না । অর্থাৎ, যার শরীর এমনিতেই প্রতিরোধ গড়ে তুলে বেঁচে থাকতে সক্ষম, তার দেহে প্রয়োগ করলে তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে পারে শুধু । এর চেয়ে বেশি কিছু নয় । তাহলে এতো হৈচৈ কেন এটা নিয়ে ।
Remdesivir একটি আন্টিভাইরাল মেডিসিন । মানে – যা ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করে । ওষুদের ভাষায় এটার কোড নেইম : GS-5734 । উচ্চারণ : রেমডেসিভিয়া ।
এই ওষুধটি তৈরী করেন Gilead Science Inc. নামের আমেরিকান একটি গবেষণা এবং ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান । এটার গবেষণাগার ক্যালিফোর্নিয়ায় । গঠিত হয়েছিল ১৯৮৭ সালে । এটি মূলত আন্টি ভাইরাল মেডিসিন তৈরী করে বেশি । তারই অংশ হিসাবে ২০০৯ সালে Hepataitis C Virus এবং Respiratory Syncytial Virus নামের দুটো ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে এমন কেমিক্যাল হিসাবে প্রথম Remdesivir তৈরী করা হয়।
২০১৪ সালে পশ্চিম আফ্রিকায় ইবোলা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেলে ইবোলা আক্রান্ত রোগীদের উপর ওষুধটি ব্যবহার করার উদ্যোগ নেন । কারণ হলো, পরীক্ষাগারে তারা দেখেছিলো ওষুধটির একটি রাসায়নিক উপাদান ইবোলা ভাইরাসের সংখ্যা বৃদ্ধি থামিয়ে দিতে পারে । ২০১৫ থেকে ২০১৮ US Army Medical Institution এর সাথে যৌথভাবে কঙ্গোতে ইবোলা আক্রান্তদের উপর দুই পর্বের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করেন তারা । কিন্তু সে যাত্রা তেমন সফল হয় নি । শেষে USA আর্মি (USAMRIID) এবং সহযোগী NIH দুটো প্রতিষ্ঠানই Gilead এর সাথে. Remdesivir নিয়ে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল বন্ধ করে দেয় । এবং এটি কোনোভাবেই ইবোলা ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করার উদ্দেশ্যে তৈরী করা হয় নি প্রথমে ।
এটার মূল কাজটি ছিল যেকোনো ধরনের RNA ভাইরাসের বিরুদ্ধে যেন কাজ করে । নতুন করোনা ভাইরাসও একটি RNA জাতের ভাইরাস, কারণ ভাইরাসের ভিতর শুধু RNA থাকে ।
ইবোলা নিয়ে কাজের পাশাপাশি ২০১৭ সালের দিকে অন্য দুটো করোনা ভাইরাস SARS এবং MERS নিয়েও তারা কাজ করে । University of North Carolina এবং Vanderbilt University এর সাথে যৌথভাবে শুধুমাত্র ল্যাবের মডেলের উপর প্রি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল দিয়ে দেখেন এই ওষুধটির । কিন্তু দুই বছর পর সেই গবেষণায় বিশেষ কোনো সফলতা না পেয়ে বন্ধ করে দেয় ।
জানুয়ারিতে নতুন করোনা ভাইরাসে COVID-19 এ আক্রান্তের হার বেড়ে যেতে থাকলে চীনের গবেষকরা Gilead কে অনুরোধ করেন চায়নাতে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের । ফেব্রুয়ারি এবং মার্চে China-Japan Friendship Hospital এ খুব দ্রুত দুটো ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালায় তারা ওষুধটির, যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে খুব দ্রুত এবং রিস্কি । মার্চের শেষের দিকে WHO এর global Solidarity trial, ইউরোপিয়ান কমিশনের INSERM, এবং আমেরিকান National Institute of Allergy and Infectious Diseases (NIAID)এর সাথে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পর্ব ৩ শুরু করেন । এই NIAID এর প্রধান হলেন ট্রাম্পের মাইক Anthony Stephen Fauci ।
তাদের পরীক্ষা নিয়ে বলার আগে মনে করিয়ে দিচ্ছি – কেন আমেরিকা এই মেডিসিন নিয়ে এতো হৈচৈ করছে । মেরিল্যান্ডে অবস্থিতি FAuci এর এই প্রতিষ্ঠানটি Gilead এর সাথে যৌথ স্বার্থে কাজ করছে Remdesivir নিয়ে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের থার্ড পর্বে । মেডিসিনের ইতিহাসে কখনো কোনো মেডিসিনের ট্রায়াল এতো দ্রুত শেষ হয় নি, কোনো মেডিসিনের ট্রায়াল শেষ হয়ে আরো কিছু স্টেজ রিভিউ এবং ফাইনাল পাবলিকেশনের আগে কখনো FDA নয় শুধু, পৃথিবীর কোনো দেশেই অনুমোদন দেয়া হয় না । ওষুধটি নিয়ে ওষুধ কোম্পানি কোনো ঘোষণা দেয় নি, কিন্তু ট্রাম্প এবং ফাউচি মিলে যৌথ কনফারেন্স করেছে ওষুধটি নিয়ে