কক্সবাজারে ২০১৭ সালে উদ্ধার করা প্রায় ১০ লাখ পিস ইয়াবা বিক্রি করে দেয়া হয়েছিল। পুলিশ সদর দফতরের তদন্তেও প্রমাণিত হয়েছিল ঘটনাটি। অভিযোগ ছিল, তখনকার এসপি ডক্টর একেএম ইকবাল হোসেন, ৯ কর্মকর্তা এবং তিন কনস্টেবলের বিরুদ্ধে। কঠোর বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয় প্রায় সবার বিরুদ্ধে। তবে প্রধান অভিযুক্ত একেএম ইকবালকে নামমাত্র শাস্তি হিসেবে তিরস্কার করা হয়। সম্প্রতি তিনি পদোন্নতি পেয়ে অতিরিক্ত ডিআইজি হয়েছেন। মাদকের বিক্রির মত অভিযোগের পরও পদোন্নতিতে বিস্মিত অপরাধ বিশ্লেষকরা। এ ঘটনায় হাইকোর্টে রিটকারীও দাবি করছেন ন্যায়বিচার।
পুলিশ সদর দফতরের তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৭ সালে কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে ১০ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। কিন্তু জব্দ তালিকায় দেখানো হয় মাত্র ১০ হাজার। তাহলে বাকি ৯ লাখ ৯০ হাজার পিস ইয়াবা গেলো কোথায়? প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বিক্রি করা হয়েছে এই ৯ লাখ ৯০ হাজার পিস ইয়াবা। যার আনুমানিক দাম ১০ কোটি টাকা।
তৎকালীন কক্সবাজার ডিবির এসআই বসির আহমেদ বলেন, অভিযোগ করতে গিয়ে আমি অনেক হয়রানির শিকার হয়েছি। পেশাগত দায়িত্বপালন করতে গিয়ে বিভাগীয় মামলার সম্মুখীন হতে হয়েছে, কেন আমি অভিযোগ দিলাম। তখন আমি বাধ্য হয়ে স্বেচ্ছায় অবসরে চলে আসছি।
গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তা যে বসির আহমেদকে টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করার চেষ্টা হয়েছিল, সেই বসিরই ঘটনাটি পুলিশ সদর দফতরকে জানান। এ নিয়ে খবর প্রকাশিত হয় জাতীয় গণমাধ্যমে। পুলিশ প্রশাসন তদন্তে নেমে চাঞ্চল্যকর তথ্য পায়। বলা হয়, তখনকার এসপি ডক্টর একেএম ইকবাল হোসেন ও ৯ কর্মকর্তা এবং তিন কনস্টেবল এতে জড়িত ছিলেন।
তদন্তে প্রমাণ পাওয়া সবার বিরুদ্ধেই দায়ের হয় বিভাগীয় মামলা। শাস্তিও পান কনস্টেবল-এসআইসহ ৯ জন। তাদের সবার পদাবনতি হয়। দুই অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ তিন কর্মকর্তাকে তিরস্কার করা হয় শাস্তি হিসেবে। কিন্তু এসপি ইকবাল থেকে যান ধরা ছোঁয়ার বাইরেই। পদোন্নতি পেয়ে তিনি এখন অতিরিক্ত ডিআইজি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ কল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট শিক্ষক তৌহিদুল হক বলেন, পুলিশ তাদের বিভিন্ন দিবস উৎযাপন উপলক্ষে যে প্রতিপাদ্য বলার চেষ্টা করছে বা বলছে অপরাধীর ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স থাকবে, কিন্তু মামলার যে চিত্রপট তার সাথে আমরা মিল খুঁজে পাই না। মামলায় সমান অভিযুক্ত থেকেও যদি কেউ শক্তি প্রয়োগ করে পার পেয়ে যায় এবং পার পেয়ে গিয়েছে আমরাতো সেটাই দেখছি। অভিযুক্তকে পরবর্তীতে পদন্নোতিও দেয়া হয়েছে, এই জায়গাটাতেই আমাদের প্রশ্ন।
ইয়াবা বিক্রির মত অপরাধের বিষয়টিতে ফৌজদারি মামলার মাধ্যমে কেন ব্যবস্থা নেয়া হবে না, সেবিষয়ে রিট দায়ের হয় হাইকোর্টে। ব্যবস্থা নিতে রুলও জারি করেন উচ্চ আদালত।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বলেন, এই রিটটা করার উদ্দেশ্যই হচ্ছে যেখানে প্রধানমন্ত্রী মাদকের বিরুদ্ধে জিরোটলারেন্স ঘোষণা করেছেন, সেখানে যদি পুলিশের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিই রক্ষক হয়ে ভক্ষক হয় এই জন্যেই পাবলিক জনস্বার্থে আমি এই রিটটি করেছি।
ইয়াবা বিক্রির মতো ঘটনায় অভিযুক্ত কর্মকর্তা কীভাবে অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতি পেলেন সে প্রশ্নের জবাব পাওয়া যায়নি পুলিশ সদর দফতর থেকে।
ইউএইচ/