আল কায়েদা প্রধান আইমান আল জাওয়াহিরি মার্কিন অভিযানে নিহত হয়েছেন। সোমবার (২ আগস্ট) এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে প্রাথমিক জীবনে পেশায় একজন শল্য চিকিৎসক ছিলেন জাওয়াহিরি। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে তার নাম ওঠে বিশ্বের শীর্ষ জঙ্গির তালিকায়। আল কায়দার প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক হিসেবেও কাজ করেছেন জাওয়াহিরি। খবর ফ্রান্স ২৪ ও রয়টার্সের।
১৯৫১ সালে মিশরের রাজধানী কায়রোয় জন্মগ্রহণ করেন জওয়াহিরির। তার দাদা ছিলেন ইসলাম ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ মসজিদ আল আজহারের প্রধান ইমাম। ১৫ বছর বয়সে ইসলামে মৌলবাদ গ্রহণ করেন জাওয়াহিরি। কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অব মেডিসিনে পড়াশোনা করেছিলেন তিনি। ১৯৭৪ সালে স্নাতক হন মেধাবী জাওয়াহিরি।
মিশরের সেনাবাহিনীতে শল্য চিকিৎসক হিসাবে তিন বছর কাজ করেছিলেন জওয়াহিরি। পরে মাদি এলাকায় নিজের ক্লিনিক খোলেন তিনি। ১৯৭৮ সালে শল্য চিকিৎসায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। তরুণ বয়সে অন্য সাধারণ তরুণদের মতোই প্রাণবন্ত ছিলেন জওয়াহিরি। সে সময় তিনি সিনেমা দেখতেন, গান শুনতেন, বন্ধুদের সঙ্গে প্রাণখুলে আড্ডাও দিতেন তিনি।
‘জঙ্গি’ জাওয়াহিরির নাম ১৯৮১ সালে প্রথম শোনে বিশ্ব। জওয়াহিরির ছদ্মনাম ছিল ‘ডাক্তার’। সে সময় মিশরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার আল-সাদাতের হত্যা পরবর্তী ঘটনায় যাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে ছিলেন জওয়াহিরি। তার আইনজীবীর দাবি ছিল, সেই সময়ে জেলে জওয়াহিরির উপর নির্মম অত্যাচার চালানো হয়। এরপর থেকেই একের পর এক হামলার ঘটনায় নাম জড়ায় জাওয়াহিরির। বেআইনিভাবে অস্ত্র রাখার অভিযোগে তিন বছর জেলও হয় তার।
এরপর জেল থেকে মুক্তি পেয়ে পাকিস্তানে যান জাওয়াহিরি। পাকিস্তানে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে যুদ্ধরত জখম ইসলামি মুজাহিদিন গেরিলাদের চিকিৎসার জন্য ‘রেড ক্রিসেন্টে’র সঙ্গে কাজ করেছিলেন জওয়াহিরি। ১৯৮৫ সালে হজ করতে সৌদি আরবে যান তিনি। পরের বছর জেদ্দায় ওসামা বিন লাদেনের সাথে তার পরিচয় হয়। পরবর্তীতে লাদেনের ব্যক্তিগত উপদেষ্টা ও চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন জাওয়াহিরি। মুসলিম ব্রাদারগুড সংগঠনের মাধ্যমে আল কায়দায় যোগ দেন তিনি।
১৯৯৩ সালে মিশরে ইসলামিক জিহাদের নেতৃত্বের দায়িত্ব নেন জওয়াহিরি। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে মিশর সরকারের পতন ঘটিয়ে ইসলামিক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করার পেছনে তার বড় ভূমিকা ছিল। ১৯৯৫ সালের জুন মাসে প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারকে হত্যার চেষ্টা করা তারই নেতৃত্বে। তারপরই আল কায়দার সদস্যদের ধরপাকড় শুরু করে মিশর কর্তৃপক্ষ। ১৯৯৯ সালে জওয়াহিরিকে মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দেয় মিশরের সামরিক আদালত। তবে সরকারের ধরাছোয়ার বাইরে চলে যান তিনি, তাকে গ্রেফতার করা সে সময় সম্ভব হয়নি।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের টুইনটাওয়ারে জঙ্গি হামলার অন্যতম চক্রান্তকারী ছিলেন জাওয়াহিরি। জানা যায়, এরপর থেকেই পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সীমান্তে বিভিন্ন স্থানে গা-ঢাকা দিয়ে ছিলেন তিনি। ২০১১ সালে মার্কিন হামলায় লাদেনের মৃত্যু হলে আল কায়দা পরিচালনার দায়িত্ব যায় জওয়াহিরির কাঁধে। সে সময় থেকে আবারও চর্চায় উঠে আসে তার নাম। লাদেনের মৃত্যুর পর পশ্চিমা বিভিন্ন দেশে হামলা চলতে থাকে তারই নেতৃত্বে।
জাওয়াহিরির চারজন স্ত্রী, ছয় মেয়ে ও এক ছেলে। ২০০১ সালের ডিসেম্বরে আফগানিস্তানে মার্কিন বিমান হামলায় ছেলে মোহাম্মদ ও কন্যা আয়েশার মৃত্যু হয়।
এসজেড/