স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আশ্বাসের পরও খেলার মাঠে থামেনি দেয়াল নির্মাণের কাজ

0
4


থানার নির্মাণ কাজ চলছে, চলছে এর বিরুদ্ধে নাগরিক প্রতিবাদ।

রাজধানীর কলাবাগানে তেঁতুলতলা মাঠে এখনো থামেনি দেয়াল নির্মাণের কাজ। যদিও কলাবাগান থানার জন্য বিকল্প জায়গা খুঁজতে দক্ষিণ সিটির মেয়রকে অনুরোধ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

এদিকে, তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষার আন্দোলনে নামা সৈয়দা রত্না এবং তার ছেলে মোহাম্মদ ঈসা আবদুল্লাহকে প্রায় ১২ ঘণ্টা কলাবাগান থানায় আটকে রাখার প্রতিবাদে এবং খেলার মাঠ উদ্ধারে নাগরিক কর্মসূচী পালন করেছে এএলআরডি, বাপা, বেলা, আসক, ব্লাস্ট, গ্রীন ভয়েস, নিজেরা করি, নাগরিক উদ্যোগ, নারীপক্ষ, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি ও টিআইবি-এই ১২টি সংগঠন।

মাঠ উদ্ধারের দাবি নাগরিক সমাবেশ।

সোমবার (২৫ এপ্রিল) ডিআরইউতে তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষার আন্দোলনকারীদের সংবাদ সম্মেলনের পর দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, কলাবাগান থানার জন্য বিকল্প জায়গা খুঁজতে দক্ষিণ সিটির মেয়রকে অনুরোধ করা হয়েছে। তবে এতে পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারেনি তেঁতুলতলা মাঠ উদ্ধার আন্দোলনে নামা সংগঠনগুলো। কারণ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আশ্বাসের পরও থামেনি সেখানে থানার দেয়াল নির্মাণের কাজ। তাই এদিন বিকেলে পূর্ব ঘোষিত সময়ে তেঁতুলতলায় নাগরিক সমাবেশ করে বেলা, নিজেরা করি, উদীচী, নারীপক্ষসহ ১২টি সংগঠন। শুধু মাঠ দখল করাই নয়, স্থানীয় বাসিন্দা সৈয়দা রত্না ও তার ছেলে মোহাম্মদ ঈসা আবদুল্লাহকে কোনো অভিযোগ ছাড়াই প্রায় ১২ ঘণ্টা কলাবাগান থানায় আটকে রাখার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন তারা।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির নির্বাহী প্রধান সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, এটা কোনো বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই না, কোনো থানার বিরুদ্ধে লড়াই না। এটা নাগরিকদের সুস্থ পরিবেশের অধিকারের সপক্ষের লড়াই।

আইনজীবী ও ক্রীড়া সংগঠক ব্যারিস্টার সাইদুল হক সুমন।

এছাড়া স্থানীয় বাসিন্দারা এই সমাবেশে তুলে ধরেন মাঠটির বিবিধ গুরুত্ব। তারা অনুরোধ জানান, এই মাঠটি শিশুদের জন্য ছেড়ে দিতে। একজন বাসিন্দা জানান এই মাঠ ঘিরে তার স্মৃতির কথা। তিনি বলেন, এই মাঠেই হয়েছিল তার স্বামীর জানাজা। এই সংগঠনগুলোর সাথে একাত্মতা জানাতে আসেন অনেকেই। উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার সাইদুল হক সুমনও। তীব্র প্রতিবাদ ঝরে পড়ে তার কণ্ঠেও। ব্যারিস্টার সুমন বলেন, উনি (সৈয়দা রত্না) সরকারি কাজে বাধা দেননি। তাকে ধরে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। একজন শিশুকে হাজতে ঢুকানো হয়েছে। মানে, পুলিশ কি কোনো আওতায় নেই?

মানসিক ও শারীরিকভাবে হেনস্তার শিকার সৈয়দা রত্না এই সমাবেশে উপস্থিত না থাকলেও ছিলেন তার মেয়ে সেওতি সাগুফতা। জানিয়েছেন, কেবল মাঠ উদ্ধার করা গেলেই সার্থক হবে তার মা ও ভাইয়ের বিনা অভিযোগে হাজতে থাকার কষ্ট। সেওতি সাগুফতা বলেন, যদি মাঠ খোঁজার সময় নির্মাণ কাজ চলতে থাকে, তবে ব্যাপারটা প্রহসনমূলক হয়ে যাবে। আর যদি মাঠ খোঁজার সময়ে নির্মাণ কাজ থেমে থাকে, তবে হয়তো আমরা খুশি থাকবো।

তেঁতুলতোলার মাঠে থানা নির্মাণ প্রসঙ্গে কথা বলছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

এদিকে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কলাবাগান থানার জন্য বিকল্প জায়গা খুঁজতে দক্ষিণ সিটির মেয়রকে অনুরোধ করলেও বিকল্প স্থান খুঁজে না পেলে কী করা হবে, সে সম্পর্কে স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি এখনও। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, খেলার মাঠ যেন থাকে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা করবো আমরা। আমি মাননীয় মেয়র মহোদয় এবং সবাইকে বলছি বিকল্প স্থান খোঁজার জন্য। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্যও থানা নির্মাণ অত্যন্ত জরুরি। যদি না পাওয়া যায় তবে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

আন্দোলনে অংশ নেয় শিশু সংগঠনগুলোও।

মাঠে থানার নির্মাণ কাজ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে পরিবেশবাদী, শিশু অধিকার ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো।

আরও পড়ুন: ‘মাঠের ব্যবস্থাপনা এলাকাবাসীর হাতে ছেড়ে দিতে হবে, এখানে পুলিশ দেখতে চাই না’

/এম ই