বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ আর আয়তনে ২ য় বৃহত্তম , নাম তার চীন । বিশ্বের ৭ ম আশ্চর্যের এক আশ্চর্য চীনের প্রাচীর ঘেরা অর্থনৈতিক আর রাজনৈতিক অপার সম্ভাবনাময় দেশ । একশ উনচল্লিশ কোটির দেশটির মাত্র দুই শতাংশ মসুলমান । এরপরও চীনে আছে , বহু প্রাচীন ইসলাম ঐতিহ্যের ইতিহাস । চীনের রমজান ও ইফতার নিয়ে জানাচ্ছেন চন্দ্রানী চন্দ্রা । বিশাল আর বৈচিত্র্যময় সৌন্দর্যময় দেশ এটি । উত্তরাংশে মরুভূমি যেমন আছে তেমনি দক্ষিণাংশে আছে অরণ্য ।
হিমালয় ও কারাকোরাম পর্বতমালা , পামির মালভূমি আর থিয়েমসান পর্বতশ্রেণী চীনকে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া থেকে ভৌগলিকভাবে আলাদা করেছে । একশ উনচল্লিশ কোটির দেশটির মাত্র দুই শতাংশ মসুলমান । এরপরও এমন এক সংখ্যালঘু দেশটির ইফতারের গল্প কেন করছি । চীনে আছে , বহু প্রাচীন ইসলাম ঐতিহ্যের ইতিহাস । সপ্তম শতকে চীনে ইসলামের ধর্মের প্রচার শুরু হয় ।
ঐতিহাসিক সিল্ক রোড দিয়ে ব্যবসার সুবাদে পশ্চিম ও মধ্য এশিয়া থেকে মুসলিম বনিকরা চীনে প্রবেশ করে । চীনের উত্তর – পশ্চিমের বৃহত্তম প্রদেশ শিংজিয়াং এ বাস করছে প্রায় দুই কোটি মুসলিম । স্থানীয়ভাবে তাদের বলা হয় উইঘুর মুসলিম । চীনা উইঘুরদের প্রায় ৯০ ভাগেরই বাস দেশটির উত্তর – পশ্চিমের শিনজিয়াং প্রদেশে ।
এছাড়াও কাংসু প্রদেশে ছড়িয়ে আছে হুই মুসলিমরা । অন্য সব দেশের মতো চীনের রমজান হলো সিয়াম সাধনা ও আল্লাহর তাকোয়া অর্জনের মাস । গ্রীষ্মকালে রাজধানী বেইজিং এ রাত ৩ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত প্রায় ১৭ ঘন্টা রোজা রাখতে হয় চীনের মসুলমানদের । শিনঝিয়াং প্রদেশে এর এর প্রাদেশিক সরকার গত কয়েকবছর যাবত রোজা রাখার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও , কেন্দ্রীয় সরকার বলছে ধর্ম পালনে কোন রকম হস্তক্ষেপ করা যাবেনা । পারিবারিক বন্ধন ও এ মাসে দৃঢ় হয় ।
কারণ রমজানে চীন মসুলমানরা পরিবারের সবাই একসাথে সেহরী ও ইফতার করা এবং একসাথে নামাজ পড়তে পছন্দ করে । মসুলীম সংখ্যা গরিষ্ঠ দেশ না হলেও , চীনে আছে ৩০ হাজার মসজিদ , আর ৫০ হাজার ইমাম । মসজিদগুলোতে থাকে ধর্মপ্রাণ মুসুল্লীদের ভীড় । নামাজ পড়া ও কোরান শরীফ পাঠ করা ছাড়াও ধর্মীয় মূল্যবোধ শেখার স্থান ও মসজিদ । চীনাদের খাদ্যতালিকায় সজী বেশি পছন্দের হলেও , ইফতারে মাংস খেতে পছন্দ করেন অনেকে । কাজু বাদাম দিয়ে রান্না করা মুরগী আছে তাদের পছন্দের খাবারের তালিকায় ।
ভাজা খাবরের চেয়ে সিদ্ধ খাবার তাদের বেশি পছন্দ । ইফতারে বিশেষ পছন্দের খাবারের তালিকায় থাকে স্যুপ । খাসির স্যুপের সাথে উইঘুরদের পছন্দের সজি রাপা , টমেটো । এবং লুডুলস হলো তাদের প্রিয় ইফতার । বাড়ীতে রান্না করে ইফতার করতে পছন্দ করলেও , কিনেও খাওয়া হয় প্রচুর ইফতার । শিংচিয়াং সহ বিভিন্ন শহরে প্রচুর হালাল রেষ্টুরেন্টে , ইফতার বিক্রি ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয় ।
রেষ্টুরেন্টের পাশ ঘেষেই খোলা ময়দানে ইফতার করতে বসেন অনেক রোজাদার , স্ট্রিট ফুডের দোকানগুলো ইফতারের জন্য জনপ্রিয় । ঈদের চাঁদ দেখা গেলে আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে মুসলিমদের মনে । বিশাল খোলা ময়দানে অনুষ্টিত হয় ঈদের জামাতগুলো ।
সেখানে মানুষের ঢল দেখলে ভুলেই যাবেন চীন কোন মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ দেশ নয় । ধর্মপালনে তাদের স্বাধীনতা যেন বিশ্বের প্রতিটি দেশে , প্রতিটি ধর্মের মানুষের জন্য এক অপরুপ দৃষ্টান্ত ।