বৌদ্ধধর্মের মধ্যদিয়ে গড়ে ওঠা ভারত-বাংলাদেশের জনগণভিত্তিক সম্পর্ক এখনো সমানভাবে বিদ্যমান এবং এই সম্পর্ক দুই দেশের সাংস্কৃতিক সংযোগকে সমৃদ্ধ করছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) রাজধানীর ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারে আষাঢ়ী পূর্ণিমা উপলক্ষে ভারতীয় হাইকমিশন এবং ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টার আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, আজকের এই আষাঢ়ী পূর্ণিমার দিনে প্রায় ২৫০০ বছর আগে ভগবান গৌতম বুদ্ধ ভারতের সারনাথে তার প্রথম ধর্মদেশনা প্রদান করেছিলেন। এই দিন সংঘের সূচনা এবং বৌদ্ধধর্মের শান্তি, করুণা ও প্রজ্ঞার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার সূচনার দিন। দিনটি ভিক্ষুদের বর্ষাবাসেরও সূচনা করে, যা তিন মাস ধরে চলবে।
তিনি আরও বলেন, আজকের এই পূর্ণিমার অনুষ্ঠান আমাদের দুই দেশের ঐক্যবদ্ধ আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের প্রতিফলন। অতীতে বাংলাদেশের অঞ্চল বৌদ্ধ শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র ছিল। অতীশ দীপঙ্করের মতো পণ্ডিতরা এই অঞ্চল থেকে সারাবিশ্বে বৌদ্ধধর্মের শিক্ষা ছড়িয়ে দিয়েছেন।
হিন্দু ধর্মের জন্য আষাঢ়ী পূর্ণিমার গুরুত্ব তুলে ধরে প্রণয় ভার্মা বলেন, দিনটি গুরু পূর্ণিমা হিসেবে পালিত হয় এবং আধ্যাত্মিক গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর দিন হিসেবে বিবেচিত হয়।
তিনি বলেন, বৌদ্ধধর্মের মধ্যদিয়ে গড়ে ওঠা দীর্ঘকালীন সম্পর্ক আজও ভারত-বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক সংযোগ এবং জনগণের সম্পর্কের সমৃদ্ধ অংশ হিসেবে রয়ে গেছে। এটি তীর্থযাত্রা, একাডেমিক বিনিময়, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং উৎসবের মাধ্যমে প্রতিফলিত হচ্ছে।
বিশ্ব যখন সহিংসতা, সন্ত্রাসবাদ, পরিবেশগত বিপর্যয় এবং সামাজিক টানাপোড়েনের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে, তখন ভগবান বুদ্ধের আত্ম-অন্বেষণ, সংযম এবং করুণার বার্তা মানবজাতিকে সহমর্মিতা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মূল্য মনে করিয়ে দেয় বলে উল্লেখ করেন ভারতীয় হাইকমিশনার।
তিনি বলেন, বুদ্ধের প্রজ্ঞা, অন্তর্মুখী শান্তি এবং অহিংসার প্রতীক আমাদের ভবিষ্যতের পথ আলোকিত করে।
ভারত বৌদ্ধ ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ উল্লেখ করে প্রণয় ভার্মা বলেন, আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ সংযোগ, বৌদ্ধ প্রত্নবস্তুর সংরক্ষণ, মঠভিত্তিক শিক্ষার সহায়তা এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়কে উৎসাহিত করতে ভারত নানা উদ্যোগ নিয়েছে। ভারতের ‘বৌদ্ধ সার্কিট’ উদ্যোগের মাধ্যমে লুম্বিনি থেকে বোধগয়া, সারনাথ থেকে কুশীনগর পর্যন্ত পবিত্র বৌদ্ধ স্থলগুলোকে সংযুক্ত করা হয়েছে, যেন ভক্তরা ভগবান বুদ্ধের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে পারেন।
অনুষ্ঠানে হাইকমিশনারের সহধর্মিণী মনু ভার্মা এবং ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টারের পরিচালক অ্যান মেরি জর্জ উপস্থিত ছিলেন।
জেপিআই/ইএ