ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার বিচার, ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগের দাবিতে কালো পতাকা মিছিল করেছে ছাত্রদল। রোববার (১৮ মে) দুপুর ১টার দিকে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে সংগঠনটি। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে কলা অনুষদ হয়ে অপরাজেয় বাংলার সামনে এসে শেষ হয়।
মিছিলে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘খুনি কেন বাইরে, প্রশাসন কী করে’, ‘আমার ভাই মরল কেন, শাহবাগ থানা জবাব চাই’ স্লোগানে পুরো ক্যাম্পাস প্রকম্পিত করে তোলে।
মিছিল শেষে বক্তব্যে ছাত্রদলের ঢাবি শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, জুলাইয়ে গণআন্দোলনে যেই সাম্য শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়েছিল সেই সাম্য আজ আমাদের মাঝে নেই। তার রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে গঠিত প্রশাসন এই হত্যাকাণ্ডের দায় এড়াতে পারে না। সাম্য হত্যার পর প্রশাসন যে অসংলগ্ন আচরণ করেছে তাতে আমরা ক্ষুব্ধ। প্রক্টরের অবিলম্বে পদত্যাগ চাই। একই সঙ্গে উপাচার্যকে সাম্য হত্যার রাতের এমন আচরণের জন্য দুঃখ প্রকাশ করতে হবে।
সেক্রেটারি নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, জুলাই-আগস্ট বিক্রি করে একদল শিক্ষার্থী টেন্ডার বাণিজ্য করছে। তাদের কোনো ক্ষমা করা হবে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বলতে চাই, আপনারা জুলাই রক্তের ওপর দিয়ে প্রশাসনে বসেছেন। ছাত্রদল গত ৯ মাস প্রশাসনকে সহযোগিতা করেছে। কিন্তু এখন পদত্যাগ চাওয়ার কারণ প্রশাসন জুলাই-আগস্টের সম্মুখ সারির নেতৃত্ব সাম্য হত্যার বিচার নিশ্চিত করতে পারেনি।
মঙ্গলবার (১৩ মে) রাত ১১টার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে আহত হন সাম্য। তাকে রাত ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরদিন সকালে নিহতের বড় ভাই শরীফুল ইসলাম শাহবাগ থানায় ১০–১২ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
সাম্য ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায়।
একই দাবিতে বেলা ১১টার দিকে বাংলাদেশের সাধারণ ছাত্রসমাজ ব্যানারে শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। সেখানে উপস্থিত হয়ে উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান ও প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ খান আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন এবং দ্রুত বিচারের আশ্বাস দেন।
উপাচার্য বলেন, সাম্য হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও দ্রুত বিচারের জন্য আমরা প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিয়েছি এবং আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আপনারা ধৈর্য ধারণ করুন। আমরা আজ বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বসবো। এখানে আমরা মামলার অগ্রগতির বিষয়ে কথা বলবো এবং মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির কথা জানাবো।
সাম্যের বড় ভাই এস এম শরিফুল আলম বলেন, আমার ভাইয়ের মৃত্যু নিয়ে যেন কোনো রাজনৈতিক ফায়দা তোলা না হয়। বিচারপ্রক্রিয়ায় যেন কোনো প্রহসন না হয় এবং কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি হয়রানির শিকার না হন-এটাই আমাদের একমাত্র চাওয়া।
পরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা শাহবাগ থানার দিকে পদযাত্রা করে থানায় অবস্থান নেন। একপর্যায়ে কিছু শিক্ষার্থী থানার ভেতরে ঢুকে সাম্য হত্যা মামলার অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করেন।
সেখানে শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক আসাদ বলেন, আমরা আমাদের কাজ করছি। হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করেছি। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই সব কিছু বলা যাচ্ছে না। একটু সময় দিন আমরা আসামিদের বিচারের মুখোমুখি করবো।
এফএআর/এমআইএইচএস/জিকেএস