মোহামেডান ছিল এবার কাগজে-কলমে এক নম্বর দল। কিন্তু নানা কারণে মোহামেডান এখন আর সেরা দল নয়। নিয়মিত একাদশের সাত-সাতজন ক্রিকেটার নেই। মোহামেডানকে পুরো সুপার লিগ খেলতে হচ্ছে জোড়াতালি দিয়ে দল সাজিয়ে।
অধিনায়ক তামিম ইকবাল হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে সপ্তম রাউন্ডের পর আর খেলতে পারছেন না। তামিম ছাড়া প্রথম লিগের শেষ ম্যাচে মোহামেডান প্রায় পুরো শক্তি নিয়েই আবাহনীর বিপক্ষে মাঠে নেমেছিল। মুশফিকুর রহিম, মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম-সবাই খেলেছিলেন আবাহনীর সাথে।
কিন্তু জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের কারণে পুরো সুপার লিগে তাদের ছাড়া খেলেছে মোহামেডান। কাল মঙ্গলবার লিগের অঘোষিত ফাইনালেও ওই সব তারকাদের ছাড়াই খেলতে হবে মোহামেডানকে।
শুধু ওই চারজনই নয়। অধিনায়ক তামিম, এক নম্বর স্ট্রাইক বোলার তাসকিন আহমেদ এবং বিকল্প পেসার ইমনও নেই। তামিম চিকিৎসকের পরামর্শে বিশ্রামে। তাসকিন চিকিৎসার জন্য লন্ডন আর পেসার ইমন যুব দলের হয়ে শ্রীলঙ্কা সফরে।
এর বাইরে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক তাওহিদ হৃদয়কেও পাচ্ছে না মোহামেডান। পরপর দুই দফায় শৃঙ্খলা ভেঙে শেষ পর্যন্ত চার ম্যাচ নিষিদ্ধ হয়ে এখন মাঠের বাইরে হৃদয়।
সব মিলে আটজন নিয়মিত ক্রিকেটার ছাড়া মাঠে নামতে হবে মোহামেডানকে। এতগুলো প্লেয়ার ছাড়া দল সাজানো কঠিন। মোহামেডান তাই বাধ্য হয়ে মোস্তাফিজুর রহমান, নাবিল সামাদ ও তৌফিক খান তুষারকে দলে টেনে সুপার লিগ খেলছে। কিন্তু তারা সে অর্থে তেমন কোনো ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারেননি।
যে কারণে সুপার লিগে মোহামেডানের পথ চলা সহজ ছিল না। লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে নিষিদ্ধ তাওহিদ হৃদয়কে ছাড়া খেলতে নেমে লেজেগোবড়ে অবস্থা হয়। ৯ উইকেটে হার দিয়ে শুরু হয় সুপার লিগ মোহামেডানের। পরের ২ খেলায় অগ্রণী ব্যাংক আর গুলশানের সাথে যথাক্রমে ৭ ও ৫ উইকেটে জিতলেও গাজী গ্রুপের সাথে চতুর্থ ম্যাচে শেষ বলের নাটকীয় জয়ে শিরোপা স্বপ্ন জিইয়ে আছে মোহামেডানের।
অন্যদিকে রাজনৈতিক পালাবাদলের পর এবার আবাহনী ভেঙে গেছে। কাগজে কলমে আকাশি-হলুদরা মোহামেডান, লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের পরে ছিল তিন নম্বর দল। কিন্তু নতুন কোচ হান্নান সরকারের সুপ্রশিক্ষণ আর এক ঝাঁক তরুণের আত্মনিবেদনে মাঠে আবাহনী অনেক সাজানো গোছানো এবং উজ্জীবিত দলে পরিণত হয়েছে।
মাঠের পারফরমেন্সে আবাহনী সবার ওপরে ছিল। ধারাবাহিকতা ছিল। যদিও আবাহনী সুপার লিগে পায়নি অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক আর ফাস্টবোলার নাহিদ রানাকে। তারা ৩ জন প্রথম টেস্ট খেলেছেন। আর এখন নাহিদ রানা পিএএসল খেলতে পাকিস্তান চলে গেছেন। সব মিলে আবাহনীরও ৩ জন অপরিহার্য পারফরমার নেই। তারপরও আবাহনীতে আছেন একঝাঁক ভালো মানের বিকল্প পারফরমার। যাদের নাম ডাক ও পরিচিতি তুলনামূলক কম। তবে তারা পারফরমার।
ওপেনিংয়ে পারভেজ হোসেন ইমন আর তার সঙ্গী শাহরিয়ার কোমল শুরুতে না পারলেও পরের দিকে এসে রান করছেন। ব্যাটার জিসান আলম নিজেকে পুরোপুরি মেলে ধরতে না পারলেও মাঝেমধ্যে একটু ঝলসে ওঠার চেষ্টা করেছেন। দুই স্পিনিং অলরাউন্ডার মেহরুব হোসেন ও মাহফুজুর রহমান রাব্বি ব্যাট ও বল হাতে দারুণ সার্ভিস দিচ্ছেন।
পেস বোলিং অলরাউন্ডার মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীও চেষ্টা করেছেন। আর অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ব্যাট ও বল হাতে নিয়মিত পারফরম করছেন। মোসাদ্দেক এখন পর্যন্ত প্রিমিয়ার লিগের সেরা অলরাউন্ডার। দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়েছেন মোসাদ্দেক। আর বাঁহাতি স্পিনার রাকিবুল হাসানও বল হাতে ধারাবাহিকভাবে দারুণ বোলিং করে উইকেট শিকারে সবার ওপরে।
কাজেই তারুণ্য নির্ভর আবাহনীর পথ চলা ছিল সুন্দর, সাবলীল। সুপার লিগেও আবাহনীর টিম পারফরমেন্সের সাথে গাজী গ্রুপ, লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ, গুলশান ক্রিকেট ক্লাব ও অগ্রণী ব্যাংক কুলিয়ে উঠতে পারেনি।
অন্যদিকে মোহামেডান মিস করছে ৫ অতি কার্যকর পারফরমার তামিম ইকবাল, মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাওহিদ হৃদয় আর তাইজুল ইসলামকে। ওই ৫ জনই মোহামেডানের প্রধান চালিকাশক্তি ছিলেন। তাদের অবর্তমানে ওপেনার রনি তালুকদারই ভরসা। তরুন ওপেনার আনিসুল ইমন আবাহনীর সাথে প্রথম লিগে সেঞ্চুরি করে দল জিতিয়েছেন। তারপরে আর খবর নেই।
তাছাড়া মোহাম্মদ সাইফউদ্দীন, আবু হায়দার রনি, এবাদত হোসেন আর আরিফুলরা কেউই নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারেননি। বাঁহাতি স্পিনার নাসুম শেষ ম্যাচে গাজী গ্রুপের বিপক্ষে ব্যাট হাতে প্রায় হারা ম্যাচ জিতিয়েছেন। অন্য খেলায় তেমন কিছু করতে পারেননি।
কাজেই সুপার লিগের পারফরমেন্সকে মানদণ্ড ধরলে আবাহনী তুলনামূলক উজ্জ্বল ও শ্রেয়তর দল। শুকনো আবহাওয়া ও কাঠখোট্টা গরমে শেরে বাংলায় যেমন বোলিং কাজ করে বেশি, আবাহনীর আছে সেই বোলিং।
বাঁহাতি স্পিনার রাকিবুল আর অফস্পিনার মোসাদ্দেক সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সাথে দুই তরুণ স্পিনিং অপশন মেহরুব ও মাহফুজ রাব্বি। সব মিলে চার-চারজন স্পিনার। এটা আবাহনীর বাড়তি শক্তি।
অন্যদিকে মোহামেডানের বোলিং পেস নির্ভর। এবাদত হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান, সাইফউদ্দীন আর আবু হায়দার রনি পেস আক্রমণে। মিরাজ আর তাইজুল নেই, নাসুমই একমাত্র স্পিন অপশন। বাধ্য হয়ে নাবিল সামাদকে দলে নেওয়া হয়েছে। তাই মোহামেডানের বোলিং অপশনও তুলনামূলক কম।
সব মিলে তারুণ্য নির্ভর আবাহনীর টিম পারফরমেন্সের সামনে ভাঙাচোরা মোহামেডান অনেকটাই ঔজ্জ্বল্যহীন, ফিকে। এখন দেখার বিষয় অঘোষিত ফাইনালে কোন দল কেমন করে!
এআরবি/এমএমআর