পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যে কারা থাকছেন?

0
0


ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্য আজ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দ, ক্যাথলিক কর্মকর্তা এবং সারাবিশ্ব থেকে জমায়েত হওয়া শোকাহত হাজার হাজার মানুষ শনিবার (২৬ এপ্রিল) সেন্ট পিটার্স স্কোয়ারে পোপের শেষকৃত্যানুষ্ঠানে যোগ দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। খবর বিবিসির।

এরই মধ্যে অনেক দেশের সরকার প্রধান ও রাজ পরিবারের সদস্যরা নিজেদের উপস্থিতি নিশ্চিত করেছেন। এর মধ্যে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার, প্রিন্স উইলিয়াম, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, স্পেনের রাজা ষষ্ঠ ফিলিপ এবং রানি লেটিজিয়া, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইস ইনাসিও লুলা ডি সিলভা।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এরই মধ্যে ভ্যাটিকানে পৗেঁছেছেন। অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক নেতাদের অনেকেই যোগ দেবেন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের পর আজকের এই শেষকৃত্য অনুষ্ঠানটেই বিশ্ব নেতাদের উল্লেখযোগ্য জমায়েত ঘটবে।

বৈশ্বিক অনেক ইস্যুতে বিভিন্ন সময়ে মতামত দেওয়া নিয়ে বিশ্ব নেতাদের অনেকের সঙ্গেই পোপের মতবিরোধ হয়েছে।
কিন্তু তাদের মধ্যেও কয়েকজন তার শেষকৃত্যে যোগ দিচ্ছেন। ব্যাসিলিকার দিকে মুখ করে স্কোয়ারের ডান দিকে বসবেন অতিথিরা। সেখানে আর্জেন্টিনা ও ইটালির সরকার প্রধানরা সামনের সাড়িতে বসবেন।

ফরাসি ভাষার বর্ণমালার ক্রমানুসারে সরকার প্রধানরা এই অনুষ্ঠানে আসন গ্রহণ করবেন। এই অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমারের যোগদান নিশ্চিত করেছে ডাউনিং স্ট্রিট। এক বিবৃতিতে পোপ ফ্রান্সিসের নেতৃত্বকে ‘সাহসী’ আখ্যায়িত করে দশ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট থেকে বলা হয়েছে তিনি ছিলেন, গরীব, নিপীড়িত ও বিস্মৃতদের পোপ।

রাজা চার্লসের পক্ষ থেকে প্রিন্স উইলিয়াম অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন বলে জানা গেছে। ২০০৫ সালে পোপ জন পলের শেষকৃত্যে রাণী এলিজাবেথের পক্ষ থেকে তখনকার প্রিন্স অব ওয়েলস হিসেবে বর্তমান রাজা যোগ দিয়েছিলেন।

বিশ্বে ক্যাথলিকদের সবচেয়ে বড় জনগোষ্ঠীর বাস হলো ব্রাজিলে। ১০ কোটিরও বেশি ক্যাথলিক সেখানে বাস করে। দেশটির প্রেসিডেন্ট লুইস ইনাসিও লুলা ডি সিলভা ও ফার্স্ট লেডি জানজা লুলা ডি সিলভা শেষকৃত্যে যোগ দেবেন।

সোমবার পোপের মৃত্যুর পর ব্রাজিলে সাত দিনের শোক ঘোষণা করা হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে জানিয়েছেন, তিনি ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া পোপের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।

দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের পর এটাই হবে তার প্রথম বিদেশ সফর। পোপের মৃত্যুর খবর পেয়ে তিনি ফেডারেল ও রাজ্য পতাকা অর্ধনমিত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

পোপের সঙ্গে ট্রাম্পের আগে মতবিরোধ দেখা গিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে দেওয়াল নির্মাণে ট্রাম্পের প্রস্তাবের সমালোচনা করেছিলেন পোপ। তিনি বলেছিলেন, যিনি দেয়াল নির্মাণের চিন্তা করেন এবং সেতু তৈরি করেন না তিনি খ্রিষ্টান নন। পাল্টা জবাবে ট্রাম্প বলেছিলেন, একজন ধর্মীয় নেতা হয়ে কারও ব্যক্তিগত বিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন তোলা লজ্জার।

বিশ্বের ক্যাথলিক দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম বড় হলো ফিলিপাইন। দেশটির ৮০ ভাগ মানুষ নিজেদের রোমান ক্যাথলিক পরিচয় দেয়। দেশটির প্রেসিডেন্ট মার্কোস জুনিয়র পোপের শেষকৃত্যে যোগ দেবেন।

২০১৫ সালে পোপ ফ্রান্সিস যখন দেশটি সফরে যান তখন ম্যানিলায় প্রায় ৬০ লাখ মানুষ সমবেত হয়েছিল।ফিলিপাইনের কার্ডিনাল লুইস অ্যান্টনিও গোকিম টাগলে পরবর্তী পোপ হওয়ার দৌড়েও আছেন। সামাজিক ইস্যুর প্রতি নিবেদন ও অভিবাসীদের প্রতি আন্তরিকতার কারণে তাকে ‘এশিয়ার ফ্রান্সিস’ বলা হয়।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ফার্স্ট লেডি ওলেনা জেলেনস্কা শেষকৃত্যে থাকবেন। যদিও শুক্রবার তিনি বলেছেন, কিয়েভে হামলার প্রেক্ষিতে কয়েকটি সামরিক মিটিং থাকায় তিনি যোগ দিতে নাও পারেন। সেক্ষেত্রে ফার্স্ট লেডি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অনুষ্ঠানে যোগ দিবেন।

২০২২ সালে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর পোপ অনেকবারই শান্তি ও যুদ্ধ অবসানের আহবান জানিয়েছিলেন।
তাদের দুজনের মধ্যে অনেকবার সাক্ষাতও হয়েছে। গত অক্টোবরে শেষ সাক্ষাতের পর পোপ সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন, সব জাতিরই শান্তি ও নিরাপত্তার মধ্যে থাকার অধিকার আছে। তাদের ভূখণ্ডে হামলা হওয়া উচিত নয়। তাদের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করতে হবে এবং শান্তি ও সংলাপের মাধ্যমে তার নিশ্চয়তা দিতে হবে।

অন্য আরও যারা শেষকৃত্যে যোগ দেবেন তাদের মধ্যে রয়েছে, জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস, ইটালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আন্দরজেজ ডুডা, ইইউ কমিশন প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়েন, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট জাভিয়ের মিলেই, বেলজিয়ামের রাজা ফিলিপ্পে ও রানি মাতিলদে, ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোরান মিলানোভিচ, ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল নবোয়াসহ আরও কয়েকটি দেশের সরকার প্রধান ও রাজ পরিবারের প্রতিনিধিরা।

টিটিএন

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।