সেই টি-টোয়েন্টি আর ওয়ানডের মত টেস্টেও বাংলাদেশের মূল সমস্যার কেন্দ্রবিন্দু হলো ব্যাটিং। সেই ব্যাটিংয়ের সবচেয়ে দূর্বল জায়গা হলো ওপেনিং জুটি। এবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও ওপেনিং জুটি একদমই ভাল করেনি।
সাদমান উভয় ইনিংসে চরম ব্যর্থ। অপর ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়ও নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। প্রথম ইনিংসে ১৪ আর দ্বিতীয় ইনিংসে ভাল খেলার সম্ভাবনা জাগিয়েও ৩৩ রানে ফিরেছেন সাজঘরে। শুধু এই টেস্টে বলা কেন, টেস্ট ক্যারিয়ারের একদম শুরুতে বেশ নজর কাড়া পারফরমেন্স; প্রথম ১০ টেস্টের ১৯ ইনিংসে একটি শতক সহ ৫ ফিফটি।
তারপর ছন্দ হারিয়ে ফেলা। সর্বশেষ ২০২৩ সালের নভেম্বরে সিলেটে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৮৬ রানের ইনিংসটির পর ৮ টেস্টে ১৬ ইনিংসে (৮, ১৪, ২, ১২, ০, ২১, ২৪, ৩০, ৪০, ১০,১১, ৫,৬, ৩, ০, ১৪, ৩৩) আর কোন ফিফটি নেই জয়ের। বিকল্প ওপেনার হিসেবে যাকে নেয়া হয়েছে, সেই জাকির হাসান এর অবস্থাও তাই। প্রথম টেস্টে ভারতের সাথে টেস্ট অভিষেকেই শতরান। পরের টেস্টে আবার অর্ধশতক।
ঠিক তৃতীয় টেস্টেই আফগানিস্তানের সাথে আবারো ৭১ রানের ইনিংস। কিন্তু গত বছর মার্চে চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হাফ সেঞ্চুরি ( ৫৬) পর থেকেই নিজেকে হারিয়ে ফেলা। পরের ১৩ ইনিংসে আর কোন ফিপটি নেই জাকির হাসানের। এবারের লিগেও রান নেই। কিন্তু তারপরও তাকে নেয়া হয়েছে।
হোক তা ভিন্ন ফরম্যাট এবং সাদা বলে, তারপরও প্রিমিয়ার লিগে মাহমুদুল হাসান জয় আর জাকির হাসানের রান নেই। অথচ এনসিএল, বিপিএলের পর এবার ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে প্রচুর রান করেও উপেক্ষিত নাইম শেখ।
ভিন্ন ফরম্যাটে হলেও অফ ফর্মের জয় আর জাকির হাসান দলে সুযোগ পেলেও বিবেচনায় আসেননি ফর্মের চূড়ায় থাকা নাইম শেখ। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন মনে করেন, নাইম শেখকে অনায়াসে টেস্ট দলে রাখা যেত।
সুমন মনে করেন, যেহেতু সে ফর্মে আছে এবং প্রথম শ্রেণির, বিপিএল এবং ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও নিয়মিত ও ধারাবাহিকভাবে ভাল খেলে প্রচুর রান করেছে, তাই টেস্ট দলে নাইম শেখকে ডাকা যেত। নাইম শেখের পারফরমেন্স ও আন্তর্জাতিক এক্সপেরিয়েন্সকে বিবেচনায় আনা যেত।
এমনটা জানিয়ে হাবিবুল বাশার সুমন আজ জাগো নিউজকে বলেন, ‘নাইম শেখকে দলে না দেখে আমি লিটল বিট সারপ্রাইজড। নাইম শেখ কিন্তু সব ফরম্যাটে প্রায় সব আসরে রান করেছে। করছে। সে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে রান করেছে। এনসিএল টি-টোয়েন্টির পর বিপিএলেও টপ স্কোরার হয়েছে। এবার প্রিমিয়ার লিগেও দারুন খেলেছে। এমনকি সর্বশেষ জাতীয় লিগেরও টপ স্কোরার ছিল।’
নাইমকে টেস্ট দলে রাখার পক্ষে যুক্তি দিয়ে হাবিবুল বাশার বলে ওঠেন, ‘একজন ওপেনার তিন ফরম্যাটেই রান করছে। ভাল খেলছে। তাকে আমরা ওপেনিংয়ে বিবেচনায় আনতেই পারতাম। আমাদের ব্যাটিংয়ের সমস্যার কেন্দ্রবিন্দু হলো ওপেনিং। সেখানে নাইম শেখের মত ইনফর্ম এবং নিয়মিত রান করা একজন ব্যাটারকে আমরা হিসেবের মধ্যেই আনলাম না। এটা দুঃখজনক। তাকে টেস্ট দলে রাখা যেত অনায়াসে। তাই নাইম শেখকে না দেখে আমি খানিক বিস্মিত হয়েছি। সব ফরম্যাটে রান করেছে। প্রথম শ্রেণিতেও রান করেছে এবং ওপেন করেই রান করেছে।’
‘জয় কিন্তু লিগে তেমন রান করেনি। আর সবচেয়ে বড় কথা জয় এবারের প্রিমিয়ার লিগে ওপেন করছে না। চার নম্বর পজিসনে খেলেছে। আমরা তাকে টেস্টে ওপেনার হিসেবে মুজারাবানির প্রচন্ড গতি আর বিপজ্জনক বাউন্সের সামনে খেলিয়ে দিলাম! আমার মনে হয় অনায়াসে আমরা ওপেনিংয়ে নাইম শেখের কথা ভাবতে পারতাম। দেখতে পারতাম।’
বাশার আরও যোগ করেন, ‘মাহমুদুল হাসান জয় আর জাকির হাসান দু’জনই কিন্তু অনেকদিন ধরে তেমন রান করতে পারছে না। আমি নাইম শেখের কথা বলেছি এই কারণে যে, সে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট খেলেছে। টি-টোয়েন্টি আর ওয়ানডের পাশাপাশি একটি টেস্টও খেলার অভিজ্ঞতা আছে তার। তাই ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেটের এক্সপেরিয়েন্সটা তার আছে। সে একদম নতুন নয়। নাইম শেখ এক্সপেরিয়েন্স উইথ ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট। সে ফর্মে ছিল। তার ফর্মটাকে বিবেচনায় আনা যেতো।’
এআরবি/আইএইচএস