কর নিয়ে সবচেয়ে সমস্যা মোকাবিলা করেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা

0
0


নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতা, জটিল ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া, হুট করে নীতি পরিবর্তন ইত্যাদি কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বড় ধরনের জটিলতার মধ্যে পড়েন। এ ছাড়া আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, শুল্ক-কর, গ্যাস ও বিদ্যুতের মতো পরিষেবা নিয়েও বিপাকে পড়তে হয়।

বিদেশি বিনিয়োগকারীদের এ সব সমস্যার সমাধান দিয়ে থাকে লিগ্যাল ফার্মগুলো। তেমনি একটি প্রতিষ্ঠান লিগ্যাল কাউন্সিল। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং পার্টনার ব্যারিস্টার ওমর এইচ খানের সঙ্গে আলাপচারিতায় উঠে এসেছে বিদেশি বিনিয়োগের অন্তরায়গুলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সাইফুল হক মিঠু

আরও পড়ুন

জাগো নিউজ: বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের আগে কী ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন? আর বিনিয়োগের পর আপনাদের কাছ থেকে কী ধরনের সেবা নেন?

ওমর এইচ খান: অনেকগুলো বিষয় ভেবে-চিন্তে একজন এই দেশে বিনিয়োগ করতে আসেন। বাংলাদেশেই বিনিয়োগ করতে হবে এমন কোনো বিষয় নেই। বিনিয়োগের জন্য তাদের কাছে অন্যান্য অনেক দেশ আছে। যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করে তারা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন তা হলো শ্রমিক ব্যবস্থাপনা, কোন দেশে কম বেতনে কাজ করানো যায়, চুক্তি প্রয়োগ ব্যবস্থাপনাগুলো কী, বিবাদ বা ঝামেলা হলে তারা কি ন্যায়বিচার পাবে, কত সহজে বিচার হয়। এছাড়া এখানে আবাসন আইন কেমন, কত সহজে ব্যবসার অবকাঠামো দাঁড় করানো যায়, লজিস্টিকস কী এগুলো তারা দেখেন। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে করহার পদ্ধতি, কেমন কর আদায় হয়, কর সুবিধা কতটুকু আছে, কর ব্যবস্থাপনায় জবাবদিহিতা কতটুকু, দুর্নীতি হলে সেটা মোকাবিলা করার পদ্ধতি কতটুকু আছে- এগুলো বিনিয়োগকারীরা জানতে চান। এখানে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ কতটা আছে, কত সহজে তারা মুনাফা দেশে নিয়ে যেতে পারবেন এই সব বিষয় বিবেচনা করে বিনিয়োগকারীরা সিদ্ধান্ত নেন। বিনিয়োগের আগে আমরা তাদের স্বচ্ছ ধারণা দিয়ে থাকি। এই সমস্যাগুলো নিয়ে প্রতিনিয়ত জানতে চান বিনিয়োগকারীরা। বাংলাদেশের সিস্টেমগুলো জেনে তারা অন্য দেশের সঙ্গে তুলনা করেন। তারপর তারা সিদ্ধান্ত নেন। যেই দেশে বিনিয়োগকারীরা মনে করেন যে এই লিগ্যাল রেজিমের একটা স্ট্যাবিলিটি, একটা ক্ল্যারাটি আছে, জবাবদিহিতা আছে, তখন তারা সেই দেশে বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেন।

আরও পড়ুন

জাগো নিউজ: আপনারা কী ধরনের সেবা দিয়ে থাকেন?

ওমর এইচ খান: আমরা অনেক বছর ধরে বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে কাজ করছি। বাংলাদেশে কেউ যদি প্রথম থেকেই আইন মেনে ব্যবসা করেন তাহলে তাদের খুব একটা সমস্যা হয় না। আমরা শুনি বাংলাদেশে অনেক সমস্যা, পরিত্রাণ পাওয়া যায় না, আমলাতন্ত্র- এগুলো তখনই আসে যখন কেউ আইন ভঙ্গ করেন। আইন থেকে সরে গেলে সেখান থেকে ট্র‍্যাকে আসা বাংলাদেশে একটু কঠিন। কর নিয়ে বিনিয়োগকারীরা সবচেয়ে সমস্যা মোকাবিলা করেন। দ্বিগুণ কর এড়ানোর চুক্তি আছে। কিন্তু সেই সুবিধা বিনিয়োগকারীরা নিতে পারেন না। এখানে অনেক রকমের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং জবাবদিহিতার অভাব আছে।

জাগো নিউজ: শ্রমিক বিবাদ নিয়ে তারা সমস্যায় পড়েন?

ওমর এইচ খান: শ্রমিক বিবাদ নিয়ে বিনিয়োগকারীরা প্রায়ই জটিলতার মুখে পড়েন। অনেকগুলোর হয়তো যৌক্তিক কারণ থাকে না। ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যায়, স্ট্রাইক হয়, হামলা হয়। এই সংবাদগুলো শোনার পর নতুন বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশ আসতে দ্বিধান্বিত হয়ে পড়েন। শ্রমিক ব্যবস্থাপনা ও চুক্তি নিয়ে বিনিয়োগকারীরা অনেক ঝামেলায় পড়েন।

আরও পড়ুন

জাগো নিউজ: ঘন ঘন নীতিমালার পরিবর্তন তারা কী চোখে দেখেন?

ওমর এইচ খান: আমাদের প্রতি বছর বাজেট হয়, এটা একটা বার্ষিক ঘটনা। এটা অনেক ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তার জন্ম দেয়। কর এবং করের খাত হয়তো অল্প কিছু পরিবর্তন হয় কিন্তু ট্যাক্সের যে সিস্টেম বা এর যে মেকানিজম এটা বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্তিতে ফেলে। আমার মতে নীতিমালার পরিবর্তন খুব দ্রুত হওয়া উচিত না। অন্তত দীর্ঘ সময় ধরে চলবে এমন নীতিমালা নেওয়া উচিত যাতে বিনিয়োগকারীরা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

আরও পড়ুন

কেননা আয়ের পরে আমি কত টাকা ট্যাক্স দেব, কত টাকা ভ্যাট দেব, সেটা পর্যালোচনা করে আমার মনে ব্যবসায়ের মুনাফা নির্ধারিত হয়। আমার মতে করহার দ্রুত পরিবর্তন করা উচিত না।

জাগো নিউজ: তার মানে কর নিয়ে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও জটিলতায় পড়েন?

ওমর এইচ খান: কর নিয়ে সব দেশেই কমবেশি জটিলতা আছে। খুব সহজ কর ব্যবস্থাপনা হয় এমন দেশের সংখ্যা কম। কর ব্যবস্থাপনা প্রত্যেক বিনিয়োগকারীর জন্য অনেক চিন্তার বিষয়। বৈশ্বিক রাজনীতি এখন বাণিজ্য ও করের ওপর নির্ভরশীল; যা বিগত কয়েকদিন ধরে আমরা দেখছি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হঠাৎ করেই করহার নিয়ে তার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন যা বিশ্বে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে।

আরও পড়ুন

জাগো নিউজ: পাঁচ-ছয় বছর ধরে বিদেশি বিনিয়োগে মন্দা দেখা যাচ্ছে। এর কারণ কী?

ওমর এইচ খান: কোভিড এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কোভিডের কারণে আমরা তিন থেকে চার বছর বিদেশি বিনিয়োগ থেকে বঞ্চিত হয়েছি। এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের ফলে সারা পৃথিবীতে বিদেশি বিনিয়োগে স্থবিরতা দেখা গেছে। সর্বশেষ বাংলাদেশে ক্ষমতার পরিবর্তন হয়েছে। এখন আমরা একটি অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে আছি। এইসব ঘটনা বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে কিছুটা নিরুৎসাহিত করেছে।

তবে আশার বিষয় আমাদের বিনিয়োগ সামিট। এটা সম্ভাবনার দরজা খুলে দেবে। আমরা আমাদের সম্ভাবনা দেখাতে পারবো। বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন সেক্টরে বিনিয়োগে আকর্ষিত করতে অনেক অনুষ্ঠান হবে। এর মাধ্যমে শুরু হলো আমাদের যাত্রা।

এসএম/এমএমএআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।