জামাতে দাঁড়ানোর সময় যে তিনটি বিষয় মনে রাখবেন

0
0


নামাজের জামাতে দাঁড়ানোর সময় মুসল্লিদের তিনটি বিষয় খেয়াল রাখা দরকার। ১. কাতার সোজা করে দাঁড়ানো। মুসল্লিরা যেন কেউ এগিয়ে কেউ পিছিয়ে না দাঁড়ায়। ২. কাতারের মাঝখানে ফাঁকা না রাখা। মুসল্লিরা যেন পরস্পরের সাথে মিলে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ায়। ৩. দুটি কাতারের মধ্যে অস্বাভাবিক দূরত্ব না রাখা। সেজদা করার জন্য যতটুকু জায়গা প্রয়োজন ততটুকু জায়গা রেখে কাতার তৈরি করা। ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা কাতার সোজা কর। কাঁধসমূহকে বরাবর রাখ। ফাঁকা জায়গা পূর্ণ কর। তোমাদের ভাইদের হাতে তোমরা নরম হয়ে যাও এবং শয়তানের জন্য ফাঁকা জায়গা ছেড়ে দিয়ো না। যে কাতার মিলিয়ে দেয় আল্লাহ তাআলাও তাকে মিলিয়ে দেন। যে কাতার বিচ্ছিন্ন করে আল্লাহ তাআলা তাকে বিচ্ছিন্ন করে দেন। (সুনানে আবু দাউদ)

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা এবং ফেরেশতাগণ তাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করেন, যারা কাতারসমূহকে সংযুক্ত করে। যে ব্যক্তি কাতারের ফাঁকা জায়গা পূর্ণ করে, এর বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ)

জামাতে কাতার সোজা রাখার গুরুত্ব সম্পর্কে আরও বেশ কিছু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। রাসুলের (সা.) বক্তব্য যেমন বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) কীভাবে সাহাবিদের কাতার সোজা করে দিতেন, সে ব্যাপারে সাহাবিদের বক্তব্যও বর্ণিত হয়েছে। এ হাদিসগুলো থেকে নামাজের জামাতে কাতার সোজা ও সংযুক্ত রাখার গুরুত্ব বোঝা যায়। কাতারের মাঝে ফাঁকা রেখে দাঁড়ানো যে অত্যন্ত অপছন্দনীয় তাও স্পষ্ট হয়।

এ হাদিসগুলোর আলোকে কেউ কেউ বলেন, নামাজের জামাতে প্রত্যেকে অপরের পায়ে পা লাগিয়ে দাঁড়ানো বাধ্যতামূলক। পায়ে পা লাগানোর জন্য প্রয়োজনে দুই ছড়িয়ে দাঁড়াতে হবে। অধিকাংশ আলেমদের মতে এটা সঠিক নয়। হাদিসগুলোতে কাতারের মাঝখানে ফাঁকা রেখে দাঁড়ানে নিষেধ করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে কাতারবদ্ধ হতে বলা হয়েছে। পায়ের সাথে পা লাগিয়ে দাঁড়াতে হবে এ রকম কোনো নির্দেশনা হাদিসগুলোতে নেই। সাহাবায়ে কেরাম কাতারবদ্ধ হওয়ার সময় পায়ে পা লাগিয়ে দাঁড়াতেন সে রকম কোনো প্রমাণও নেই।

আগে বেড়ে কাতার পূর্ণ করার ফজিলত

মসজিদে জামাতের প্রথম কাতারে নামাজ আদায় করার ফজিলত অপরিসীম। তাই নামাজ আদায়কারীদের সব সময় প্রথম কাতারে নামাজ আদায়ের জন্য উন্মুখ থাকা উচিত। যারা দ্রুত মসজিদে উপস্থিত হতে পারেন, তাদের উচিত প্রথম কাতারে বসা, পেছনে বসে না থাকা। নবিজি (সা.) একবার প্রথম কাতার থেকে পিছিয়ে থাকা সাহাবিদের লক্ষ করে বলেছিলেন, তোমরা সামনের কাতারে এগিয়ে এসো এবং আমার অনুসরণ করো, যেন তোমাদের পরবর্তী লোকেরা তোমাদের অনুসরণ করতে পারে। মানুষ পেছনে হটতে থাকলে আল্লাহও তাদের পিছিয়েই দেন। (সহিহ মুসলিম)

আরেকটি হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, মানুষ যদি আজান ও প্রথম কাতারের সাওয়াবের কথা জানতো এবং লটারি ছাড়া তা লাভের কোন উপায় না থাকতো তবে তারা এর জন্য লটারি করতো। যদি নামাজে দ্রুত মসজিদে উপস্থিত হওয়ার ফজিলত মানুষ জানতো, তবে তারা এর জন্য প্রতিযোগিতা করতো। ইশা ও ফজরের সওয়াব যদি তারা জানতো, তবে তারা এ দুই নামাজের জন্য হামাগুড়ি দিয়ে হলেও মসজিদে আসতো। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)

নামাজের জামাতে যথা সম্ভব সামনে দাঁড়ানো, কাতারের ফাঁকা জায়গা পূরণ করারও ফজিলত বর্ণিত হয়েছে বিভিন্ন হাদিসে। বারা ইবনে আজেব (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন, আল্লাহ রহমত বর্ষণ করেন এবং ফিরিশতাগণ দোয়া করতে থাকেন তাদের জন্য যারা প্রথম কাতার মিলিয়ে (ব্যবধান না রেখে) দাঁড়ায়। আর যে পদক্ষেপে বান্দা কোনো কাতারের ফাঁকা জায়গা পূরণ করতে যায়, আল্লাহর কাছে অন্য কোনো পদক্ষেপ এর চেয়ে বেশি পছন্দনীয় নয়। (আবু দাউদ: ৫৪৩)

অন্য বর্ণনায় এসেছে একবার আল্লাহর রাসুল (সা.) সাহাবিদের বললেন, তোমরা কি সেভাবে কাতারবদ্ধ হবে না যেভাবে ফেরেশতারা তাদের রবের সামনে কাতারবদ্ধ হন? সাহাবিরা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, ফেরেশতারা কীভাবে রবের সামনে কাতারবদ্ধ হন? জবাবে তিনি বলেন, তারা আগে প্রথম কাতার পূরণ করেন। পরবর্তী কাতারগুলোতেও ঘেঁষে ঘেঁষে ফাঁকা না রেখে দাঁড়ান। (সহিহ মুসলিম)

ওএফএফ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।