আপনার বসার ঘরের শতরঞ্জির রঙ, শোবার ঘরে দেয়ালের পেইন্টিং, পরনের শাড়ি কিংবা অঙ্গের অলঙ্কারটি, বারান্দার গাছের টব- এগুলো সবই আপনার রুচি, ব্যক্তিত্ব আর লাইফস্টাইলকে অন্যের সামনে মেলে ধরে। লাইফস্টাইল সম্পর্কিত এমন সব পণ্যের ডিজাইন, উৎপাদন আর বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে রাজধানীর ধানমন্ডিতে দুই দিনব্যাপী প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘হার ই-ট্রেড’।
‘হার ই-ট্রেড’ এর ধারাবাহিক এই আয়োজনে ৯ম প্রদর্শনীটির শেষদিন আজ (৮ মার্চ)। সারাদেশ থেকে ৭৩ জন নারী উদ্যোক্তা তাদের পণ্য নিয়ে এসেছেন এই প্রদর্শনীতে। এই প্রদর্শনীর উদ্যোক্তারা সবাই অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ব্যবসা করেন। বিচিত্র ধরন ও স্টাইলের পণ্য আর ভিন্ন ভিন্ন সংগ্রামের গল্প নিয়ে এই নারীরা ৭ ও ৮ মার্চে একত্রিত হয়েছেন তাদের কাজকে ক্রেতাদের মুখোমুখি করতে।
‘হার ই-ট্রেড’ মূলত একটি ট্রাস্ট, এর উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ট্রাস্ট প্রেসিডেন্ট ও প্রতিষ্ঠাতা ওয়ারিছা খানম প্রীতি বলেন, “সারাদেশে যে নারী উদ্যোক্তারা আছেন, তাদের পণ্যের প্রচার-প্রসার এবং তাদের ব্যবসায়িক উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে হার ই-ট্রেড। আমাদের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে প্রতিনিয়ত তাদের পণ্যগুলো নিয়ে পোস্ট হয়, সেই সঙ্গে বিভিন্ন সময় প্রয়োজন অনুযায়ী আমরা অনলাইন ও অফলাইন প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করে থাকি।”
তিনি আরও বলেন, সাধারণত কোনো না কোনো উৎসব বা উপলক্ষ্যকে সামনে নিয়েই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়ে থাকে। তবে এ বছর ঈদকে কেন্দ্র করে পরিকল্পনা করলেও আন্তর্জাতিক নারী দিবসটিও পেয়ে যাওয়ায় আয়োজনে একটি ভিন্ন মাত্রা যোগ হয়েছে। চলুন আলোকচিত্রের মধ্য দিয়ে ঘুরে দেখা যাক আজকের প্রদর্শনী। ছবিগুলো তুলেছেন অধরা মাধুরী।
দেশীয় শাড়ি, সুতি-আরামদায়ক জামা, আর ন্যাচারাল টাই-ডাই নিয়ে মেলায় এসেছিলো বেশ কয়েকজন নারী উদ্যোক্তা।
ট্র্যাডিশনাল পোশাকের পাশাপাশি বিকল্প ফ্যাশন আর নিজস্ব ডিজাইন নিয়ে প্রদর্শনীতে ছিলেন একাধিক উদ্যোক্তা। তাদেরই একজন ইমরোজা তাম্মিম। ‘এ কিচির মিটির ক্রিয়েশন’ নামের এই স্টলে লেখা ছিলো ‘ফ্যাশনে যুক্ত হোক টুপি’। এমনই ভিন্নধর্মী স্টাইল নিয়ে এসেছিলেন আরো অনেকে।
শিক্ষাজীবনে নিজেদের জন্য ভিন্নধর্মী ডিজাইনে জামা বানাতে শুরু করেন অনন্যা ও তাঈমা। আগ্রহের জায়গা থেকেই রিসেলিং ব্যবসা দিয়ে মাঠে নামের তারা। কিন্তু নিজেদের শিল্পী স্বত্ত্বাকে সন্তুষ্ট করতে দেশীয় পণ্যে নিজের করা ডিজাইন আঁকতে শুরু করেন। এভাবেই তৈরি হয় ‘ফিডাতো’।
শুধু কাপড়ই নয়। ত্বক ও চুলের যত্নে বিভিন্ন ভেষজ গুণসম্পন্ন পণ্য আর তেলের স্টলও ছিলো প্রদর্শনীতে।
দেশীয় পোশাকের প্রদর্শনীতে হাতে আঁকা শাড়ি না থাকলে কি হয়!
পোশাকের পাশেই ছিলো ঘরসজ্জার বিভিন্ন পণ্য। সাকিয়া রশিদ মুন্নি পেশায় একজন আর্কিটেক্ট। পেশার প্রয়োজনে ইন্টেরিওর ডিজাইনের কাজ করতে গিয়েই একটি চমৎকার বুদ্ধি মাথায় আসে তার। ঘরসজ্জার যেসব পণ্য দেশের বাইরে থেকে অনেক দামে কিনে আনেন ক্রেতারা, সেসব যদি দেশীয় কাঁচামাল দিয়ে এখানেই বানানো যায় তাহলে কেমন হয়? যেমন ভাবনা, তেমন কাজ। কঠোর পরিশ্রম আর পরিবারের উৎসাহ, দুই মিলিয়ে এগিয়ে চলেছেন তিনি।
পোশাক, ঘরসজ্জা সবই তো হলো। এবার পালা অলঙ্কারের। ঐতিহ্যবাহী নকশায় সিলভার প্লেটেড বালা, পলা, মালা, আংটিসহ অনেককিছুই ছিলো এসব স্টলে।
আচার বানানো সময়সাপেক্ষ একটি কাজ। ইচ্ছা থাকলেও অনেকসময় পেরে ওঠেন না অনেকে। আবার মেশিনে বানানো আচারও হয়তো খেতে ভরসা পাননা। এমন ক্রেতাদের জন্য ‘আচারিয়ান’র মতো উদ্যোক্তাও ছিলো প্রদর্শনীতে।
‘হার ই-ট্রেড’এর এই প্রদর্শনীতে পণ্য নিয়ে আসা প্রত্যেকটি নারীর রয়েছে নিজস্ব একটি সংগ্রামের গল্প। তবে নিজেদের সফলতায় আজ তারা উজ্জ্বল। একে অন্যের হাত ধরে এগিয়ে চলেছেন সামনের দিকে।
এএমপি/এএসএম