মৌলভীবাজারের কামালপুরে আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের বাড়ি-দোকানপাটে হামলা ও লুট

0
58

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর মৌলভীবাজার জেলাজুড়ে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়, নেতা-কর্মীদের বাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন স্থানে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।

হামলা ও সহিংসতায় এখন পর্যন্ত এই জেলায় আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ। ঘর ছেড়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতা-কর্মী ও সমর্থক। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়েছে। স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তায় জেলাজুড়ে নৈরাজ্য ও অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে জামায়াত-বিএনপির নেতাদের কড়া হুঁশিয়ারিতে গতকাল থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করেছে।

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কামালপুর এলাকার স্থানীয় লোকজন জানান, সরকার পতনের পর পরই তাদের এলাকায় লুটপাট শুরু হয়। আওয়ামীলীগ নেতা কর্মীর বাড়ি ঘর সহ বিভিন্ন দোকানপাটও পুড়িয়ে দেয়া হয়। সরকার পতনের পরপরই শুরু হয় লুটপাট। এলাকায় পুলিশ না থাকায় কারও কাছে অভিযোগ করতে পারেননি। তাঁরা এখন অসহায় হয়ে পড়েছেন।

এই এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হামলাকারীরা সবাই এলাকার পরিচিত মুখ। তাঁরা ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে এসব হামলা ও ভাঙচুর করেছেন। পুলিশ নিস্ক্রিয় থাকায় সুযোগসন্ধানীরা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাড়িঘরে হামলা করে মালামাল লুট করে নিয়ে গেছেন। তাঁরা দলের বাইরের সাধারণ মানুষ ও সংখ্যালঘুদেরও ছাড় দিচ্ছেন না। ধনী-গরিব সব শ্রেণির মানুষের বাড়িতেই লুট করা হচ্ছে। গোয়ালের গরু ও হাঁস-মুরগিও লুট করা হচ্ছে। বাদ যাচ্ছে না বিছানা, বালিশ ও থালাবাসন।

কামালপুর এলাকায় ব্যবসায়ী মহলের সাথে কথা বলে ও সরেজমিনে এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে সেখানকার বিভিষিকাময় চিত্র দেখতে পান আমাদের আঞ্চলিক সাংবাদিক হানিফ আহমেদ। লুটপাতকৃত দোকান ও বাড়িঘরের মধ্যে স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামীলিগের সভাপতি খালেদ আলীর ফার্মেসী ও বাড়ি, সহ-সভাপতি মনজুর খানের বাড়ি, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক চয়ন দেবের স্বর্ণের দোকান, আকরাম হোসেনের মাছের ঘের, রানু দত্তের মুদির দোকান ও তাদের বাড়ি, যুবলীগের সভাপতি মহিদুল হোসেনের বাড়ি, স্থানীয় বাসিন্দা বিষ্ণু চন্দ্রের বাড়ি সহ আরও আনুমানিক ২০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িতে আগুন দেয় ও লুট করে দুর্বৃত্তরা। এছারা কামালপুর ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের মেম্বার বেলাল আহমেদের উপর হামলা করা হয়। রাস্তা ঘাটে চলাচল করা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লুটপাট করা হয় টাকা।

তবে মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির আহবায়ক আজাদ মিয়া বলেন, বিভিন্ন এলাকায় যারা নৈরাজ্য ও অরাজকতা করছে, তারা দলের কেউ না। এরা সুযোগসন্ধানী। তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করছে। বুধবার বিকেল থেকে তাঁরা মাইকিং করে সবাইকে সতর্ক করেছেন। যেসব এলাকায় সমস্যা আছে, সেসব এলাকায় দলের নেতা-কর্মীদের বিশৃঙ্খলাকারীদের রুখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

মৌলভীবাজার জেলা বিএনপি, জামায়াত ইসলামী, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন শান্তি–শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কঠোর অবস্থান নিচ্ছে। তাদের ভাষ্য, যারা নৈরাজ্য ও অরাজকতার সৃষ্টি করছে, তারা দলের কেউ নয়। আর তারা যদি দলের হয়ে থাকে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত খান বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে থানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। অসংখ্য পুলিশ সদস্য খুন হয়েছেন। ১১ দাবিতে পুলিশ সদস্যরা কর্মবিরতি পালন করছেন। এলাকার শান্তি–শৃঙ্খলা ফেরাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল পুলিশকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। এই সংকট দ্রুতই কেটে যাবে বলে আশা তাঁর।