ছাগল-কাণ্ড আমার জীবনে অভিশাপ: আদালতে মতিউর

0
0


নিজের পরিবারের কেউ দুর্নীতিবাজ নয় বলে আদালতে দাবি করেছেন ‘ছাগল-কাণ্ডে’ আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সদস্য মতিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘ছাগল-কাণ্ড আমার জীবনের জন্য অভিশাপ।’ বুধবার (১৫ জানুয়ারি) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে এমন কথা বলেন তিনি।

এই মতিউর রহমান ছাত্র জীবনে মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন বলে দাবি করেছেন তার আইনজীবী। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে আইনজীবী নিজে এমন তথ্য জানান। আইনজীবী বলেন, মাধ্যমিকে যশোর বোর্ড থেকে স্ট্যান্ড করেছিলেন মতিউর। উচ্চমাধ্যমিকে ভালো ফলাফলের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখানেও কৃতিত্বের সঙ্গে পাস করে সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করেন। চাকরিতেও তিনি ভালো করেন। এনবিআরে থাকা অবস্থায় রাজস্ব সংগ্রহে ইতিবাচক ভূমিকা রাখেন।

সকালে গ্রেফতারের পর বিকেল ৫টার দিকে মাইক্রোবাসে করে আদালতে এজলাসে এনে রাখা হয় তাকে। এর আগে এদিন সকালে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকা থেকে মতিউর ও তার প্রথম স্ত্রী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান লায়লা কানিজকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

গত কোরবানির ঈদে ১৫ লাখ টাকায় (প্রাথমিক দর) ছাগল কেনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হন মতিউর রহমানের ছেলে মুশফিকুর রহমান ওরফে ইফাত। এরপর আলোচনায় আসেন মতিউর। তখন তার ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে-বেনামে বিপুল সম্পদের তথ্য সামনে আসতে শুরু করে। তাদের বিরুদ্ধে মামলাও করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

মতিউরকে বিকেলে জজকোর্টে আনার পর রাখা হয় হাজতখানায়। এর কিছুক্ষণ পরে তাকে এজলাসে তোলা হয়, তখন মতিউর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন।

এসময় ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী জিজ্ঞাসা করেন, ‘মতিউর সাহেব, সেই ছাগলটি কোথায়?’

এজলাসে বিচারক উপস্থিত হওয়ার পর একপর্যায়ে ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, মাননীয় আদালত, এই আসামি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের অন্যতম সহযোগী। এজন্য তাকে এনবিআরের মত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পদায়ন করা হয়েছিল। তিনি এনবিআরের সদস্যও ছিলেন। গত কোরবানির ঈদে তার ছেলে ১৫ লাখ টাকার ছাগল কিনেছিলেন। কিন্তু এনবিআরের একজন সদস্যের কত টাকা বেতন?

পিপি ওমর ফারুক ফারুকী আদালতকে আরও বলেন, মতিউরের ছেলের ছাগল-কাণ্ড আলোচিত হওয়ার পর দুদক তাদের সম্পদ অনুসন্ধান শুরু করে। মতিউর, তার স্ত্রী এবং ছেলে-মেয়ের বিপুল সম্পদের খোঁজ পেয়েছে দুদক। তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। আদালতে এ সংক্রান্ত বিষয়ে কথোপকথন চলার একপর্যায়ে মতিউর বলেন, ‘ছাগল-কাণ্ড আমার জীবনের জন্য অভিশাপ।’

লাইসেন্সের মেয়াদহীন অস্ত্র মামলায় তিন দিনের রিমান্ড
বিচারক এজলাসে উঠার পর পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতকে জানানো হয়, মতিউর রহমানের বাসায় অবৈধ অস্ত্র পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে ভাটারা থানায় অস্ত্র আইনে মামলা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে পিপি বলেন, মতিউর রহমানের বাসায় একটি অবৈধ অস্ত্র পাওয়া গেছে। একটি শটগান, যার লাইসেন্সের মেয়াদ ২০২১ সালেই শেষ হয়ে গিয়েছিল, তিনি এর নবায়ন করেননি। অস্ত্র আইন অনুযায়ী, এটি এখন অবৈধ। ওই অস্ত্রের ২৫টি গুলির মধ্যে ১টি গুলির কোনো হিসাব তিনি দিতে পারেননি। এ জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে।

পিপির বক্তব্য উপস্থাপন শেষে মতিউর রহমানের আইনজীবী ওয়াহিদুজ্জামান আদালতকে বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ থেকে তার মক্কেল মতিউরের যে অস্ত্রকে অবৈধ অস্ত্র বলা হচ্ছে, সেটি আসলে অবৈধ অস্ত্র নয়, এটি বৈধ অস্ত্র। কিন্তু মতিউর রহমান ভুল করে এই অস্ত্রের লাইসেন্স নবায়ন করেননি। অস্ত্র আইন অনুযায়ী, অস্ত্রের লাইসেন্স যদি নবায়ন না করা হয়, তাহলে জরিমানা দিলে সেটি নবায়ন করা সম্ভব। সুতরাং তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার কোনো যুক্তি নেই। তিনি আরও দাবি করেন, মতিউর শটগান কেনার পর একটি গুলি ‘মিস ফায়ার’ করেছিলেন।

মতিউর রহমান মেধাবী ছাত্র ছিলেন উল্লেখ করে আইনজীবী ওয়াহিদুজ্জামান আদালতকে বলেন, তার মক্কেল সম্পর্কে বলা হচ্ছে, তিনি শেখ হাসিনা সরকারের সহযোগী। এই অভিযোগ সত্য নয়। তার মক্কেল একজন মেধাবী ছাত্র। তিনি মাধ্যমিকে যশোর বোর্ড থেকে স্ট্যান্ড করেছিলেন। উচ্চমাধ্যমিকে ভালো ফলাফল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখানেও কৃতিত্বের সঙ্গে পাস করে সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করেন। চাকরিতেও তিনি ভালো করেন। এনবিআরে থাকা অবস্থায় রাজস্ব সংগ্রহে ইতিবাচক ভূমিকা রাখেন।

এ বিষয়ে মতিউর রহমান আদালতের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘মাননীয় আদালত, আমার বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র রাখার যে মামলা হয়েছে তা নিয়ে কথা বলতে চাই, আমার অস্ত্রটি বৈধ। আমার ভুল হয়েছে, অস্ত্রের লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি।’

প্রায় ঘণ্টাখানেক বক্তব্য শুনানি শেষে ভাটারা থানায় করা অস্ত্র আইনের মামলায় মতিউর রহমানকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন আদালত। এর আগে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় তার প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আরেকটি আদালত। আগামী ১৯ জানুয়ারি আদালতে তার রিমান্ড আবেদনের শুনানি হবে।

এফএইচ/এমআইএইচএস/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।