সম্প্রতি গভীর রাতে অতর্কিত হামলার শিকার হন এখন টিভির জয়েন্ট নিউজ এডিটর এজি মাহমুদ। এ বিষয়ে ১২ ডিসেম্বর রাত দশটায় সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে একটি দীর্ঘ স্টাটাস দেন তিনি। স্টাটাসটি জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো—
‘‘১১ ডিসেম্বর। রাত আড়াইটার কিছু পর। অফিসের গাড়ি থামলো আবাসিকের গলির বিপরীতে মূল সড়কে। সহকর্মীদের বিদায় জানিয়ে নেমে পড়লাম রাস্তায়। অফিসের গাড়ি চলে গেলো। এত রাতে অন্যসময় নেমেই রাস্তা পার হওয়ার সুযোগ মেলে সাধারণত। কিন্তু আজ ছুটে আসছে দ্রুতগতির ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান, সাইডে আছে ধীরগতির মোটরসাইকেল। সময় নিলাম। ওগুলো যাক। তারপর রাস্তা পার হবো। শীতের কড়া হাওয়া বইছে। সড়কের এপার ওপার কোথাও কেউ নেই। দোকানপাট সব বন্ধ।
আমাকে ফেলে ট্রাক-পিকআপ চলে গেল। মোটরসাইকেল এলো। তিনজন উঠতি বয়সী ছেলে বসে আছে তাতে। একজন কালো হুডি মুখে সাদা মাস্ক। আরেকজন উল্টো ক্যাপ। আরেকজনকে ঠিকঠাক খেয়াল করিনি। তিনজনের ছয় জোড়া চোখ নীরবে অবজার্ভ করলো আমাকে। বয়স ২২/২৩ বছর হবে। হেলমেট নেই কারো। দেখেই খানিকটা সন্দেহ হলো। কিন্তু থামলো না ওরা। আমাকে অতিক্রম করে গেল। তবুও খানিকটা অস্বস্তি নিয়ে দ্রুত পা চালিয়ে রাস্তা পার হওয়ার প্রস্তুতি নিলাম। আড়চোখে নজরে পড়লো বাইকটা একটু সামনে গিয়েই ব্রেক কষেছে।
এবার অস্বস্তি পরিণত হলো শঙ্কায়। কারণ বাইক থেকে ঝটপট নেমে পড়েছে দুজন। নেমেই রাস্তা পার হয়ে দৌড়ে আসছে আমার দিকে। আমি পুরোপুরি রাস্তা পার হওয়ার আগেই কালো হুডি সাদা মাস্ক ধরে ফেললো আমাকে। উচ্চতায় আমার কাছাকাছি হবে। কোনো কথা না বলে শুরুতেই সজোরে আমার দিকে চালিয়ে দিলো হাতে ধরে রাখা উদ্যত চাপাতি। আশপাশের বৈদ্যুতিক বাতির আলোতে চকচক করে উঠলো সেটা আমার চোখে। দ্রুতবেগে সরে যাওয়ার চেষ্টা করলাম আবাসিকের গলির দিকে। ততক্ষণে রাস্তা পার হয়ে চলে এসেছে উল্টোক্যাপ পরা দ্বিতীয় হামলাকারী। তার উচ্চতা আমার চেয়ে কিছুটা বেশি। হাতে ঝকঝক করছে কীরিচ জাতীয় ধারালো অস্ত্র। ওরা আমাকে ঘিরে ধরলো মুহূর্তে। আমি থামলাম না। দৌড়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলাম। এক ঝলক দেখলাম, আবাসিকের গেট খোলা। রাস্তার কাজ চলছে বলে হয়তো। অন্যসময় এত রাতে বন্ধ থাকে। নক করে বা ধাক্কা দিয়ে খুলতে হয়। খোলা থাকায় কিছুটা সাহস পেলাম।
আরও পড়ুন
ততক্ষণে একদম কাছে চলে এসেছে দুই হামলাকারী। শুরু করলো এলোপাথাড়ি আঘাত। বামহাতের ওপর, ডানপাশের ঘাড়ে, পিঠে সজোরে ধারালো অস্ত্র চালাতে থাকে দুই হামলাকারী। পরে অবাক লেগেছে এ কথা ভেবে যে, একটিবারের জন্য ওরা মোবাইল-মানিব্যাগ চায়নি। এ বিষয়ে ওরা কোনো কথাই বলেনি। এসেই উপর্যুপরি ধারালো অস্ত্রের আঘাত।
আমি আঘাত পেয়ে কয়েকবার ব্যথায় চিৎকার করে ওঠায়, কালো হুডি সাদা মাস্ক চাপা গলায় দাঁত কামড়ে বলে উঠলো—একদম চিল্লাবি না! আবাসিকের গেটের সামনে বাসার এত কাছে এসে কেউ এভাবে আক্রমণ করতে পারে! মেনেও নিতে পারছি না। বিশ্বাসও করতে পারছি না। এরমধ্যে ওদের দুজনের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করতে গিয়ে আঘাতে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেলাম উঁচুনিচু রাস্তায়। কাজ চলছে বলে সড়ক এখনো অসমান। ঝুরঝুরে মাটি-বালুতে গড়াগড়ি খেল মোবাইল-মানিব্যাগ। ভাবলাম, এবার খেল খতম! পেছন থেকে বিনা বাধায় আমাকে আঘাত করবে ওরা। চিৎকার করে ডাকলাম আবাসিকের দারোয়ানকে। আমি ততক্ষণে অনেকটাই গেটের কাছে।
শিকার ছুটে গেছে ভেবে হামলাকারী উল্টোক্যাপ কীরিচ হাতে পিছু হটলো খানিকটা। আমি কোনোরকমে উঠে দাঁড়িয়ে পেছনে তাকাতেই চাপাতি হাতে ফের ধাওয়া দিলো কালো হুডি সাদা মাস্ক। কোনোকিছু না ভেবে দৌড়ে আবাসিকের গেট পার হলাম! ঠিক এসময় দারোয়ান হন্তদন্ত ভঙ্গিতে গেটের বামপাশে ছুটে এসে বললো, কী হয়েছে? আমি পেছনে তাকিয়ে দেখি সব হাওয়া! যেন কিছুই ঘটেনি! হর্ন বাজিয়ে মূল সড়কে গাড়ি চলছে স্বাভাবিক গতিতে। উত্তেজনায়-আতঙ্কে হৃৎপিণ্ড তখন লাফাচ্ছে রীতিমত। খুব ট্রমাটাইজড লাগছিল। একজন গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে কর্মসূত্রে এই শহরে বহু বছর ধরে ভোরে-রাত-বিরাতে চলাফেরা করেছি। এমন ঘটনা এবারই প্রথম!
সবাই খুব খুব সতর্ক থাকবেন। বিশেষ করে লেট নাইট ডিউটি শেষে আমরা যারা বাড়ি ফিরি। সিসিটিভি ভিডিও লিংক কমেন্টে।’’
এসইউ/এমএস