রাজধানীর বনশ্রীতে একটি যাত্রীবাহী বাস উল্টে খাদে পড়ে যায়। এতে বাসের ভেতরে থাকা যাত্রীদের হতাহতের আশঙ্কা দেখা দেয়। ৩০ নভেম্বর বিকেল ৫টা ৪২ মিনিটে এ দুর্ঘটনার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট তাদের উদ্ধার করে। এরপর ওই বাসের এক যাত্রীর লেখা ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সবাই কপি পোস্ট হিসেবে ছড়িয়ে দেন। ফলে লেখকের নাম জানা সম্ভব হয়নি। লেখাটি জাগো নিউজের পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো।
‘‘প্রথমে বলতে চাই আলহামদুলিল্লাহ বেঁচে আছি। একটা ঘটনা ঘটলে মানুষ যে সেটা নিয়ে কত রকম থিওরি দাঁড় করায়, সেটা আজ চোখের সামনে না দেখলে হয়তো বুঝতাম না। আজকে খুব সম্ভবত বিকাল সাড়ে পাঁচটায় বনশ্রী ১০ তলা এলাকায় একটা বাস দুর্ঘটনা ঘটে। আমি সেই বাসের সামনের দিকে বামপাশের সিটে বসা একজন যাত্রী ছিলাম।
পুরা ঘটনার সূত্রপাত হয় দুটি বাসের পাল্লা দিয়ে বাস চালানো থেকে। প্রথমে আমি যে বাসে ছিলাম (মানে দুর্ঘটনা ঘটা বাস); সেই বাসটা একটা বাসকে ওভারটেক করে (এখানে বলে রাখা ভালো, দুটো একই কোম্পানির বাস ছিল)। বাসের একটা পরিবার মেরাদিয়া নামবে, তাই তারা ড্রাইভারকে বার বার বাস থামাতে বলে। কিন্তু ড্রাইভারের মাথায় তখন চিন্তা পেছনের বাসটা তাকে আবার না পিছে ফেলে দেয়। তাই সে ডানপাশের মিররে তাকিয়ে থেকে যাত্রি নামাচ্ছিল।
যে পরিবারটি বাস থেকে নামবে। তাদের পরিবারের শেষ সদস্য যখন বাস থেকে নামবে (একজন ভদ্রমহিলা); তখন পেছনে থাকা বাসটা আমাদের বাসটাকে (দুর্ঘটনা ঘটা বাস) ওভারটেক করতে চায়। তাই ড্রাইভার তাকে ওভারটেক করার সুযোগ না দিয়ে পিকআপে চাপ দেয় আর বাস টান মারে। ফলে যে ভদ্রমহিলা বাস থেকে নামবে, ওনার শাড়ি আটকে পড়ে বাসের দরজার কোনো একটা কিছুর সাথে।
এদিকে ড্রাইভারের যেহেতু খেয়াল পেছনের গাড়ির দিকে (যে তাকে কিছুতেই আগে যেতে দেওয়া যাবে না। তাই বাস টান দেয়)। তাই ড্রাইভার আর মহিলার দিকে খেয়ালি করেনি। মহিলাকে নিয়ে বাস কয়েক হাত সামনে চলে যায়। যেহেতু মহিলার শাড়ি বাসের দরজার সাথে আটকে ছিল। তাই মহিলা চিৎকার করছিল আর বাসের সাথে হেঁটে হেঁটে কয়েক হাত চলে আসে। আলহামদুলিল্লাহ, মহিলা চাকার নিচে পড়ে নাই। কিন্তু মহিলার হাসবেন্ড/ভাই/আত্মীয় কে হবে আমি সিওর না। তিনি আরেকজনকে নিয়ে বাসে উঠে ড্রাইভারকে গালাগাল দিতে থাকে মারমুখি ভঙ্গিতে।
ড্রাইভার নিজের ভুল স্বীকার না করে ওনার সাথে একই ভাবে মারমুখি ভঙ্গিতে কথা বলতে থাকে। তখন ওই লোকের মেজাজ খারাপ হয়ে যায় আর ড্রাইভারের গায়ে হাত তুলে বসে। ড্রাইভারও কম যায় না। পানির বোতল নিয়ে সেই লোককে মারতে আসে। সাথে সাথে বাসের পরিবেশ গরম হয়ে যায়। কয়েকজন মিলে ড্রাইভার আর হেল্পারকে মারতে থাকে। ড্রাইভার আর হেল্পারও তাদের মারার চেষ্টা করে। কিন্তু ৬-৭ জনের কাছে ড্রাইভার আর হেল্পার পেরে ওঠে না।
আমার পেছনে একজন বয়স্ক মুরুব্বি বলছিল, ভাই ছাড়িয়ে দেন এদের। কিন্তু সামনে যাব কিভাবে? যেভাবে তারা কিল-ঘুসি দিচ্ছে একপক্ষ আরেক পক্ষকে। এর পরে আমার একটা জিনিসই মনে আছে। ড্রাইভার তাদের সাথে না পেরে মার খেয়ে ২ সেকেন্ড সে লোকের দিকে তাকালো। আর গিয়ার শিফট করে জোরে গাড়ি টান দিলো। বাসের পেছনে মানুষ তখন অনেক চিৎকার করছিল। মানুষ বার বার বাস থামানোর কথা বলছিল। (আমি ভেবেছিলাম ড্রাইভার হয়তো চাচ্ছে যে এই লোককে বাস থেকে নামতে দিবে না। বাট নো, আই ওয়াজ রং)।
ড্রাইভারের মাথা তখন গরম। ড্রাইভার বাস নামিয়ে দেয় সোজা খালের মধ্যে। বাস পানিতে পড়ার সাথে সাথে আমি বুঝতে পারছিলাম না কী করবো। আমার পাশের ব্যক্তি আমার মাথার ওপরে এসে পড়ে আর আমার মাথা কিসের সাথে যেন বাড়ি খায়। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আমি বাড়ি খাই। তখন ইমিডিয়েট ব্যথা না করলেও এখন প্রচন্ড ব্যথা করছে। আমি পানির নিচে তলিয়ে গেছিলাম। অন্ধকার লাগছিল। উপরে উঠে আসার কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছিলাম না।
বেশ কিছুক্ষণ পানির নিচে থাকার পর আমি আমার মাথা ওপরে তুলতে সক্ষম হই। পরে জানালা দিয়ে কোনো রকমে মাথা আর হাতটা বের করলে একজন পাঞ্জাবি পরা ভদ্রলোক খুব সম্ভবত মাদ্রাসার কোনো ছেলে হবে। সে আমাকে টেনে বাসের ভেতর থেকে বের করে। এই হচ্ছে পুরা ঘটনা।’’
এসইউ/জেআইএম