যন্ত্রণাদায়ক শৈশব, কথা ফুটছে দেরিতে

0
1


রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া যৌনপল্লিতে প্রায় দেড় হাজার যৌনকর্মী রয়েছেন। তাদের শিশুসন্তান রয়েছে ৬০০’র মতো। চরম বৈষম্য, অনাদর-অবহেলা ও নির্যাতনে বড় হয় এই শিশুরা। শিক্ষা থেকে বঞ্চিত অনেক শিশু জড়িয়ে পড়ে মাদকে, নয়তো মায়ের পেশায়। যৌনপল্লির শিশুদের সমস্যা ও দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ইয়াসির আরাফাত রিপনের চার পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ থাকছে প্রথমটি।

জন্মদাতা বাবার পরিচয় জানে না ওরা। মা ব্যস্ত থাকেন খদ্দেরের সঙ্গে। শিশুসন্তানকে তেমন সময় দিতে পারেন না তিনি। বাবা-মায়ের আদর-ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত শিশুদের সময় কাটে মোবাইল ও টেলিভিশন দেখে। প্রতিনিয়ত বকাঝকা ও শারীরিক আঘাতে কাটে শৈশব। মায়ের পাশে অপরিচিত পুরুষদের দেখে মেজাজ খিটখিটে থাকে শিশুদের।

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া যৌনপল্লির এই শিশুরা চরম শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণাদায়ক শৈশব কাটাচ্ছে। মানবসৃষ্ট বৈষম্যের কারণে সুস্থ সামাজিকীকরণ ও মানসিক বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে তাদের। বেড়ে উঠছে নানা ধরনের বৈকল্য ও স্বাস্থ্যগত সমস্যা নিয়ে। এতে দেরিতে কথা বলছে শিশুরা। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা। জাগো নিউজের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এসব চিত্র।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মস্তিষ্কের বিকাশ নির্ভর করে পরিবেশ ও শিশুর সঙ্গে ভাবের আদান-প্রদানের ওপর। শিশুরা দেখে এবং শুনে শিখে থাকে।

মানসিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও সমাজবিদরা বলছেন, পরিবার থেকেও যাদের বিচ্ছিন্ন রাখা হয় তাদের ক্ষেত্রে দু-একটি শিশু এমনটি হতে পারে। তবে বেশিরভাগ শিশুর ক্ষেত্রে দেরিতে কথা বলাটা উদ্বেগের। এটি নিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রের ভূমিকার পাশাপাশি সচেতনতা জরুরি।

স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেরিতে কথা বলা শিশুর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বাড়ছে বাবা-মায়ের উদ্বেগ।

একটি শিশু তার জন্মের চার-ছয় মাস বয়সের মাঝে আধো আধো বোলে মা, বা, উ, আ, ইত্যাদি ধ্বনি উচ্চারণ করা শুরু করে। নয় থেকে ১৮ মাস বয়সের মধ্যে প্রথম অর্থবোধক শব্দ বলা শুরু করে এবং মোটামুটি আট থেকে দশটি অর্থবোধক শব্দ বলতে পারে। শিশুর যখন ২৪ মাস বা দুই বছর বয়স তখন ৫০টির মতো শব্দ বলতে পারে।

সোসাইটি অব স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্টের (এসএসএলটি) সভাপতি ফিদা আল-শামসের তথ্যমতে, বিকাশের ধাপ অনুযায়ী একটি শিশু তার জন্মের চার-ছয় মাস বয়সের মাঝে আধো আধো বোলে মা, বা, উ, আ, ইত্যাদি ধ্বনি উচ্চারণ করা শুরু করে। নয় থেকে ১৮ মাস বয়সের মধ্যে প্রথম অর্থবোধক শব্দ বলা শুরু করে এবং মোটামুটি আট থেকে দশটি অর্থবোধক শব্দ বলতে পারে। শিশুর যখন ২৪ মাস বা দুই বছর বয়স তখন ৫০টির মতো শব্দ বলতে পারে। এর মধ্যেই শিশু দুই শব্দবিশিষ্ট ছোট ছোট বাক্য ব্যবহার করা শুরু করে।

এক্ষেত্রে মেয়ে শিশুর তুলনায় ছেলে শিশুদের কথা বলায় একটু সময় লাগে। তাছাড়া নানা কারণেও এমনটা হতে পারে। যৌনপল্লির শিশুদের কথা বলতে দ্বিগুণ সময় বা কোনো কোনো শিশুর ক্ষেত্রে তার চেয়ে বেশি সময় লাগছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে তাদের মানসিক বিকাশ।

এমনই এক ছেলে নিয়ে দৌলতদিয়ার মেন্টাল গলিতে থাকেন এক মা। ছেলের বয়স সাড়ে তিন বছর হলেও এখনও কথা বলতে পারে না। কয়েকদিন আগে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান ছেলেকে, দেখান চিকিৎসক। শিশুটির অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার (এএসডি) রোগ না থাকলেও বাড়তি সময় দেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসক।

শিশুটির মা জাগো নিউজকে বলেন, ‘দেড় বছরের শিশুরা কথা বলতে পারে, এটা মা-চাচিদের কাছে শুনেছি। এখন আমার ছেলের বয়স সাড়ে তিন বছর হলেও কথা বলছে না। প্রথম দিকে এটা নিয়ে না ভাবলেও এখন দিন যত যাচ্ছে টেনশন তত বাড়ছে। ছেলে টিভি-মোবাইল ফোনের প্রতি আসক্ত। আমি কথা বললে মাথা নাড়ে। কিন্তু কথা বলে না আমার ছেলে।’

যৌনপল্লির আলেহার গলিতে বসবাসরত আরেক মায়ের মেয়েশিশুরও একই অবস্থা। পৌনে তিন বছর হলেও এখনো কথা বলে না শিশুটি। তার মা স্থানীয় কবিরাজের কাছে নিয়ে কয়েক দফা ঝাড়ফুঁক করিয়েছেন, নিয়েছেন তাবিজ। তাতে বিন্দুমাত্র কাজ হয়নি।

শিশুটির মা বলেন, ‘চেষ্টা করছি মেয়ের ভালো চিকিৎসা করানোর। কয়েকদিন দেখবো, প্রয়োজনে শহরের ভালো চিকিৎসকের পরামর্শ নেবো।’

‘স্পিচ থেরাপির মাধ্যমে বা কানের সংক্রমণের নিরাময় বা শ্রবণ সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে এটা দূর করা সম্ভব। আবার নানা কারণে অভিভাবকরা শিশুদের কম সময় দিয়ে থাকেন। এখানে কিন্তু শিশু দেখে শেখে, অনুকরণ করতে করতে শেখে। তাই শিশুদের সঙ্গে ভাবের আদান-প্রদান করতে হবে পরিবারের সদস্যদের।’-শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আতিয়ার রহমান

শিশু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবারের সদস্যদের অস্বাভাবিক আচরণ, বংশগত সমস্যা, মস্তিষ্কের জন্মগত ত্রুটি, প্রসবকালীন জটিলতা, ভীষণ জ্বর, খিঁচুনি, জীবাণু সংক্রমণসহ বিভিন্ন কারণে শিশুর স্বাভাবিক কথা বলায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে। আবার সঠিক সময়ে জন্ম না নেওয়া, জন্মের সময় চিকিৎসাগত ত্রুটির কারণে কথা বলা বিলম্বিত হতে পারে। তাছাড়া সংক্রমণ, জিহ্বার আড়ষ্টতার কারণে অনেক উচ্চারণ সমস্যা, মানসিক প্রতিবন্ধকতা থাকলে শিশুদের কথা বলতে দেরি হয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আতিয়ার রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘শিশুদের কথা বলায় সমস্যা হতেই পারে। তবে সমস্যাটি যত কম বয়সে ধরা পড়বে, তত দ্রুত সমাধান করা সম্ভব। আড়াই বছর বয়সেও শিশু যদি সঠিকভাবে শব্দ বলতে না পারে তা হলে তার চিকিৎসকের সাহায্য প্রয়োজন। স্পিচ থেরাপির মাধ্যমে বা কানের সংক্রমণের নিরাময় বা শ্রবণ সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে এটা দূর করা সম্ভব। আবার নানা কারণে অভিভাবকরা শিশুদের কম সময় দেন। এখানে কিন্তু শিশু দেখে শেখে, অনুকরণ করতে করতে শেখে। তাই শিশুদের সঙ্গে ভাবের আদান-প্রদান করতে হবে পরিবারের সদস্যদের।’

‘শিশুরা মা-বাবা ও শিক্ষকদের সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করে। কিন্তু যৌনপল্লিতে সেই মায়ের কাছ থেকে একটি শিশু ভালো ব্যবহার পাচ্ছে না। খদ্দেরকে সেবা দিতে গিয়ে নিজ সন্তানকে সময় দিতে পারেন না মা। অনেক সময় যখন শাস্তি দেন, তখন শিশু সেটা স্বাভাবিক মনে করে এবং তা নিজের মধ্যে ধারণ করে রাখে। এতে বিরূপ প্রভাব তৈরি হয়।’- সুখপাখি সেন্টারের কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিন

বাধাগ্রস্ত হচ্ছে যৌনপল্লির শিশুর পূর্ণ মানসিক বিকাশ

পল্লির শিশুরা প্রতিনিয়ত বকাঝকা ও শারীরিক আঘাতের শিকার হচ্ছে। এটি তার মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত করছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) চলতি বছরের প্রথম তিন মাসের তথ্য বলছে, এ সময়ে ১৮৬ শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে।

মানবাধিকার সংগঠনটির গবেষণায় দেখা গেছে, শাস্তি, রাগ ও ভয়ে শিশুর মস্তিষ্কে এক ধরনের হরমোন নির্গত হয়। এটি শিশুর মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা ক্ষণিকের জন্য বাধাগ্রস্ত করে। এতে একটি শিশু অতি সাধারণ কথা বা তথ্যও মনে করতে পারে না। এ ধরনের ঘটনা বারবার ঘটলে তাদের মস্তিষ্কের গঠন ও আকৃতিতে স্থায়ী পরিবর্তনের শঙ্কা থাকে।

মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, শিশুরা খুবই আনন্দপ্রিয়। আনন্দময় পরিবেশ থেকেই তারা বেশি শিখে। শাস্তি, অপমান, ভীতিকর বা আনন্দহীন পরিবেশে শিশুরা স্বাভাবিক অবস্থা থেকে অনেক কম শিখে।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের শিশু-কিশোর ও পারিবারিক মনোরোগবিদ্যা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘শিশুকে শাস্তি দিলে যিনি শাস্তি দেন তার প্রতি শিশুর বিদ্বেষ বা বিরূপ মনোভাব তৈরি হয়। যেটার ছাপ দীর্ঘ হয়। বয়সকালেও এটায় সে প্রভাবিত হয়। শিশুর শারীরিক শাস্তি কাম্য নয়। শিশু কোনো অপরাধ করলে তার বোধের মাত্রায় নেমে অভিভাবক ও শিক্ষককে সেটা বোঝাতে হবে।’

দৌলতদিয়া যৌনপল্লিতে বিনা মূল্যে নানা বিভিন্ন সেবা দেয় বেসরকারি সংস্থা ‘সুখপাখি সেন্টার’। সংস্থাটির কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘শিশুরা মা-বাবা ও শিক্ষকদের সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করে। কিন্তু যৌনপল্লিতে সেই মায়ের কাছ থেকে একটি শিশুও ভালো ব্যবহার পাচ্ছে না। খদ্দেরকে সেবা দিতে গিয়ে নিজ সন্তানকে সময় দিতে পারেন না মা। অনেক সময় যখন শাস্তি দেন, তখন শিশু সেটা স্বাভাবিক মনে করে এবং তা নিজের মধ্যে ধারণ করে রাখে। এতে বিরূপ প্রভাব তৈরি হয়। অভিভাবক, প্রতিবেশী, স্বজনরা যদি শিশুদের শাস্তি দেওয়া বন্ধ করে স্নেহ-ভালোবাসা দেন, আদর করেন তাহলে শিশুর পূর্ণ মানসিক বিকাশ হবে।’

‘গর্ভকালীন থেকে মাকে চাপমুক্ত রাখতে হবে, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্র এর আয়োজন করবে। এটা না হলে শিশুর মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। আমরা চাইব একটি শিশুও যেন রাষ্ট্রের মৌলিক অধিকার থেকে বাদ না পড়ে।’- জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী

গর্ভাবস্থা থেকে প্রথম ৫ বছর শিশুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ

গর্ভাবস্থা থেকে প্রথম ৫ বছর শিশুর বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি শিশুর মানসিক বিকাশ মূলত মায়ের গর্ভ থেকেই শুরু হয়। গর্ভকালীন থেকে শিশুর মানসিক বিকাশ নিশ্চিতের সঙ্গে একজন মাকে মানসিক চাপমুক্ত ও হাসিখুশি রাখতে হবে। মা যদি কলহ কিংবা অশান্তিতে থাকে তবে শিশুর মানসিক বিকাশে এর প্রভাব পড়বে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘গর্ভকালীন থেকে মাকে চাপমুক্ত রাখতে হবে, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্র এর আয়োজন করবে। এটা না হলে শিশুর মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। আমরা চাইব একটি শিশুও যেন রাষ্ট্রের মৌলিক অধিকার থেকে বাদ না পড়ে।’

‘শিশুর মানসিক বিকাশে মা-বাবার ভালোবাসার কোনো বিকল্প নেই। পরিবারে মাকে নির্যাতিত হতে দেখলে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে শিশু। পরিবারে বন্ধুত্বপূর্ণ ও মধুর সম্পর্ক শিশুর মধ্যে পরম সুখ ও নিরাপত্তাবোধ জাগায়। পরিবারের সদস্যদের শিশুর মানসিক বিকাশে ভূমিকা রাখতে হবে। এখানে কোনো মনোবিজ্ঞানী বা মনোচিকিৎসক একা এ রোগ সারাতে পারবে না, দরকার পরিবারের সহযোগিতা।’ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ

মেজাজ হারাচ্ছে শিশুরা

দৌলতদিয়া যৌনপল্লির কবরস্থানের গলিতে থাকা এক মায়ের মেয়ের বয়স তিন বছরের কাছাকাছি। এখনও কথা বলছে না শিশুটি। বাসায় অপরিচিত পুরুষদের মায়ের কাছে আসতে দেখলেই তাকিয়ে থাকে। তখন তার মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। শিশুটির মা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার শেষ সম্বল মেয়ে। দিন যত যাচ্ছে মেয়ের খিটখিটে মেজাজ হচ্ছে। কথা না বললেও সে কথায় কথায় রাগ দেখাচ্ছে। এ কারণে মেয়েটাকে নিয়ে খুব টেনশনে থাকি। তার ভালো চিকিৎসা করাবো। এখন একটি মাদরাসায় দিয়েছি। অন্যদের সঙ্গে সে খেলছে, এটা দেখেও আনন্দ লাগে। ভালো বন্ধুদের সঙ্গে মিশলে সে ভালো হয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।’

যৌনপল্লিতে স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত সুখপাখি সেন্টারের স্বাস্থ্যকর্মী ইয়াসমিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘শিশুর জীবনের প্রথম বছরগুলোতে যা শেখে, যেভাবে শেখে তাই তাদের ভবিষ্যৎ বুদ্ধিমত্তা, ব্যক্তিত্ব, নৈতিক ও সামাজিক আচরণের ভিত্তি হয়। তার মানসিক বিকাশ মস্তিষ্কের বিকাশের ওপর নির্ভর করে। মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায় মস্তিষ্কে স্নায়ুকোষের (নিউরন) সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, জন্মের পর এ কোষের বৃদ্ধি হয় না। তাই মায়ের সুষম খাবার, শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা গর্ভস্থ শিশুর স্নায়ুকোষের সুষ্ঠু বৃদ্ধি নিশ্চিত করে। কিন্তু যৌনপল্লির শিশুরা সেটা পাচ্ছে না। বেসরকারি সংস্থাগুলো থেকে কিছু সহায়তা দেওয়া হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। এখানে কাজের সুযোগ আছে, তাদের মানবিক দিক থেকে বিচার করতে হবে। বেসরকারি সংস্থার মতো সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসতে হবে।’

শিশু-কিশোর ও পারিবারিক মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শিশুর মানসিক বিকাশে মা-বাবার ভালোবাসার কোনো বিকল্প নেই। পরিবারে মাকে নির্যাতিত হতে দেখলে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে শিশু। পরিবারে বন্ধুত্বপূর্ণ ও মধুর সম্পর্ক শিশুর মধ্যে পরম সুখ ও নিরাপত্তাবোধ জাগায়। পরিবারের সদস্যদের শিশুর মানসিক বিকাশে ভূমিকা রাখতে হবে। এখানে কোনো মনোবিজ্ঞানী বা মনোচিকিৎসক একা এ রোগ সারাতে পারবে না, দরকার পরিবারের সহযোগিতা।’

আগামীকাল পড়ুন দ্বিতীয় পর্ব: ঝুঁকিতে যৌনপল্লির শিশুরা, শিক্ষা নিয়ে শঙ্কা

আর/এমএমএআর/জেআইএম