বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশিদের জাতি সত্তার প্রতীক জাতীয় পতাকাটি এবার মুছে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যে লক্ষাধিক বাংলাদেশি-আমেরিকানদের ঐক্য ও ঐতিহ্যের প্রতীক ‘বাংলাটাউন’ নামফলকের একদিকে আমেরিকা ও বাংলাদেশি পতাকা এবং অন্যদিকে জাতীয় স্মৃতিসৌধ খচিত স্বাগতম বাংলাটাউন নামক দৃষ্টি নন্দন ফলক।
এ ঘটনায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নিন্দার ঝড় বইছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
২০২২ সালের ৪ অক্টোবর রাতের আধারে দুর্বৃত্তরা বাংলা টাউন সাইনটিকে কালি দিয়ে লেপন করে দেয়। তখন বিষয়টি ডেট্রয়েট সিটি পুলিশ প্রশাসনকে জানানো হলেও এর অগ্রগতি সম্পর্কে এখন পর্যন্ত কিছু জানা যায়নি।
বাংলাদেশের ঐতিহ্য বহন করা দৃষ্টিনন্দন ‘বাংলাটাউন’ ফলকটি সবদেশের মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আসছে। এটি মিশিগানে বেড়াতে আসা বাংলাদেশি পর্যটকদের কাছে খুবই আকর্ষণীয় স্পট।
এর আগে ২০১৫ সালে ৬ নভেম্বর মিশিগান স্টেটের তৎকালীন গভর্নর রিক স্নাইডার এই এলাকাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাটাউন স্বীকৃতি দেন।
বাংলাদেশের জাতীয় স্মৃতিসৌধ এবং আমেরিকা ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা খচিত বাংলাটাউন এই ফলকটি নির্মাণ করে বাংলাদেশি আমেরিকান পাবলিক অ্যাফেয়ার্স (বেপাক)। ২০১৭ সালের ২০ অক্টোবর ডেট্রয়েট সিটির মেয়র মাইক ডোগান আনুষ্ঠানিকভাবে ফলকের উদ্বোধন করেন।
জানা যায়, উদ্বোধনের আগে ফলকটি বানানো হয়েছিল লালনের একতারা ও দেশীয় রিকশার ছবি দিয়ে। কিন্তু এ নিয়ে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা হয়। শেষ পর্যন্ত দীর্ঘ আলোচনার পর বাংলা টাউবের ফলকে আমেরিকা ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ও জাতীয় স্মৃতিসৌধের ছবি দিয়ে ফলক উন্মোচন করা হয়।
ঘটনাটি প্রকাশ হওয়ার পর থেকে এ নিয়ে সরগরম সোশ্যাল মিডিয়া। মিশিগানে বসবাসরত বাংলাদেশি আমেরিকান অনেকেই বলছেন, এই পতাকাটি মুছে ফেলার ঘটনাটি ঘটেছে প্রায় ২ মাস আগে। কারো নজরে না আসায় এই বিষয়টি নিয়ে কোনো কথাও বলেননি।
ঘটনার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে কথা হয় বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ মিশিগান (বাম) এর সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল আহাদের সঙ্গে।
তিনি জানান, বাংলাটাউন নামের সাইনবোর্ডটি আমাদের গৌরব ও ঐতিহ্যের প্রতীক। দুই বছর আগেও কালো কালি দিয়ে ফলকটি নষ্ট করা হয়েছিল। এখন আবার আমাদের দেশের জাতীয় পতাকাটি একেবারে মুছে দেওয়া হয়েছে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বিদেশের মাটিতে দেশের জাতীয় পতাকাকে মুছে দিয়ে পুরো জাতিকে অবমাননা করছে। এই জঘন্য কাজটি যে করেছে, প্রকৃতপক্ষে সে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মতো গর্হিত কাজে জড়িত। এসবের বিচার হওয়ার একান্তই প্রয়োজন।
বেপাক এর প্রেসিডেন্ট ডা. সফিউল হাসান বলেন, আমি বিষয়টি জেনেছি তবে এই ব্যাপারে কোনো কথা বলতে চাই না, অন্যজনের দায়িত্ব বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান।
বেপাকের ট্রেজারার আব্দুল আজিজ খন্দকারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আমরা এই বিষয়টি নিয়ে অবগত নই।যিনি এটি দেখাশোনার দায়িত্বে, তিনিও আমাদের অবগতি করেননি। যেহেতু আমরা অনেক দূরের শহরে বাস করি, সংগঠনের অনেকেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক কারণে এবং সাংগঠনিক কারণেও সহযোগিতা করেন না। এখন আপনার (প্রতিবেদকের) মাধ্যমে জানতে পারছি। কীভাবে সাইনটি পুনঃসংস্কার করা যায়, সবার সাথে আলোচনা করে সমাধান করব।
হ্যামট্রামেক সিটি কাউন্সিলর ও বেপাকে ভাইস প্রেসিডেন্ট কামরুল হাসানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, বাংলা টাউনের সাইনটিতে বেপাক জড়িত থাকলেও এটা তো বাংলাদেশিদের জাতীয় পতাকা। সবাই মিলে কাজটা সম্পন্ন করলে অনেক ভালো ও সুন্দর হবে। বিগত সময়ে সাইনটিতে কালি লেপনে পুলিশ তদন্ত করেছে ঠিকই, রিপোর্টও পেয়েছি।
পতাকা মুছে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, দ্রুত সাইনটিতে পতাকা বসানো হবে এবং ফলকটি নিরাপত্তা বেষ্টনীতে আনার জন্য বাংলা টাউন সাইনটিকে লক সিস্টেম গ্লাসের ভেতরে রাখা হবে এমনকি সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা যায় কি না সে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
প্রবাসী সংগঠক শাহাদাত হোসেন মিন্টুর মতে, এটা আমেরিকান বা অন্যকোনো জাতির কাজ নয়। এটা আমাদের বাংলার নতুন মীরজাফর, ঘসেটি বেগম এদের উত্তরসূরিদের কাজ। এ ঘটনার ধিক্কার ও নিন্দা জানাই।
দুষ্কৃতকারীদের দ্বারা নষ্ট করা বাংলাটাউন সাইনবোর্ড দেখতে এসেছিলেন অনেকেই। তারা বলেন, একটি গণতান্ত্রিক দেশে এ ধরনের ঘটনা কখনোই কাম্য হতে পারে না। প্রবাসী বাংলাদেশিরা এ ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন প্রশাসনের কাছে।
এমআরএম/জেআইএম
স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা
পাঠানোর ঠিকানা –
[email protected]