সংবিধানে গণভোটের বিধান চাইলেন অ্যাটর্নি জেনারেল

0
1


সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী কেন অবৈধ হবে না, এ মর্মে জারি করা রুলের শুনানিতে সংবিধানে গণভোটের বিধান বহাল করতে হাইকোর্টের কাছে আর্জি জানিয়েছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।

তিনি বলেন, সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে গণভোটের বিধান ছিল। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের এ বিধান তুলে দেওয়া হয়েছিল, আমরা গণভোটের এ বিধানটি বহাল চাই। যারা নিশিরাতে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে এমপি হয়েছিলেন, তাদের ভোটে এ বিধান বাতিল হয়।

বুধবার (১৩ নভেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এসব বক্তব্য তুলে ধরেন অ্যাটর্নি জেনারেল।

শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সংবিধানের ৭(খ) অনুচ্ছেদের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। সংবিধানের মূলনীতি গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র নয়। আমরা সমাজতন্ত্র বাদ চাচ্ছি। শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানকে কেউ অস্বীকার করে না। জাতির পিতা নিয়ে সিরিয়াস বিতর্ক আছে। জাতি বিভক্ত। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তৈরি করা সংবিধানে জাতির পিতা ছিল না। এটি পঞ্চদশ সংশোধনীতে ঢোকানো হয়েছে। জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমন করা হয়েছে—তার বিরুদ্ধে কথা বললেই রাষ্ট্রদ্রোহ হবে। তাকে জাতির পিতা বলা সংবিধানের স্পিরিটের পরিপন্থি।

তিনি বলেন, সংবিধানের ৬ অনুচ্ছেদ বাতিল চাচ্ছি। এটার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি করা হয়েছে। বিশ্বের কোনো দেশে ভাষা দিয়ে জাতিসত্তা নির্ধারণ করা হয় না। ৭ (ক) ও ৭ (খ) অনুচ্ছেদের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করার জন্য, গণতন্ত্র ধ্বংস করার জন্য করা হয়েছে। অসৎ উদ্দেশে স্বৈরশাসনকে দীর্ঘায়িত করার জন্য করা হয়েছে। এটি আইনের শাসনের পরিপন্থি।

অনুচ্ছেদের ৮ এর বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে ধর্মনিরপেক্ষ শব্দটা রাখার দরকার নেই। এ দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ মুসলমান। আগে আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ্বাসের কথা ছিল। এটা যেভাবে আগে ছিল সেভাবে চাচ্ছি। আর ২ (ক) তেই বলা আছে, সব ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমান অধিকার ও সমমর্যাদা নিশ্চিত করবে। অনুচ্ছেদ ৯-এ বাঙালি জাতীয়তাবাদের কথা বলা হয়েছে। এটি সাংঘর্ষিক।

অ্যাটর্নি জেনারেল শুনানিতে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলে বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে, মৌলিক অধিকার ধ্বংস করা হয়েছে। কেন পঞ্চদশ সংশোধনী অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না? এটা সংবিধানের অংশ হিসেবে রাখা যাবে না। পঞ্চদশ সংশোধনী রাখা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ৯০’ এর গণঅভ্যুত্থান ও ২৪-এর জুলাই বিপ্লবের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল না হলে আবু সাঈদ, মুগ্ধসহ শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে না।

এর আগে গত ১৯ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত এ রুল জারি করেন।

২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির জনক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এই সংশোধনীর দ্বারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়। এ ছাড়া, জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা বিদ্যমান ৪৫-এর স্থলে ৫০ করা হয়।

এফএইচ/এমএএইচ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।