সাতক্ষীরায় আগাম জাতের শীতকালীন সবজির চারা রোপণ করা হলেও বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে তা পচে যায়। এজন্য এবার সবজির চারা রোপণে দ্বিগুণ খরচ করতে হচ্ছে কৃষকদের। অপরদিকে শীতকালীন এসব সবজির বাজারে উঠতেও দেরী হবে। ফলে জেলার কৃষকেরা লোকসানের পাশাপাশি শীতকালীন সবজি চাষের মৌসুম থেকে পিছিয়ে পড়েছেন।
সাতক্ষীরার মধ্যে অধিকাংশ সবজি উৎপাদন হয় সদর, দেবহাটা, তালা ও কলারোয়া উপেজলায়। উৎপাদিত সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ করা হয় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। তবে এ বছর টানা ভারী বৃষ্টিতে জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে এসব এলাকার ফসলের ক্ষেত। ফলে এখানকার কৃষকেরা দেরীতে সবজি উৎপাদন শুরু করেছেন।
তালা উপজেলার নগরঘাটা গ্রামের কৃষক জহুর আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘বর্ষার শেষদিকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় উন্নতমানের সবজির চারা উৎপাদন করে চাষিদের কাছে বিক্রি করি। তবে গত মাসে টানা বৃষ্টির কারণে প্রথম দফায় বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। তাতে ৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’
এই গ্রামের অন্যরাও বাঁধাকপি ও ফুলকপির বীজ বপন করেছিলেন। তবে বৃষ্টিতে প্রথম দফার বীজতলা ও রোপণ করা চারা নষ্ট হয়েছে। এজন্য আবার নতুন করে সবজি চাষের জন্য বীজতলা তৈরি করেছেন অনেকে। এতে মৌসুমের শুরুতে বাজার ধরতে না পারায় উৎপাদিত সবজির বাজারদর কম পাওয়ার শঙ্কায় তারা। এজন্য সরকারিভাবে সহযোগিতার দাবি কৃষকদের।
আরও পড়ুন
কৃষক আবুল হোসেন বলেন, ‘তিন বিঘা জমিতে ১ লাখ টাকা খরচ করে আগাম জাতের শীতকালীন সবজির চারা রোপণ করেছিলাম। গতমাসে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির কারণে সব চারা মরে যায়। আবার নতুন করে চারা লাগিয়েছি। কিন্তু এই সবজি যখন বাজারে উঠবে; তখন সবজির ভালো দাম পাবো না।’
বড় বাজারের ব্যবসায়ী মো. মোশারফ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ক্ষেতের সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। এতে সাতক্ষীরার স্থানীয় বাজারে সরবরাহ কমায় সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। নতুন করে শীতকালীন সবজি বাজারে না আসা পর্যন্ত দাম কমার সম্ভাবনা নেই।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘অতিবৃষ্টির কারণে শীতকালীন সবজি ও আবাদি জমির ফসলের চাষিরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের পরামর্শ, বীজ ও সার দিয়ে সহযোগিতা করা হবে। এরই মধ্যে তালিকা প্রণয়নের কাজ চলমান।’
তিনি বলেন, ‘এ বছর টানা বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলার ৪ হাজার হেক্টর জমির ফসল। যার আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১০ কোটি টাকারও বেশি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ৫ হাজার ৩৩২ জন। গত বছর জেলায় ৯ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে রবি ফসলের আবাদ হয়েছিল। জলাবদ্ধতার কারণে এ বছরের নভেম্বর মাস পর্যন্ত ২ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ করা হয়েছে। জমি থেকে পানি কমে গেলে চাষাবাদ আরও বাড়বে।’
আহসানুর রহমান রাজীব/এসইউ/এমএস