বছর ছয়েক আগে স্বামী মারা যান আসমা বেগমের। সহায়-সম্বল বলতে স্বামীর রেখে যাওয়া সরকারি জায়গায় একটি টিনের ঘর রয়েছে তার। খেয়ে না খেয়ে ওই ঘরেই কোনো মতে মাথা গুজে দিন পার করছিলেন। সম্প্রতি সেই ‘জায়গা দখলে’র উদ্দেশ্যে হামলা চালিয়ে ঘরটি ভেঙে
দিয়েছেন সালাহউদ্দিন কবির নামে এক ব্যক্তি। তিনি নিজেকে বিএনপি নেতা বলে দাবি করছেন।
এ ঘটনার পর আসমার অঝোরে কান্নার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। যা নিয়ে রীতিমতো সমালোচনার ঝড় বইছে। ঘটনাটি ফরিদপুরে নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নের রসুলপুর বাজার এলাকার।
জানা গেছে, অভাবের তাড়নায় বছর পঁচিশেক আগে মুন্সীগঞ্জ থেকে নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নের রসুলপুর বাজার এলাকায় এসে প্রথমে স্থানীয় প্রভাবশালী সালাহউদ্দিন কবিরের চাচাতো ভাইকে বিয়ে করেন আসমা। পরে আসমার সেই স্বামী মারা গেলে মফিজ মিয়া নামে আরেক ব্যক্তিকে বিয়ে করে রসুলপুর বাজার এলাকায় কুমার নদের পাড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জায়গায় দোচালা একটি টিনের ঘর তুলে বসবাস শুরু করেন। স্বামী মফিজ অন্যের জমিতে কাজ করে সংসার চালাতেন। কিন্তু ছয় বছর আগে মারা যান তিনি। এরপর থেকে আসমা অসহায় অবস্থায় ওই বাড়িতেই বসবাস করে আসছেন।
অসহায় এই নারী অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে এই জায়গায় ঘর তুলে বসবাস করে আসছি। এই ঘর ছাড়া আমার আর কোনো জায়গা-জমি নেই। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সালাহউদ্দিন জাল স্ট্যাম্প দেখিয়ে আমাকে জায়গা খালি করে দিতে বলেন। এতে রাজি না হওয়ায় সালাহউদ্দিন ও তার লোকজন আমার বাড়ি ভাঙচুর করে।
তিনি আরও বলেন, এখন বাড়ি না ছাড়লে আমাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে।
এসময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে আসমা বলেন, আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ, আমাকে আপনারা রোহিঙ্গাদের মতো একটু থাকার জায়গা দেন। আমি আর পারছি না। সালাহউদ্দিন প্রতি শুক্রবার আমার বাড়িতে এসে হুমকি দেন। তার যন্ত্রণায় খাওয়া-দাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। আমি নারী, কোথায় যাবো। আমাকে একটু থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।
স্থানীয়রা জানান, সালাহউদ্দীন কবির সাবেক এমপি শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরীর ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। তার কাছ থেকে সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন তিনি। আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে থেকে সম্পদের মালিকও হয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সুর পরিবর্তন হয়ে গেছে তার। তিনি এখন নিজেকে বিএনপি নেতা দাবি করছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন কবির বলেন, ওই জমি এবং ঘর আমার। ২০১৩ সালে দুই ব্যক্তির কাছ থেকে জায়গাটি আমি কিনেছিলাম। আসমার বাড়ি মুন্সিগঞ্জ। তিনি রসুলপুরেই থাকতেন। আমি তাকে বাড়িটা ভাড়া দিয়েছিলাম। ছয় মাস ধরে আসমাকে বাড়ি ছেড়ে দিতে বলে আসছি। কিন্তু তিনি বাড়ি ছাড়ছেন না। আমি ওখানে ভবন করবো। স্থানীয় কিছু আওয়ামী লীগের লোকজনের ইন্ধনে আসমা বাড়ি ছাড়ছেন না।
সরকারি জায়গা কীভাবে কিনলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রসুলপুর বাজারের সব জায়গায়ই সরকারি। বাজারে যতগুলো দোকান আছে, সব সরকারি জায়গার ওপর। এখানে এভাবে বেচাকেনা হয়।
আরেক প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন বলেন, আমি বিএনপি পরিবারের সন্তান। নিজেও বিএনপি করি। আওয়ামী লীগের আমলে স্থানীয় এমপির সঙ্গে তোলা আমার একটা ছবি নিয়ে সবাই এখন রাজনীতি করছে।
এ ব্যাপারে নগরকান্দা উপজেলার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাবিবুর রহমান বাবুল বলেন, সালাহউদ্দিন বিএনপি করেন না। তার সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই। তবে বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ অপরাধ করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নগরকান্দা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুম বিল্লাহ বলেন, বিধি মোতাবেক সরকারি খাস জায়গা লিজ দেওয়া হয়। তবে সরকারি জায়গা বেচাকেনার কোনো সুযোগ নেই।
এন কে বি নয়ন/জেডএইচ/জিকেএস