ওয়েলিংটনে টেস্ট ক্রিকেট যেন সাজিয়ে বসেছিল তার আকর্ষণের সকল পসরা। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ১ রানে হারিয়েছে নিউজিল্যান্ড। দ্বিতীয় ইনিংসে ২৫৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ২৫৬ রানে থামে ইংলিশরা। চতুর্থবারের মতো ফলোঅনে পড়েও ম্যাচ জয়ের কীর্তি দেখেছে ক্রিকেট বিশ্ব। আর, ৩০ বছর পর ১ রানে টেস্ট হারের ঘটনায় আবারও এই ফরম্যাটের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের দরকার ছিল ২৫৮ রানের। শেষদিনে শুরু থেকেই ইংলিশদের চেপে ধরে কিউইরা। স্বাগতিকদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সামনে একে একে ফিরে যায় ইংলিশ ব্যাটাররা। ৮০ রানের মাথায় ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর জো রুট ও বেন স্টোকসের প্রতিরোধে জয়ের আশা জাগিয়ে তোলে ইংলিশরা। কিন্তু, ১২১ রানের জুটি ভেঙে যায় অধিনায়ক স্টোকসের বিদায়ে। একপ্রান্ত আগলে রেখে স্রোতের বিপরীতে লড়াই চালিয়ে যাওয়া জো রুটও দুই ওভার পরেই বিদায় নিলে ম্যাচের পাল্লা হেলে পড়ে কিউইদের দিকে। ১১৩ বল খেলে ৯৫ রানে ওয়েগনারের শিকার হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান রুট।
২১৫ রানের মাথায় আউট হন স্টুয়ার্ট ব্রড। ইংল্যান্ডের আশার শেষ প্রতীক হয়ে এরপর লড়াই করে গেছেন শেষ স্বীকৃত ব্যাটার বেন ফোকস। জ্যাক লিচকে নিয়ে ফোকসের ৩৬ রানের জুটিতে ইংলিশরা পৌঁছে যায় জয়ের হাতছোঁয়া দূরত্বে। কিন্তু সাউদির বলে ওয়াগনারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফোকস যখন বিদায় নেন, জয়ের জন্য স্টোকসের দলের দরকার ছিল আর মাত্র ৭ রান। নিউজিল্যান্ডের ১ উইকেট।
জেমস অ্যান্ডারসন চার মেরে সেই সমীকরণ নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসেন। জয়ের জন্য ইংলিশদের যখন ২ রান দরকার, তখন নিল ওয়াগনারের লেগ স্ট্যাম্পের বাইরের বল ফ্লিক করতে গিয়ে উইকেটকিপার টম ব্লান্ডেলের হাতে ধরা পড়েন অ্যান্ডারসন। আর তাতেই এক রানের নাটকীয় জয় পায় কেন উইলিয়ামসনের দল।
প্রথম ইনিংসে ফলোঅনে পড়েও শেষ পর্যন্ত হাসিমুখে মাঠ ছেড়েছে কিউইরা। টেস্ট ইতিহাসে চতুর্থবারের মতো ঘটেছে এমন ঘটনা। আর দ্বিতীয়বারের মতো কোনো দল টেস্ট ম্যাচে জয় পেয়েছে এক রানের ব্যবধানে। এর ঠিক ৩০ বছর আগে উইন্ডিজ-অস্ট্রেলিয়া টেস্ট ম্যাচে প্রথমবার এমন ঘটনার সাক্ষী হয়েছিল সাদা পোশাকের ক্রিকেট। আর, সবশেষ সাত টেস্টের মধ্যে প্রথমবারের মতো হারের তেতো স্বাদ পেয়েছে ইংল্যান্ড। সিরিজটি তাই ড্র হলো ১-১’এ।
প্রথম ইনিংসে ভালো করতে না পারলেও দ্বিতীয় ইনিংসে বল হাতে জয়ের ভীত গড়েন নিল ওয়াগনার ও টিম সাউদি। দ্বিতীয় ইনিংসে ১৩২ রানের দুর্দান্ত ক্যাপ্টেন’স নক খেলে দলকে খাঁদের কিনারা থেকে লড়াইয়ের মঞ্চে নিয়ে আসা কেন উইলিয়ামসন হয়েছেন ম্যাচ সেরা। আর সিরিজ সেরার পুরস্কার গেছে হ্যারি ব্রুকের দখলে। প্রথম ইনিংসে ১৮৬ রানের প্রতাপশালী ইনিংস খেলা ব্রুক দ্বিতীয় ইনিংসে কোনো বল খেলার সুযোগ না পেয়েই হয়েছেন রানআউট। রুদ্ধশ্বাস থ্রিলারে ভাগ্যও যদি দোলে পেন্ডুলামের মতো, আশা-নিরাশার দোলাচলে ক্রিকেট বিশ্বকে ফেলতে টেস্টের যে আর কিছুই প্রয়োজন হয় না!
/এম ই