ওয়ার্ডেন রোডে তার ফ্ল্যাটের বাইরে একটি বোর্ড ঝোলানো থাকতো, সেখানে লেখা থাকতো ‘কিশোর কুমার থেকে সাবধান’। আর এ সতর্কবার্তাকে সত্য প্রমাণিত করতেই একবার এক প্রযোজকের হাত কামড়ে দিয়েছিলেন তিনি। ইনিই কিশোর কুমার, বাংলা সঙ্গীত ও সিনে ইন্ড্রাস্টির সবচেয়ে রসিক, রঙ্গীন আর গুণী মানুষ, যার কণ্ঠে ছিল জাদু। গায়কীর এক নিজস্ব ভঙ্গী তৈরী করে তিনি হয়ে ওঠে ছিলেন কিংবদন্তী। আজ এই কিংবদন্তীর ৯৩তম জন্মদিন।
‘ওপারে থাকবো আমি তুমি রইবে এপারে, শুধু আমার দু’চোখ ভরে দেখব তোমারে’, ‘আশা ছিল ভালোবাসা ছিল’, কিশোরের এমন সব হিট গানের কথা আজও গেঁথে আছে উপমাহাদেশের লাখো সঙ্গীতপ্রেমীর মনে।
কিশোর কুমার মানেই সুরের জাদু। সারা জীবন তিনি মাতিয়ে রেখেছেন তার গানের কথা আর সুর দিয়ে। তবে আজ যে কিশোর কুমারের সুরেলা কন্ঠের জাদুতে মুগ্ধ গোটা বিশ্ব, তার গলা মোটেও এত সুন্দর ছিল না।
কিশোর কুমারের মৃত্যুর পর দেয়া এক সাক্ষাতকারে তার ভাই অশোক কুমার বলেন, কিশোরের গলা ছিল খুবই কর্কশ ও মোটা। যখন কথা বলতো প্রতি কথায় একটা করে কাশি দিয়ে কথা শেষ করতো। কিন্তু চোখে গায়ক হওয়ার স্বপ্ন ছিলো তখন থেকেই।
ব্রিটিশ ভারতের সেন্ট্রাল প্রভিন্স বা আজকের মধ্যপ্রদেশের খান্ডোয়া অঞ্চলে ১৯২৯ সালের ৪ অগাস্ট সেখানকারই এক বাঙালি পরিবারে জন্ম কিশোর কুমারের। তার আসল নাম ছিলো আভাস কুমার গঙ্গোপাধ্যায়।
আভাস যখন ছোট তখন তার বড় ভাই অশোক কুমার হিন্দি সিনেমার প্রতিষ্ঠিত তারকা। তাই তার ভাই চাইতেন আভাসও তার ক্যারিয়ার শুরু করুক সিনেমার মাধ্যমে। কিন্তু তিনি ক্যারিয়ার শুরু করেন বম্বে টকিজের কোরাস শিল্পী হিসেবে। আর বিনোদন দুনিয়ায় পা রেখে ভাইয়ের মতো নিজের নামটিও বদলে ফেললেন তিনি। আভাস কুমার গঙ্গোপাধ্যায় থেকে হয়ে যান কিশোর কুমার। সে সময় কে এল সায়গল ছিলেন কিশোরের আইডল।
কিশোর কুমারের জীবনের সঙ্গে ৪ সংখ্যাটি ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। তার জন্মদিন ৪ অগাস্ট। তিনি চার ভাই-বোনের সর্বকনিষ্ঠ অর্থাৎ চতুর্থ জন। বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন চারবার। এমনকী চলচ্চিত্র জীবনে ঠিক চারটি বাংলা ছবিতেই অভিনয় করেছেন!
১৯৪৮ সালে প্রথম হিন্দি সিনেমা ‘জিদ্দি’তে প্লেব্যাক করেন কিশোর। তবে শুধু গানে নয়, ১৯৪৬-১৯৫৫ সাল পর্যন্ত বেশ কিছু সিনেমায়ও অভিনয় করেন কিংবদন্তী এ তারকা। পরে তিনি অভিনয় ছেড়ে আবারও মনোযোগ দেন গানে। শুধু পুরুষ কণ্ঠেই নয়, কিশোর কুমার নারী কণ্ঠেও গান গেয়েছেন। ‘আকে সিধি লগি দিল পে’ গানটি প্রথমে লতা মঙ্গেশকরের গাওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা কিশোর কুমারই গান।
ভারতবর্ষে পুরুষ প্লেব্যাক সিঙ্গার হিসেবে সবচেয়ে বেশি ফিল্ম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ড জেতার রেকর্ড তার ঝুলিতেই। মোট আটবার এ পুরস্কার জিতেন তিনি। ১৯৮৭ সালে মাত্র ৫৮ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সকলের প্রিয় কিংবদন্তী সঙ্গীত শিল্পী কিশোর কুমার। তবে আজও সিনেমাপ্রেমীদের কাছে একইভাবে সব সময়ই প্রাসঙ্গিক তিনি। তার অনন্য সৃষ্টির মাধ্যমে আজও তিনি বেঁচে আছেন আট থেকে আশি, সকলের হৃদয়ের মনিকোঠায়। শুভ জন্মদিন চির সবুজ কিশোর কুমার।
/এসএইচ