শেখ হাসিনার পরিবারের নামে বরাদ্দ প্লট বাতিলের রিটের আদেশ আজ

0
2


সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের নামে রাজধানীর পূর্বাচলে ৬০ কাঠা প্লট বরাদ্দ বাতিলসহ রাজউকের সব অবৈধ বরাদ্দ বাতিলের নির্দেশনা চেয়ে দায়ের করা রিটের বিষয়ে হাইকোর্টের আদেশ আজ।

বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) বিচারপতি ফাতেমা নজিব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজির সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে আদেশ দেওয়ার কথা রয়েছে।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মজিবুর রহমান জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে, বুধবার (২৩অক্টোবর) সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের নামে রাজধানীর পূর্বাচলে ৬০ কাঠা প্লট বরাদ্দ বাতিলসহ রাজউকের সব অবৈধ বরাদ্দ বাতিলের নির্দেশনা চেয়ে দায়ের করা রিট আবেদনের ওপর শুনানি শেষ করা হয়েছে। শুনানি শেষে এ বিষয়ে আদেশ দেওয়ার জন্য আজ বৃহস্পতিবার দিন ঠিক করেন হাইকোর্ট।

এ সংক্রান্ত বিষয়ে দায়ের করা রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। তারই ধারাবাহিকতায় মামলাটি আদেশের জন্য কার্যতালিকায় রয়েছে।

গত ১০ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের নামে পূর্বাচলে ৬০ কাঠা প্লট বরাদ্দ বাতিলসহ রাজউকের সব অবৈধ বরাদ্দ বাতিলের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়।

সুপ্রিম কোর্টের ১০ জন আইনজীবীর পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ মিসবাহ উদ্দীন এ রিট করেন। অন্য আইনজীবীরা হলেন- রেজাউল ইসলাম, আল রেজা মো. আমির, গোলাম কিবরিয়া, মোহাম্মদ হারুন, বেলায়েত হোসেন সোজা, কামরুল ইসলাম রিগান, হাসান মাহমুদ খান, শাহীনুর রহমান শাহীন এবং জিল্লুর রহমান।

রিটে এসব অবৈধ বরাদ্দের সঙ্গে জড়িত এবং সুবিধাভোগীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানানো হয়। এছাড়া এসব বরাদ্দের বিষয়ে তদন্তের জন্য হাইকোর্ট বিভাগের একজন সাবেক বিচারপতিকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়।

রিটে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, রাজউক চেয়ারম্যান, পূর্বাচল প্রকল্প পরিচালক, শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি এবং আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীকে বিবাদী করা হয়।

মিসবাহ উদ্দীন রিটের বিষয়ে জাগো নিউজকে বলেন, রাজউকের (রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) আলোচিত পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে স্বয়ং নিজের নামে প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন সদ্যসাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্লট নিয়েছেন তার ছেলে সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।

তিনি আরও বলেন, প্লট বরাদ্দ পাওয়াদের তালিকায় আরও আছেন- শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা ও তার দুই ছেলেমেয়ে। ২০২২ সালে তারা প্লট বুঝে পান। পরে বিষয়টি রাষ্ট্রীয় অতিগোপনীয় বিষয় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ফলে হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া খোদ রাজউকেরই অনেকে এ বিষয়ে তেমন কিছুই জানেন না। শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা প্রত্যেকে সর্বোচ্চ ১০ কাঠা আয়তনের প্লট নিয়েছেন। প্রস্তাবিত কূটনৈতিক জোনে সব প্লট একত্রে সন্নিবেশিত করার সুযোগ দেয় রাজউক।

বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের বরাত দিয়ে অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দীন জানান, নিজেকে অসহায় এবং নিঃস্ব বলে সভা-সমাবেশে রাজনৈতিক বক্তব্য দিলেও শেখ হাসিনা স্বয়ং নিজের নামে ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেন। পূর্বাচলে প্রস্তাবিত কূটনৈতিক জোন ২৭ নম্বর সেক্টরে ২০৩ নম্বর রোডে তার প্লট নম্বর ০০৯। ২০২২ সালের ৩ আগস্ট তার নামে বরাদ্দপত্র ইস্যু করে রাজউক। শেখ হাসিনার বাসভবন ধানমন্ডির ৫৪ সুধা সদনের ঠিকানায় বরাদ্দপত্র পাঠানো হয়।

রাজউকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রেকর্ডরুমে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের ফাইলগুলো বিশেষ চিহ্ন দিয়ে রাখা হয়েছে। হাসিনার প্লট বরাদ্দের ফাইলের ওপর বড় ইংরেজি হরফে লেখা রয়েছে ভি-৩, পাতা ১৪১। ফাইলে তার স্বাক্ষরযুক্ত আবেদনপত্রের কপি, বরাদ্দপত্র ও জাতীয় পরিচয়পত্রের কপিসহ অন্য কাগজপত্রও রয়েছে।

রাজউকের উপপরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-৩) নায়েব আলী শরীফের সই করা চূড়ান্ত বরাদ্দপত্রে লেখা হয়- ‘কাঠাপ্রতি ৩ লাখ টাকা হিসাবে ১০ কাঠার প্লটের মোট মূল্য ৩০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হলো।’ শেখ হাসিনা ছাড়াও ১০ কাঠা করে প্লট নেন তার ছেলে সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। তাদের প্লট নম্বর যথাক্রমে ০১৫ এবং ০১৭।

এর মধ্যে জয়ের নামে প্লটের বরাদ্দপত্র জারি করা হয় ২০২২ সালের ২৪ অক্টোবর। পরে ওই বছরের ১০ নভেম্বর প্লটের মালিকানা সংক্রান্ত রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হয়। এর আগে ২ নভেম্বর পুতুলের নামেও ১০ কাঠা প্লটের বরাদ্দপত্র ইস্যু করা হয়। এতে এস্টেট ও ভূমি-৩ শাখার তৎকালীন উপপরিচালক হাবিবুর রহমানের সই রয়েছে।

শুধু শেখ হাসিনা ও তার ছেলেমেয়ে নন; পূর্বাচল প্রকল্পে ১০ কাঠা করে প্লট নেন তার ছোট বোন শেখ রেহানা ও তার ছেলেমেয়েও। তাদের নামেও যথারীতি রাজউকের আইন ও বিধি অমান্য করে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে শুধু এই ৬টি প্লট নয়, এরকম অন্যান্য প্লটের বরাদ্দ চ্যালেঞ্জ করে এ রিট পিটিশন দায়ের করা হয়।

প্লট বরাদ্দ করা হয় ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নম্বর রোডের একই জায়গায়। সেখানে শেখ রেহানার প্লট নম্বর ০১৩, তার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির প্লট নম্বর ০১১ ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর প্লট নম্বর ০১৯।

এফএইচ/ইএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।