তাইওয়ান ইস্যুতে মুখোমুখি অবস্থানে চলে গেছে বিশ্বের দুই পরাশক্তি চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। চীন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, তাইওয়ানকে চীনের মূল ভূখণ্ডের সাথে যুক্ত করার বিরুদ্ধে যেকোনো পদক্ষেপ গুঁড়িয়ে দেয়া হবে।
অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রও হুমকি দিয়েছে, চীন যদি তাইওয়ানে হামলা চালায় তাহলে সামরিক হস্তক্ষেপ করবে মার্কিন বাহিনী। তবে চীনের সতর্কবাণী বা হুমকি অবজ্ঞা করে তাইওয়ান সফর অব্যাহত রেখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। গত সোমবার শুরু হওয়া ৪ দিনের এশিয়া সফরের অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার (২ আগস্ট) পেলোসি তাইপে পৌঁছান।
পেলোসি তাইওয়ান সফরের পরিকল্পনার কথা জানানোর পর থেকেই বেইজিং এ বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায়। এমনকি তাইওয়ানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের বিষয়টিকেও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছিল না। তাইওয়ানের আকাশ ও নৌ সীমানায় চীনের যুদ্ধবিমান ও রণতরীর মহড়া চলছে নিরন্তর।
সামরিক শক্তির বিবেচনায় চীনের তুলনায় অনেক পিছিয়ে তাইওয়ান। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছিলেন, চীন কোনোদিন তাইওয়ানে সশস্ত্র হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্র তাদেরকে প্রতিরক্ষা সহায়তা দেবে।
আর্মড ফোর্সেস ডট ইউ এর তথ্যসূত্র অনুসারে, চীনের সামরিক বাজেট ২৫২ বিলিয়ন ডলার ও তাইওয়ানের ১৩ বিলিয়ন ডলার। চীনের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১ দশমিক ৭ শতাংশ খরচ হয় সামরিক খাতে। তাইওয়ানের ক্ষেত্রে এটি ২ দশমিক ৩ শতাংশ। এছাড়া চীন ও তাইওয়ানের মোট জনসংখ্যা যথাক্রমে ১ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ও ২৩ দশমিক ৫৭ মিলিয়ন।
ক্রয় ক্ষমতার দিক দিয়ে তাইওয়ানের চেয়ে অনেক এগিয়ে চীন। ক্রয় ক্ষমতায় বিশ্বে চীনের অবস্থান সবার ওপরে। তাইওয়ান আছে ২১তম স্থানে। চীন ভূখণ্ডের পরিমাণ যেখানে ৯৫ লাখ ৯৬ হাজার ৯৬১ বর্গকিলোমিটার সেখানে তাইওয়ানের ভূখণ্ড ৩৫ হাজার ৯৮০ বর্গকিলোমিটার।
গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের সর্বশেষ তথ্য মতে, তাইওয়ানে সম্মুখ সারির সেনা আছে ২ লাখ ৯০ হাজার জন। বিপরীতে চীনের আছে অন্তত ২১ লাখ ৮৫ হাজার।
চীনের মোট এয়ারক্রাফটের সংখ্যা ৪ হাজার ৬৩০ ও তাইওয়ানের ৮১৪টি। এর মধ্যে আছে যুদ্ধবিমান, পরিবহন উড়োজাহাজ, হেলিকপ্টারসহ আরও কয়েক ধরনের উড়োজাহাজ। চীনের যুদ্ধবিমানের সংখ্যা ১ হাজার ৪৯টি ও তাইওয়ানের ১২৯। হেলিকপ্টারের সংখ্যা চীনের ১ হাজার ৩৫৫টি ও তাইওয়ানের ২৩৭টি।
চীনের ৫ হাজার ২৫০টি ট্যাংক আছে। বিপরীতে তাইওয়ানের ট্যাংকের সংখ্যা ১ হাজার ১১০। ট্যাংক শক্তিমত্তার দিক দিয়ে বিশ্বের চতুর্থ শক্তিশালী রাষ্ট্র চীন। তাইওয়ানের অবস্থান ২০-এ। চীন ও তাইওয়ানের সাঁজোয়া যানের সংখ্যা যথাক্রমে ৩৫ হাজার ও ৩ হাজার ৪৭২।
বিমান হামলা প্রতিরোধ ও দূরপাল্লার আক্রমণ চালানোর জন্য উভয় দেশেরই আছে বেশ কয়েক ধরনের কামান বা আর্টিলারি। তবে এ ক্ষেত্রে সুস্পষ্টভাবে এগিয়ে আছে চীন। এছাড়াও চীনের আছে ৩ হাজার ১৪০ মোবাইল রকেট প্রোজেক্টর (বহনযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপক), বিপরীতে তাইওয়ানের আছে ১২৬টি। নৌ-সক্ষমতার দিক থেকেও এগিয়ে চীন। দেশটির মোট যুদ্ধজাহাজের সংখ্যা ৭৪২। তাইওয়ানের যুদ্ধজাহাজ আছে ৯৬টি।
চীনের ২টি বিমানবাহী রণতরী থাকলেও তাইওয়ানের এ ধরনের কোনো সামরিক সক্ষমতা নেই। অন্যান্য জাহাজের মধ্যে আছে হেলো ক্যারিয়ার, ডুবোজাহাজ, ডেস্ট্রয়ার, ফ্রিগেট, করভেট ও পেট্রল ভেসেল।
আর্মড ফোর্সেস ডট ইউ এর তথ্য মতে, চীনের প্রায় ২৮০টি নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড আছে। এ যাবত চীন ৪৫ বার পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছে। এদিকে তাইওয়ানের হাতে এই মুহূর্তে কোনো ধরনের পারমাণবিক অস্ত্র নেই।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে ত্রাণবাহী সামরিক হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ৬ শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা নিহত
ইউএইচ/