তুরস্ক-সিরিয়ায় দুর্দশা যেন কাটছেই না। ভোগান্তিতে থাকা বাসিন্দাদের জন্য আতঙ্কের অপর নাম এখন আফটারশক। ঘনঘন কেঁপে উঠছে মাটি। নতুন করে ভেঙে পড়ছে স্থাপনা। ফলে এখনও যাদের ঘরবাড়ি অক্ষত আছে, তারাও বাড়ি ছেড়ে শরণার্থী শিবিরগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন। খবর আল জাজিরার।
আফটারশকের প্রভাবে তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তে অবস্থিত ‘আল-মালান্দ’ মসজিদের মিনার ও গম্বুজ ভেঙে পড়েছে। মসজিদটিতে মুয়াজ্জিন ও ইমামের দাঁড়ানোর জায়গাটুকুও নেই। ধ্বংসাবশেষের মধ্যেই প্রতিবেলার নামাজ আদায় করছেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।
ধসে পড়া মসজিদে নামাজ পড়তে এসে এক মুসল্লি বলেন, পুরোপুরি ধসে পড়েছে মসজিদের অবকাঠামো। কয়েক সপ্তাহ ধরে খোলা জায়গায় নামাজ আদায় করছি। সামনেই রমজান, দেড় হাজার মুসল্লি নামাজ পড়েন গ্রামের একমাত্র মসজিদে। পবিত্র মাসটির আগে সংস্কারের জন্য তাদের সহায়তায় তহবিল গঠন করা হচ্ছে।
তুরস্কের অবস্থা আরও ভয়াবহ। প্রায় প্রতিদিনই অনুভূত হচ্ছে ছোট থেকে মাঝারি আকারের আফটারশক। সেই আতঙ্কে বহুতল বাড়ি দূরের কথা, ভিটেমাটি ছাড়ছেন বেশিরভাগ বাসিন্দা। ঘর ছাড়া এসব মানুষ বলছেন, প্রতিবারই গভীর রাতে জোরালো কম্পন অনুভূত হয়। আতঙ্কে দু’চোখের পাতা এক করার উপায় নেই। সন্তানদের নিয়ে বহুতল ভবনে থাকার কথাই তো চিন্তা করতে পারি না। কারণ হুড়োহুড়ি করে নামতে গেলে পদদলিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে, এরদোগান প্রশাসনের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমান্যুয়েল ম্যাকরন। তিনি বলেন, এরদোগান প্রশাসনের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করছি। আগামী দিনগুলোয় তুরস্কের পাশেই থাকবে ফ্রান্স। উদ্ধারকাজ থেকে ত্রাণ তৎপরতা পর্যন্ত যা যা প্রয়োজন হয়, সাধ্য মতো দেয়ার চেষ্টা করবে ফরাসি প্রশাসন।
এদিকে, আশ্বাস দিয়েছে জাতিসংঘও। সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সিরিয়ায় সময়ের সাথে বাড়ছে ত্রাণ সরবরাহের পরিমাণ। খুব শিগগিরই দিনে কয়েকগুণ বাড়বে পণ্যবাহী ট্রাকের প্রবেশ।
ওসিএইচএ এর আঞ্চলিক সমন্বয়ক মুহান্নাদ হাদি বলেন, তুরস্কের তিনটি সীমান্ত ক্রসিং দিয়ে এখন পর্যন্ত ২৮০টি ত্রাণবাহী ট্রাক ঢুকেছে সিরিয়ায়। সপ্তাহের শেষ নাগাদ দিনে অন্তত ৪০টি ট্রাক পাঠানো সম্ভব হবে। প্রত্যাশা করছি, আগামী কয়েক সপ্তাহে দ্বিগুণ হবে এই সংখ্যা। সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ভূমিকম্পে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত। সেখানে- উদ্ধারকাজ শেষের পথে। এখন পুনর্বাসন, খাদ্য সংকটের সমাধান এবং চিকিৎসার প্রতি গুরুত্বারোপ করছে জাতিসংঘ।
৬ ফেব্রুয়ারির ভূমিকম্প এবং পরবর্তী আফটারশকে তুরস্ক-সিরিয়ায় ভেঙে পড়েছে এক লাখ ৬০ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি-স্থাপনা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ধ্বংসস্তূপ অপসারণের পর অবকাঠামো সংস্কারে কয়েক বছর সময় লাগবে।
এসজেড/