মধুমতি এনজিও’র বিরুদ্ধে শতকোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগ

0
3


স্টাফ করেসপনডেন্ট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ:

৩৫ হাজার গ্রাহকের শতকোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে মধুমতি নামে এনজিও’র বিরুদ্ধে। টাকা ফেরতের দাবিতে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে এনজিওটির কয়েক’শ কর্মী ও গ্রাহক।

রোববার (২ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এই মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়। পরে স্মারকলিপি দেয় তারা।

এর আগে শনিবার দুপুরে চাঁপাইনবাবঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনও করে ভুক্তভোগীরা।
সাবিরুল ইসলাম নামে একজন কর্মী অভিযোগ করে বলেন, আমি মাস্টার্স কমপ্লিট করে বেকার ছিলাম। কর্মসংস্থানের জন্য মধুমতি এনজিওতে চাকরি নিয়েছিলাম। এমডির প্রতারণার কারণে এখন আমাদের বেতন বন্ধ হয়ে গেছে। তার ওপর গ্রাহকদের চাপ। গ্রাহকরা এখন আমাদের জিম্মি করছে। বলেন, টাকার জন্য গ্রাহকেরা আমাকে মারধর করেছে।

সংস্থাটির রানীহাটি শাখার ম্যানেজার বাবুল হক জানান, এনজিও’র নামে সাধারণ মানুষের নিকট থেকে আমানত সংগ্রহ করে সেই টাকা মধুমতি গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছে। এছাড়া এমডি মাসুদ রানা তার পরিবারের বিভিন্ন জনের নামে অঢেল সম্পদ তৈরি করেছে।

মাসিদুল ইসলাম নামে একজন গ্রাহক জানান, এনজিরও টাকা দিয়ে এমডি মাসুদ রানা মধুমতি বিজিনেস গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করে। মধুমতি গ্রুপের অধীনে মধুমতি কো-আপারেটিভ সোসাইটি লিমিডেট, মধুমতি বিজিনেস ডেভেলপমেন্ট লিমিডেট, মধুমতি টয়লেট্রিজ লিমিডেট, মধুমতি হাট ডট কম নামে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান, মধুমতি মডেল স্কুল, মধুমতি এক্সপ্রেস সল্ট, মধুমতি অ্যানিমেল ন্যাচারাল প্লান্ট, মধুমতি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, মধুমতি ডিজিটাল সাইন, মধুমতি প্রিন্টিং প্রেস, মধুমতি ডেইরি ফার্ম, মধুমতি ওয়েল্ডিং সপ, মধুমতি অনলাইন টিভি, দৈনিক লাল সবুজের কণ্ঠ অনলাইন পোর্টাল ও মধুমতি এক্সপ্রেসের অধীনে ৬২টি ট্রাক দিয়ে পরিবহন ব্যবসা চলছিল। মুলত এসব প্রতিষ্ঠানে অর্থ লগ্নি ও নিজ পরিবারের সদস্যদের নামে বিপুল পরিমাণ স্থাবর সম্পত্তি ক্রয়ের জন্য মধুমতি এনজিও দেউলিয়া হয়ে গেছে।

গ্রাহকেরা অভিযোগ করে বলেন, টাকা আত্মসাতের জন্য পিস্তল নিয়ে গ্রেফতারের নাটক করে এমডি মাসুদ রানা এখন কারাগারে। কারাগার থেকে সে বের হতে চায় না। ৫ মাস অতিক্রান্ত হলেও এখন সে জামিন আবেদন করছে না। তাদের দাবি, সারা জীবনের জমাকৃত পুঁজি মধুমতি এনজিওতে লগ্নি করেছিলাম। এখন আমরা পথের ফকির।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১২ সালে সুদের কারবার শুরু করে মাসুদ রানা। ২০১৩ সালে সমবায় অধিদফতর থেকে ‘মধুমতি সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড’ ও ২০১৪ সালে সমাজ সেবা অধিদফতর থেকে ‘মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থা’ নামে নিবন্ধন নিয়ে ব্যাপকভাবে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করে। পরে অবৈধভাবে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগে ২০১৯ সালে সংস্থাটির নিবন্ধন বাতিলের সুপারিশ করে সমাজ সেবা অধিদফতর। এরপরও ৪৬ শাখা খুলে গ্রাহকদের নিকট থেকে আমানত সংগ্রহ করে আসছিল প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ রানা। গ্রাহকদের দাবি, ৩৫ হাজার গ্রাহকের নিকট থেকে প্রায় ১০৫ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করেছে। প্রতি এক লাখ টাকার বিপরীতে মাসে ১২০০ টাকা লভ্যাংশ দেয়ার ঘোষণা দিয়ে হাজার হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করেছে। যার সিংহভাগ অর্থই মধুমতি গ্রুপের ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছে। প্রতারণার অভিযোগ সম্পর্কে বক্তব্য জানতে মধুমতি গ্রুপের চেয়ারম্যান মাহমুদা খাতুন ও পরিচালক ফারুক হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খাঁন সাংবাদিকদের বলেন, এমআরএ’র অনুমোদন ছাড়া কোনো ধরনের ক্ষুদ্র ঋণের কার্যক্রম পরিচালনা অবৈধ। মধুমতির বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আদালতে মামলা চলমান আছে।

প্রসঙ্গত, গত ১৭ নভেম্বর অস্ত্রসহ পুলিশের হাতে আটক হয় মধুমতি এনজিও’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ রানা। বর্তমানে সে কারাগারে রয়েছে।

এটিএম/