একে তীরে এসে তরী ডুবা বলা চলে? জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচটি দ্বিতীয়ার্ধে কখনও বাংলাদেশের দিকে ঝুঁকে ছিল এমন বলার উপায় নেই। বরং ১৫৭ রানের অতিক্রমযোগ্য লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে আবারও ব্যর্থ টাইগার ব্যাটাররা। ১০ রানের গ্লানি নিয়েই ছাড়তে হলো মাঠ। অথচ ৬৭ রানে প্রতিপক্ষের ৬ উইকেট তুলে নিয়ে দারুণ কিছুর ইঙ্গিতই দিচ্ছিনের বোলাররা। অবশ্য রায়ান বার্ল-লুক জঙ্গুয়ের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে সে অর্ধেই ম্যাচে ফেরে জিম্বাবুয়ে।
সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে ১৫৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৬০ রানেই চার উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। সেখান থেকে আফিফ হোসেন- শেখ মেহেদী হাসান জুটির প্রচেষ্টায় জয়ের অনেকটা কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল বাংলাদেশ। শেষ ২ ওভারে দরকার ছিল ২৬ রানের। তবে সেটি আর হয়ে ওঠেনি। মেহেদীর বিদায়ের সাথে সাথে ফিকে হয়ে যায় জয়ের হাতছানি। শেষ দুই ওভারে টাইগাররা তুলতে পেরেছে মাত্র ১৫ রান। ফলে ১০ রানের গ্লানি নিয়েই ছাড়তে হলো মাঠ। সবচেয়ে বড় কথা, টি-টোয়েন্টিতে টাইগারদের ব্যাটিং দৈন্য আরও একবার চোখে আঙ্গুলে দিয়ে দেখিয়ে দিলো জিম্বাবুয়ে। সঠিক সময়ে বড় শট খেলতে না পারলে এ ফরম্যাটে এমন পরাজয় যে অহরহই ঘটবে আরও একবার সেটি প্রতিভাত হলো।
১৫৭ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে প্রথম ওভারেই ৯ রান তুলে দারুণ কিছুর ইঙ্গিত দেন লিটন। দ্বিতীয় ওভারে ভিক্টর নিয়িচুর প্রথম বলে চার মেরে সেই ধারাই অব্যাহত রাখেন লিটন। তবে পরের বলেই সাজঘরে ফিরতে হয় লিটনকে। ৬ বলে ১৩ রান করে ফেরেন লিটন।
লিটনের বিদায়ে অপর ওপেনার পারভেজ হোসাইন ইমনকে সঙ্গ দিতে মাঠে নামেন এনামুল হক বিজয়। তবে ইনিংসের চতুর্থ ও নিজের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই ভিক্টর নিয়াচি শিকার করেন ইমনকে। যাওয়ার আগে ৬ বলে মাত্র ২ রান করেন অভিষিক্ত ইমন।
পঞ্চম ওভারে ফের বাংলাদেশ শিবিরে আঘাত হানে জিম্বাবুয়ে। এবার স্পিনার মাধেভেরে বোল্ড করেন বিজয়কে। যাওয়ার আগে ১৩ বলে মাত্র ১৪ রান সংগ্রহ বিজয়ের। সিরিজে আরও একবার ব্যর্থ তিনি। ৩৪ রানে তিন উইকেট হারানোর পর নাজমুল হোসাইন শান্ত ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ মিলে প্রতিরোধের চেষ্টা করলেও ৬০ রানের মাথায় ভাঙে এই জুটি। ২০ বল খেলে মাত্র ১৬ রান করেন শান্ত।
নুরুল হাসানের চোটে দলে ফেরা রিয়াদ উইকেটে থিতু হলেও দলীয় ৯৯ ও ব্যক্তিগত ২৭ রানে সাজঘরে ফেরেন। ব্রাড ইভানসের করা পরের বলে ফেরেন অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেনও। এরপর আফিফ হোসেন ও মেহেদী হাসান ২৪ বলে ৩৪ রানের জুটি গড়ে আশা দেখান। শেষ ২ ওভারে দরকার ছিল ২৬ রান। তবে উনিশতম ওভারের তৃতীয় বলে মেহেদী ফিরলে স্বপ্নভঙ্গ হয় বাংলাদেশের। শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেট হারিয়ে টাইগারদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৪৬ রানে। আফিফ-মেহেদী জুটি ছাড়া গোটা ম্যাটে টি-টোয়েন্টি সুলভ ব্যাট করতে পারেনি টাইগাররা। এই সংস্করণের ব্যাটিং মেজাজটি যেন কিছুতেই ধরতে পারছে না বাংলাদেশের ব্যাটাররা।
এর আগে, প্রথম ইনিংসে ব্যাট করে শেষের ব্যাটারদের দৃঢ়তায় ১৫৬ রানের লড়াকু ইনিংস গড়ে জিম্বাবুয়ে। ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতে টাইগার বোলারদের তোপের মুখে পড়েন জিম্বাবুয়ের ব্যাটাররা। এক পর্যায়ে ১৩ ওভারে ৬৭ রান তুলতেই হারিয়ে বসে ৬ উইকেট। এরপরই পাল্টা প্রতিরোধ গড়েন জিম্বাবুয়ের দুই টেল এন্ডার রায়ার্ন বার্ল ও লুক জঙ্গুয়ে। মাত্র ৩১ বলে দুইজনে মিলে করেন ৭৯ রান। এর মধ্যে নাসুম আহমেদের এক ওভারেই রায়ার্ন বার্ল ৫ ছক্কা ও ১ চারে তোলেন ৩৪ রান। শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেট হারিয়ে জিম্বাবুয়ের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৫৬ রানে। ২৮ বলে বার্লের সংগ্রহ ৫৪ রান। আর জঙ্গুয়ে ২০ বলে করেন ৩৫ রান।
বাংলাদেশের পক্ষে হাসান মাহমুদ ও মেহেদী হাসান নেন দুটি করে উইকেট। ভুলে যাওয়ার মতো এক ম্যাচ খেলা নাসুম আহমেদ ১টি উইকেট নিলেও ২ ওভারে হজম করেছেন ৪০ রান। মাহমুদউল্লাহও ২ ওভারে ৮ রান দিয়ে এক উইকেট সংগ্রহ করেন।