পটুয়াখালীতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস খাদে, শিশুর মৃত্যু

0
3


স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, পটুয়াখালী:

ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কের পটুয়াখালীর সেতুর উত্তর পাড়ে যাত্রীবাহী বাস দুর্ঘটনায় রোজা বিনতে রিয়া মনি নামের ছয় বছরের এক শিশু কন্যা ঘটনাস্থলেই মারা গেছে। এ ঘটনায় মৃত রোজার মা জেসমিন বেগম (৩০), বড় ভাই জোনায়েদ (১৩) ও অপর যাত্রী মো. জাকির হোসেনকে (৩৮) আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।

বুধবার (৮ মার্চ) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে পটুয়াখালী ব্রিজের উত্তরপাড়ে যাত্রীবাহী ইকোনো পরিবহনের গাড়ীটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে গাড়িটির চালক এবং হেল্পারও রয়েছেন। তারা চিকিৎসাধীন বলে পটুয়াখালী সদর থানার ওসি মনিরুজ্জামান নিশ্চিত করেছেন।

অপর গুরুতর আহত রোজার পিতা মো. রিয়াজুল ইসলাম (৩৫), মাইন উদ্দিন (৩০), মুছা মিয়া (৫২), আজাহার মিয়া (৪৫), মো. সেলিম (৩৮), মো. ইউনুস আলী (৪২), দুখিরাম (৫০), মো. মামুন মিয়া (৩৭), খালেক (৩৮), কামরুজ্জামান গিয়াস (৩৫), মো. ইব্রাহীম (৩৪), নাজমুল হাসান (৩০), মোহাম্মদ মির্জা (৩৩) ও সুমন (২২) নামের ১৪ জন যাত্রীকে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের সকলের বাড়ি দেশের বিভিন্ন স্থানে।

আহতরা জানায়, ঢাকার আবদুল্লাহপুর থেকে মঙ্গলবার রাত ১০টায় ইকোনো পরিবহনের (ঢাকা-মেট্রো-ব-১৫-৯৪১৩) যাত্রীবাহী বাসটি যাত্রী নিয়ে কুয়াকাটার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। বুধবার ভোররাত সাড়ে ৪টার দিকে পটুয়াখালী সেতু অতিক্রমের আগেই উত্তর পাড়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উপর থেকে অন্তত ২৫ থেকে ৩০ ফুট নিচে পড়ে যায়। এ সময় বিকট শব্দে কয়েকটি পল্টি খেয়ে নিচে পড়ে যায়। বিকট শব্দ পেয়ে এলাকার লোকজন দুর্ঘটনা কবলিত গাড়ির লোকদের উদ্ধারে এগিয়ে আসেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধারে নামে।

এই দুর্ঘটনায় মৃত রোজার মা জেসমিন আক্তারের পা আটকে গিয়ে শরীর থেকে আলগা হয়ে যাওয়ায় তার বাম পা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কেটে শরীর থেকে বাদ দিতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসকরা। যে কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়ায় তাৎক্ষণিক তাকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।

পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোজার পিতা রিয়াজুলের সাথে থাকা মো. আমিনুল ইসলাম জানান, রিয়াজুল ও তার মামাতো ভাই কাওসার একত্রে ঢাকার একটি গার্মেন্টসে চাকরি করেন। এই দুর্ঘটনার কথা শুনে আমি পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় আমার বাড়ি থেকে মামাতো ভাইকে নিয়ে পটুয়াখালী আসি। রিয়াজুল ভাইদের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার মুক্তারামপুর গ্রামে। তিনি ঢাকা থেকে তার স্ত্রী ছেলে মেয়ে নিয়ে ওই বাসে কুয়াকাটায় ঘুরতে যাওয়ার পথে পটুয়াখালী ব্রিজের কাছে পৌঁছালে গাড়িটি উল্টে যায়। সেখানেই তার মেয়ে রোজার মৃত্যু হয়। আর তার স্ত্রীর পা আলাদা হয়ে গিয়েছে এবং তার ছেলের হাতের অবস্থাও ভালো না। রিয়াজুল ভাইয়ের স্ত্রীর পায়ের রক্তক্ষরণ বেশি হওয়ায় পটুয়াখালী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ঢাকা পাঠিয়েছে। সাথে তাদের ছেলেকেও ঢাকা পাঠানো হয়েছে।

আহত রফিকুল ইসলাম জানান, গাড়িটি ঢাকা থেকে আসার পথে বরিশালের আগেই অনেক যাত্রী নেমে যায়। বরিশালের পর বাসের ড্রাইভার গাড়িতে থাকা যাত্রীদের পিছনের ছিট ছেড়ে সামনের ছিটে এগিয়ে বসতে বলেন। আর বাসের ড্রাইভার সবাইকে বলে আজকে অন্য কোনো বাসের খানা নাই। এরপর থেকেই বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাতে থাকে। পটুয়াখালী ব্রিজে ওঠার সময় গাড়ি ডানে ঘুরাতে গিয়ে কন্ট্রোল না করতে পেরে আবার বামে ঘুরিয়ে দিলে সাথে সাথে গাড়িটি উল্টে যায়। এরপর কী হয়েছে তা আর মনে নেই।

পটুয়াখালী সদর থানার ওসি মো. মনিরুজ্জান জানান, পুলিশ তাদের রেকার দিয়ে দুর্ঘটনাকবলিত এলাকা থেকে বাসটি উদ্ধার করে তাদের হেফাজতে নিয়ে এসেছে। বাসের চালক ও হেলপার আহত অবস্থায় পটুয়াখালী মেডিকেলে
চিকিৎসা নিচ্ছেন। অপরদিকে মৃত রোজার সুরতহাল রিপোর্ট সম্পন্ন করে ময়নাতদন্তের জন্য পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে পরবর্তীতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম চলমান আছে।

ইউএইচ/