মণিপুরে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে হামলার চেষ্টা, ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম

0
0


ভারতের মণিপুরে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের দাবিতে রাজ্য সরকারকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন মেইতেই সম্প্রদায়ের সদস্যরা। এর আগে শনিবার (১৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের বাড়িতে একদল উত্তেজিত জনতা হামলার চেষ্টা চালানোর পর রাজ্যে ফের সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এসময় জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে নিরাপত্তা বাহিনী।

জিরিবাম জেলার বারাক নদী থেকে ছয়টি মরদেহ উদ্ধার হওয়ার পর এ উত্তেজনা ছড়ায় ভারতীয় রাজ্যটিতে। নিহতদের মধ্যে একটি আট মাসের শিশু এবং দুই নারী থাকায় জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভ আরও বৃদ্ধি পায়। তারা সরকারের বিরুদ্ধে অবহেলা এবং দায়িত্বহীনতার অভিযোগ তুলেছে।

এই ছয়জন গত সোমবার থেকে নিখোঁজ ছিলেন। ওইদিন নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ১০ জন সশস্ত্র কুকি সদস্য নিহত হন।

কোকোমি’র কঠোর হুঁশিয়ারি

মেইতেই অধিকার সংগঠন কো-অর্ডিনেটিং কমিটি অন মণিপুর ইন্টেগ্রিটি (কোকোমি)-এর মুখপাত্র খুরাইজাম অথোবা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, রাজ্যের সব বিধায়ককে একত্রিত হয়ে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা সরকারকে ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা দিয়েছি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান পরিচালনার জন্য। যদি তারা জনগণের সন্তুষ্টির জন্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করে, তবে এর ফলাফল তাদেরই ভোগ করতে হবে।

আরও পড়ুন>>

কিছু দিন আগে মণিপুরের ছয়টি পুলিশ স্টেশন এলাকায় সশস্ত্র বাহিনী (বিশেষ ক্ষমতা) আইন ফের জারি করা হয়েছে। কোকোমি অবিলম্বে এই আইন বাতিল এবং সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরুর দাবি জানিয়েছে। মুখপাত্র অথোবা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, তাদের দাবি পূরণ না হলে জনগণের প্রতিক্রিয়া আরও তীব্র হবে।

মন্ত্রী-বিধায়কদের বাড়িতে হামলা

এর আগে, শনিবার রাতে প্রতিবাদকারীরা রাজ্যের তিন মন্ত্রী ও ছয় বিধায়কের বাড়িতে হামলা চালায়। মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের জামাতা ও বিজেপি বিধায়ক আর কে ইমো সিংয়ের বাড়ি ভাঙচুর করা হয় এবং সম্পত্তিতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। একইভাবে পৌর প্রশাসন মন্ত্রী ওয়াই খেমচাঁদ এবং ভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রী এল সুশিন্দ্র সিংয়ের বাড়িতে হামলা হয়।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী সাপম রঞ্জনের বাড়িতেও হামলা চালানো হয়। প্রতিবাদকারীদের আশ্বস্ত করতে তিনি জানিয়েছেন, মন্ত্রিসভার বৈঠকে তাদের দাবি তুলবেন এবং প্রয়োজন হলে পদত্যাগ করবেন।

কারফিউ জারি, ইন্টারনেট সেবা বন্ধ

সহিংসতা মোকাবিলায় রাজ্য সরকার ইম্ফল পূর্ব, ইম্ফল পশ্চিম, বিষ্ণুপুর, থৌবাল এবং কাকচিংসহ পাঁচটি জেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করেছে। ইন্টারনেট সেবাও বন্ধ রাখা হয়েছে সাতটি জেলায়।

মুখ্য সচিব বিনিৎ জোশি দাবি করেছেন, ভুল তথ্য ছড়ানো এবং সহিংসতা আরও উসকে দেওয়া রোধ করতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

মণিপুরে মেইতেই ও কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে চলমান সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং প্রায় ৫০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। মেইতেইরা সংরক্ষিত উপজাতি তালিকাভুক্তির দাবি জানাচ্ছে, অন্যদিকে কুকি সম্প্রদায় পৃথক প্রশাসনিক অঞ্চল চায়।

বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজ্যজুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে, যা আরও সহিংসতার দিকে নিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সূত্র: এনডিটিভি
কেএএ/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।