মালদ্বীপ থেকে এক বছরে প্রায় পাঁচ হাজার অবৈধ প্রবাসীকে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তবে তাদের মধ্যে কোন দেশের কতজন তা উল্লেখ করা হয়নি।
বুধবার (১৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় এক সাক্ষাৎকারে দেশটির হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রী আলী ইহুসান বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ড. মোহাম্মদ মুইজ্জু মন্ত্রণালয়কে চারটি প্রধান কাজ দিয়েছেন– যার মধ্যে একটি হলো অবৈধ প্রবাসীদের স্থায়ী সমাধান করা।
ইহুসান বলেন, ‘অপারেশন কুরাঙ্গি’ – মালদ্বীপের সব প্রবাসীর বায়োমেট্রিক ডেটা সংগ্রহ করার একটি প্রোগ্রাম। যা এখন পর্যন্ত ১৩৮টি দ্বীপে করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি প্রবাসীর বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে সব প্রবাসীর বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ করার আশা করছেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, প্রশাসন অবৈধ প্রবাসীদের নিরসনের লক্ষ্যে বিশেষ নীতিমালা প্রণয়ন করেছে, যার মধ্যে এমন একটি ব্যবস্থাপ্রতিষ্ঠান, প্রবাসীরা ব্যবসায় জড়িত থাকলে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নিজ দেশে নির্বাসিত করা হবে। এই সিস্টেমের মাধ্যমে প্রায় পাঁচ হাজার প্রবাসীকে মালদ্বীপ থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে।
মালদ্বীপ অভিবাসন বিভাগের তথ্যমতে, অবৈধভাবে কর্মরত ও ব্যবসা পরিচালনার দায়ে গত বছরের ১৭ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত মোট পাঁচ হাজার অভিবাসীকে আটক করে তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। মালদ্বীপে গত বছরের নভেম্বর মাসে অভিযান শুরু হয়।
নাগরিকদের দাবির মুখে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু অবৈধ অভিবাসন সমস্যা সমাধানের জন্য এই উদ্যোগ নেন। এরই ধারাবাহিকতায় অবৈধ অভিবাসীদের আবাসস্থল ও খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিনই বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে দেশটির অভিবাসন বিভাগ।
এছাড়াও দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও অভিবাসন বিভাগের যৌথ অভিযানের ফলে অবৈধ ব্যবসা এবং খাদ্য উৎপাদন কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত বেশ কিছু অভিবাসী ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়। এসব অবৈধ ব্যবসায়ীদেরও দ্রুত সংশ্লিষ্ট দেশে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা চলছে বলে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে মালদ্বীপে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনের (শ্রম) কাউন্সেলর মো. সোহেল পারভেজ জানান, প্রতিটি ওয়ার্ক ভিসার নির্দিষ্ট কিছু শর্ত থাকে, যেমন আপনি যে কোম্পানির অধীনে কাজের উদ্দেশে মালদ্বীপে এসেছেন আপনাকে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিতেই কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, আপনি যদি সেই নিয়ম ভঙ্গ করেন তাহলে আপনাকে শাস্তির মুখে পড়তে হবে। কারণ আপনি এক জায়গার ভিসা নিয়ে এসে অন্য জায়গায় কাজ করা বেআইনি।
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, মালদ্বীপ থেকে আপনাকে যে সুনির্দিষ্ট জায়গার ভিসা দেওয়া হয়েছে সেখানেই আপনাকে কাজ করতে হবে। অন্যথায় আপনাকে মালদ্বীপের আইনে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে অভিহিত করা হবে।
মালদ্বীপে অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে প্রতিদিনই চলছে সাঁড়াশি অভিযান। মূলত বৈধ পাস বা পারমিট ছাড়া কাজ করা এবং ফ্রি ভিসায় এসে এক কোম্পানির হয়ে অন্য কোম্পানিতে কাজ করা এমন অভিবাসীদের বিরুদ্ধে এ অভিযান চলছে।
এতে প্রতিদিনই বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের অভিবাসীরা আটক হচ্ছে। এই অবস্থায় দেশটিতে থাকা এক লাখেরও বেশি প্রবাসী বাংলাদেশির মধ্যে যারা অবৈধভাবে বসবাস এবং ব্যবসা করছেন তাদের মধ্যে একধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে।
মালদ্বীপে ক্ষমতায় আসার পর থেকে অবৈধ অভিবাসীদের আটক করতে অভিযান চালাচ্ছে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জুর সরকার। আটকের পর অবৈধদের দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। এভাবে গত দশ মাসে চার হাজারেরও বেশি অভিবাসীকে ফেরত পাঠিয়েছে দেশটির অভিবাসন বিভাগ।
এমআরএম/এএসএম
স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা
পাঠানোর ঠিকানা –
[email protected]