বাংলাদেশের মুভমেন্ট থিয়েটারের অনিবার্য নাম ড. মুকিদ চৌধুরী। তিনি বাঙালি মুভমেন্ট থিয়েটার আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা, গবেষক, সম্পাদক ও লেখক। দেশে-বিদেশে মুভমেন্ট থিয়েটার নিয়ে প্রচুর কাজ করেছেন। বিশেষভাবে নাচের ওপর ব্যাপক কাজ করেছেন। তিনি ১৯৯১ সালে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে নাট্যচর্চা শুরু করেন। ১৯৯৬ সালে শায়েস্তাগঞ্জে গড়ে তোলেন নাট্যসংগঠন ‘মুভমেন্ট থিয়েটার’। নিরলস পরিশ্রমী এ নাট্যযোদ্ধা মঞ্চনাটকের বাক বদলে অপরিসীম ভূমিকা রেখেছেন। তার নাটকসমূহ সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং মূল্যায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তার নাট্য প্রযোজনা নিয়ে সমালোচকেরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন। বিভিন্ন পত্রপত্রিকা বা জার্নালে তা স্থান পেয়েছে। ত্রিশের বেশি বই আছে তার। নাটক ছাড়াও কাব্যনাট্য, নাট্যোপন্যাস, ইতিহাস এবং ছোটগল্প লিখেছেন তিনি। এ অসাধ্যকে সাধন করেছে ‘পরিচয়’ নামক সংকলনটি। তার নাটকসমগ্র এবং সাহিত্যজগত একত্রিত করার মতো দুঃসাহসিক কাজটি করেছেন কবি ও সম্পাদক ফখরুল হাসান।
‘পরিচয়’ নামক নাট্য সংকলন এবং মূল্যায়ন গ্রন্থটি তিনি উৎসর্গ করেছেন নাট্যকর্মীদের। বইটিতে তার নাট্যজগৎ, নাট্যোৎসব, একগুচ্ছ নতুন নাটক, বাংলা মুভমেন্ট থিয়েটারের শিল্পশৈলী, The Emergence of A New Art Style In Bengali Theatre, গ্রন্থালোচনা, নাট্যসম্ভার, কাব্যসম্ভার, নাট্যকাব্য, গদ্যসম্ভার এবং ইতিহাস সন্নিবেশিত হয়েছে। সংকলনে তাকে নিয়ে লিখেছেন লিটন আব্বাস, তাপস রায়, ফখরুল হাসান, সালাহ উদ্দিন মাহমুদ, ড. তানভীর আহমেদ সিডনী, জোবায়ের মিলন, মাহমুদ নোমান, রণজিৎ সরকার, ইফতেখার রসুল জর্জ, সাজু আহমেদ, ফারুক হোসেন শিহাব, অনিরুদ্ধ দিলওয়ার, অপূর্ব কুমার কুণ্ডু, রাকিব রুবেল, শব্দনীল, শামস সাইদ, সঞ্জয় রায়, অবিনাশ পুরকায়স্থ, রেজাউর রহমান রিজভী, কামাল উদ্দিন, মতিয়ার চৌধুরী এবং চপল মাহমুদ প্রমুখ সাহিত্যিক ও সমালোচকরা।
তার নাট্যজগতে স্থান পেয়েছে—অপ্রাকৃতিক প্রকৃতি, একটি আষাঢ়ে স্বপ্ন, অশোকানন্দ, রাজাবলি, গোমতীর উপাখ্যান, অচিন দ্বীপের উপাখ্যান, কর্ণপুরাণ, চম্পাবতী, জলের ভেতর জলের বিসর্জন, কতরঙ, তারকাঁটার ভাঁজে, যোদ্ধা, ফুলবউ, রণমধুর সাম্পান, চন্দ্রাবতী, কলকাতায় মির্জা গালিব, আটই ফাল্গুন, একমুঠো জন্মভূমি, বন্ধ্যা। তার এসব নাটকের বিষয়বস্তু নানামাত্রিক। তার নাটকে নারীমুক্তি, চিত্রাঙ্গদা-অর্জুনের অলিখিত প্রণয়োধ্যায়, অস্তিত্বসংকট, পুনরাবৃত্তি, নদীবর্তী জীবনালেখ্য, ইতিহাস, মহাভারতের এক অলিখিত অধ্যায়, হিন্দু-মুসলিম প্রেমকাহিনি, রূপকাশ্রয়, বহুমাত্রিক সংকট, বীরাঙ্গনার গৌরবগাথা, বিয়োগান্ত, প্রেম-অপ্রেম, হাস্যরস, ত্রিমুখী দ্বন্দ্ব, হৃদয়বিয়োগ, হৃদয়স্পর্শী, প্রাক্-মুক্তিযুদ্ধ এবং প্রতীকী প্রতিবাদ স্থান পেয়েছে।
বইটির সম্পাদক ফখরুল হাসান লিখেছেন, ‘নাটক প্রযোজনা দিয়ে ড. মুকিদ চৌধুরী বাংলা সাহিত্য জগতে প্রবেশ করেন। বোধহয় তাঁর অন্তরের নিরন্তর তাগাদা তাঁকে তাগিদ দিচ্ছিল নাটকের মধ্যে নিজেকে মেলে ধরার জন্যে। তাই তাঁর নাট্যপ্রকাশে নাট্যগুণ মিলিত হয়। তাঁর নাটকসমূহে এক সারস্বত দায়িত্ববোধের প্রকাশ পেয়েছে। নাট্যকারের প্রয়োজন নিরন্তর আত্মনির্মাণ ও শিল্পের বুনন। ড. মুকিদ চৌধুরীর সেই নির্মাণ দেখা যায়—একইসঙ্গে আরও দেখা যায়: লোকজ-ব্যবহার, নকশা এবং দেশীয় অনুষঙ্গ। আবার এসেছে, তাঁর স্বকালের ও স্বসমাজের আর্থসামাজিক সংকটের চেহারা এবং ঐতিহ্য। তাঁর রচনায় একটা বিবর্তনের রূপরেখাও দেখা যায় এবং তাঁর সৃজনশীলতাও, তার মধ্যে মানুষের অন্তর্লোকের জগৎও আছে, আবার প্রত্যক্ষ বাস্তব জগতের সমস্যাও রয়েছে। মানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করতেই তাঁর উত্তরণ। তাঁর নাট্যপ্রকাশের ভাষা ধারালো।’ (কিছু কথা)
বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনে একটি নতুন ধারা সৃষ্টি করেছেন তিনি। শুধু সৃষ্টি করেই ক্ষান্ত হননি। তাকে বেগবান করেছেন, প্রতিষ্ঠিত করেছেন। পরিণতির শেষ সীমানায় নিয়ে গেছেন। তার নাট্যরীতিতেও পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। তাই তো লিটন আব্বাস ‘নাট্যভাস্কর ড. মুকিদ চৌধুরীর নাটকে আর্কিটাইপ’ প্রবন্ধে বলেছেন, ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও স্বদেশজাত শিল্পভাবনার প্রেরণায় ইউরোপীয় নাট্যরীতির প্রচল ভেঙে, ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক বাংলা মুভমেন্ট থিয়েটার শিল্পশৈলীটি বাংলাদেশের প্রতিটি জেলার একটি করে তৃণমূল পর্যায়ের নাট্যদলের কাছে পৌঁছিয়ে দিয়ে নাটকের সাংগঠনিক শক্তি এবং সচেতনতা তৈরি করায় সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে। একইসঙ্গে জনগণের সঙ্গে সম্পর্কিত, জনগণের জন্য রচিত এবং জনগণের বিনোদনের জন্য পরিবেশিত বাংলা মুভমেন্ট থিয়েটার শিল্পশৈলীর সুকুমারশিল্প নাটকগুলোকে ক্রমাগত নাট্য-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বলিষ্ঠভাবে এগিয়ে নিয়েছে।’
নাটক অন্তঃপ্রাণ মানুষটি নিয়মিত নিরীক্ষা চালিয়েছেন। বাক বদলে সচেষ্ট থেকেছেন। নাটক নিয়ে ভেবেছেন। নাটকের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভেবেছেন। একটি সাক্ষাৎকারে ‘বাংলাদেশের থিয়েটার এখন কোথায় দাঁড়িয়ে আছে?’ এমন প্রশ্নে ড. মুকিদ চৌধুরী বলেছেন, ‘বাংলাদেশের থিয়েটার এখন পশ্চিমা থিয়েটারের চেয়ে ত্রিশ-চল্লিশ বছর পিছিয়ে আছে। আমরা তাকিয়ে থাকি পশ্চিমের দিকে। যার জন্যে ওদের থেকে আমরা অনেক পেছনে আছি। পশ্চিমের দিকে না তাকিয়ে বরং আমরা আমাদের ঐতিহ্যের দিকে তাকাতে পারি। আমাদের ইতিহাস এবং নাট্যপ্রয়োগ নিয়ে গবেষণা করতে পারি। পাশ্চাত্য তো ভারত উপমহাদেশ থেকে আঙ্গিক ও বিষয় ঋণ করে থিয়েটারের অবয়ব তৈরি করছে। আর আমরা ওদের নকল করে পেছনের পথে হাঁটছি। প্রাচ্য আর পাশ্চাত্যেও ফিউশন হওয়া দরকার। তা না হলে আমাদের থিয়েটার পেছনেই থেকে যাবে, সামনে আসতে পারবে না।’
সংগত কারণেই তিনি নিজের ঐতিহ্যের দিকে তাকিয়েছেন। পিছিয়ে পড়া নাট্যাঙ্গণকে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। নাটক নিয়ে সবিশেষ গবেষণা করছেন। কাউকে নকল না করে নিজস্ব বলয় সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন। এ জন্যই হয়তো জহিরুল হক শাকিল তার ‘অমানবিকতার বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদী কণ্ঠ’ প্রবন্ধে বলেছেন, ‘ড. মুকিদ চৌধুরী নাট্যপরিচর্যাকে তাঁর বাংলা মুভমেন্ট থিয়েটার শিল্পশৈলীতে শৈল্পিক প্রকাশের উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করেন। সেজন্যই তাঁর বাংলা মুভমেন্ট থিয়েটার শিল্পশৈলী ও নাট্যপরিচর্যাকে আলাদাভাবে বিচার করতে গেলে তাঁর প্রতি অবিচারই করা হবে। কারণ আবেগ ও নাট্যপরিচর্যায় ড. মুকিদ চৌধুরী পৌঁছে যান শিল্পের অভিমুখে; এইজন্যই বাংলা মুভমেন্ট থিয়েটার শিল্পশৈলীর সৃষ্টিকারক হিসেবে তাঁর নাম শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারিত হয় স্বদেশে-প্রবাসে।’
আরও পড়ুন
বিভিন্ন প্রবন্ধ-নিবন্ধ ছাড়াও বইটিতে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের কাটিং যুক্ত করা হয়েছে। যা গবেষকদের জন্য উপকারী হবে। এমনকি ড. মুকিদ চৌধুরীর কর্মযজ্ঞ সম্পর্কে প্রামাণিক হয়ে উঠেছে। এই তালিকায় দেখা যায়—জনকণ্ঠ, সমকাল, আমাদের সময়, সংবাদ প্রতিদিন, আজকালের খবর, যুগান্তর, বাংলাদেশ প্রতিদিন, সংবাদ, বাংলাদেশের খবর, মানবকণ্ঠ, ডেসটিনি, ইত্তেফাক, বাংলাদেশ সময়, ডাক প্রতিদিন, করতোয়া, ভোরের কাগজ, বর্তমান, আনন্দবাজার প্রত্রিকা, যায়যায়দিন, বিডিনিউজ, কালের কণ্ঠ, শেয়ার বিজ, খোলা কাগজ, ডেইলি স্টার, প্রতিদিনের সংবাদ, ডেইলি সান, ভোরের দর্পণ, ডেইলি মেসেঞ্জার, রাইজিংবিডি, তারুণ্যালোক, জাগো নিউজ, চ্যানেল আই অনলাইন, এনটিভি অনলাইন, সকালের আলো এবং নিউজ বাংলা প্রভৃতি।
মঞ্চের বাইরেও অবদান রেখেছেন মুকিদ চৌধুরী। তার শিল্পশৈলী বিমোহিত করেছে। ফলে রাকিব রুবেল তার ‘অশোকানন্দ: শিল্পশৈলীর নাট্যোপন্যাস’ প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘অলংকার ও শব্দের সংকলন ও যোজনে গভীরতা, বাক্যগঠনে সাবলীলতা লক্ষ করা যায়। ভাষা আড়ম্বর। ঐশ্বর্য, ঐতিহ্য, সযত্নে-সজ্জিত বর্ণনাও আছে। শব্দের প্রয়োগ ও মিলন-কৌশলে শিল্প-কৌলীন্য ধরা পড়ে। সংস্কৃত-শব্দের পাশাপাশি বাঙালির নিজস্ব শব্দের প্রয়োগ ঘটেছে। এককথায়, ভাষায় স্বাধীন গতিদান করা হয়েছে।’
যে কারণে বলা যেতেই পারে, ড. মুকিদ চৌধুরী বরাবর ভিন্নধারা ও চিন্তার তিরন্দাজ। তিনি মূলত শিল্পের আরণ্যক। তিনি প্রাচ্য-প্রতীচ্যের ভাব, রসের সংমিশ্রণে শিল্পকে দেশ, কাল ও গণ্ডির বাইরে এক নতুন ফ্রেমে উপস্থাপন করেছেন। স্তুতি নয়, শিল্পসফলতা ও অগ্রসর ভাবনা উপস্থাপন করেছেন তার নাট্যোপন্যাসে। এখানেই তার সফলতা। তার নাট্যভান্ডার সমৃদ্ধ হয়েছে দিন দিন। তার ধারাবাহিকতাও বজায় রেখেছেন। তার নিরলস পরিশ্রমে গতি খুঁজে পেয়েছেন নাট্যজনেরা। নাটক, কাব্যনাট্য ও নাট্যোপন্যাস ছাড়াও কবিতাচর্চা করেছেন ড. মুকিদ চৌধুরী। কবিতার জগতেও তিনি উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখেছেন। লিটন আব্বাস তার কাব্যসম্ভার সম্পর্কে বলেছেন, ‘প্রতিবাদী উচ্চারণের কাব্যসম্ভার হচ্ছে ‘তৃষ্ণার্তনাদ’, ‘বর্ষার্তনাদ’, ‘অগ্নিপাখি’, ‘দুরন্ত পথিক’, ‘গণশক্তির আর্তনাদ’ ও ‘ঈশ্বরার্তনাদ’। ড. মুকিদ চৌধুরীর বিপ্লবীচেতনায় সমৃদ্ধ এসব কবিতায় ভাষা-ব্যবহারের ক্ষেত্রেও বিপ্লব সুস্পষ্ট। তিনি প্রতীকের মাধ্যমে শোষকদের আক্রমণ করেছেন। ভীরুতা ও কাপুরুষতাকে কটাক্ষ করেছেন। এখানে গণশক্তি ও মৃত্যু হাত ধরে চলেছে। জগৎ ও সমাজের ভণ্ডামি, স্বার্থপরতা, নীতিহীনতা, দ্বন্দ্ব-বিদ্বেষ থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ পেয়েছে। এখানে আত্মবিশ্লেষণ, আত্মশনাক্তিকরণ ও বিশ্বপ্রেমের নিঃসঙ্কোচ প্রকাশ ঘটেছে। এসব কবিতায় সর্বহারাশ্রেণি, বিপ্লবী-জীবন-আবেগ ও জাগরণকামী চেতনার অভিব্যক্তি প্রাধান্য পেয়েছে। ব্যষ্টি-সমষ্টি, স্বদেশ-বিশ্বদেশ নিগূঢ় ঐক্যসূত্রে আন্দোলিত, তরঙ্গিত। মুক্তি হয়ে উঠেছে শব্দময়, শিল্পময়।’ ফলে সহজেই অনুমান করা যায় যে, তিনি বিপ্লব সাধন করেছেন কবিতায়ও। তার বিপ্লবী মনোভাব নাটক থেকে জাড়িত হয়েছে কবিতায়। শোষকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে তিনি কাব্য সাধনা করেছেন।
একই সঙ্গে ড. মুকিদ চৌধুরী বহুশ্রুত শিল্পী। শিল্পী যেমন জীবন থেকে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অর্জন করেন; তেমনই তিনি সাহিত্যের জগৎ থেকেও অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। এমনকি তার প্রভাবও রেখেছেন সাহিত্যে। তার রচনার ভাব ও বিষয় এমনটাই জানান দেয় আমাদের। তিনি ছোটগল্পেও হাত চালিয়েছেন। পাশ্চাত্য শিক্ষায় তিনি প্রভাবিত হয়েছেন। তবে তা ন্যায়সংগত ভাবে। তাই তো ড. মুকিদ চৌধুরীর ছোটগল্পের ভাববস্তু, বিষয়বস্তু, প্রতীক ও রূপকল্পের বিশ্লেষণে সাদৃশ্যসূত্রে অনেক সময় বিদেশি সাহিত্যের প্রভাব পড়েছে। যেমন ‘সেতু’, ‘পঞ্চম শতাব্দীর মতো’, ‘অপরাজিতা ও তার একটি পাতা’, ‘আর-একবার বাঁচার জন্য’, ‘সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই’ ইত্যাদি লেখায় তার প্রমাণ পাওয়া যায়। ফলে বলে নেওয়া যায়, বিদেশি সাহিত্য দ্বারা ড. মুকিদ চৌধুরী যদি নানাভাবে অনুপ্রাণিত হয়ে থাকেন, তাহলে তা তার পক্ষে কিছুই অগৌরবের কথা নয়। বরং বাংলা ছোটগল্পের পথবিকাশে বিদেশি অগ্রসূরিবৃন্দের ছোটগল্পের রূপরীতির সঙ্গে পরিচিত হওয়াই ড. মুকিদ চৌধুরীর অবশ্য-পালনীয় কৃত্য। তাই দেখা গেছে, তার প্রতিটি ছোটগল্পের শিল্পরূপে এক-একটি মৌলিক অভিনবত্ব রয়েছে।
বইয়ের ইতিহাস অংশে তিনি জার্মানি, জার্মান সাহিত্য, ফরাসি বিপ্লব, নেপোলিয়ন বোনাপার্ট, ইংল্যান্ড, ফারুক আহমদের জীবন ও ইতিহাস, নৃত্যকলা ও পৃথিবীর ইতিহাস নিয়ে আলোকপাত করেছেন। আধুনিক ইতিহাসের চর্চা ও ব্যাখ্যায় এক নূতন মাত্রা সংযোজন করেছেন ড. মুকিদ চৌধুরী। স্থান-কাল পরিপ্রেক্ষিতে, ঐতিহাসিক বিশ্লেষণে তার পারঙ্গমতা এ ক্ষেত্রে প্রশ্নাতীত। কেননা মানবসভ্যতার প্রতিটি ধাপে ছড়িয়ে থাকা যুদ্ধ ও বিপ্লবের ইতিহাস তিনি সন্নিবেশিত করেছেন। যেহেতু সেসবই উত্থান আর পতনের গল্প। কখনো তা রোমাঞ্চকর। আবার কখনোবা বিষাদময়। ইতিহাসের সেই পরম সত্যকেই তিনি সুচারুরূপে তুলে ধরেছেন ইতিহাসচর্চায়। তার ইতিহাসসংক্রান্ত বইগুলো তাই গবেষকদের আঁকর গ্রন্থ হিসেবে পরিগণিত হওয়ার দাবি রাখে।
ফলে অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, ড. মুকিদ চৌধুরী একটি আকাশ। সেই আকাশে জ্বলজ্বল করছে কতগুলো নক্ষত্র। ‘পরিচয়’ সংকলনগ্রন্থটি সেই নক্ষত্রের সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেবে। ফখরুল হাসানের এই মহৎ কর্মটি আলোর মুখ দেখায় বাংলা সাহিত্য সমৃদ্ধ হবে বলে আশা করি। একজন গুণীকে জাতির সামনে তুলে না ধরলে আসলে তাকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা যায় না। সবশেষে বলা যায়, ‘পরিচয়’ গ্রন্থটি স্বতন্ত্র, অভিনব, সরস, তাৎপর্যময় ও তথ্যপূর্ণ। এর গুরুত্ব সময়ের দাবির চেয়ে অনেক বেশি। তাই পাঠকের পুরোপুরি চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে বইটি। আমি তার এবং তার সাহিত্য জগতের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি এবং স্থায়িত্ব কামনা করছি।
বইয়ের নাম: পরিচয় (ড. মুকিদ চৌধুরীর নাটকসমূহ)
সম্পাদক: ফখরুল হাসান
প্রকাশক: আদিত্য প্রকাশ
প্রচ্ছদ: ধ্রুব এষ
প্রকাশকাল: আগস্ট ২০২৪
মূল্য: ১০০০ টাকা।
এসইউ/এমএস