সংস্কারের নামে সড়কে খোয়া ফেলে উধাও ঠিকাদার

0
2


খুলনার কয়রা উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৫ ও ৬নং কয়রা লঞ্চঘাট থেকে কয়রা শাকবাড়িয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ অভিমুখে সড়কটির সংস্কারের কাজ শুরু হয় ২০২২ সালে। তবে রাস্তা খোঁড়ার পর ইটের খোয়া ফেলে প্রায় আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে লাপাত্তা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ওই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী লোকজন।

উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে গ্রামীণ সড়ক পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় প্রায় ২ হাজার ৫২০ মিটার সড়ক দীর্ঘদিন সংষ্কার না করার কারণে এ সড়কে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়। এ পরিস্থিতিতে সড়কটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। খানাখন্দ সংস্কার করে সড়কটি নতুন করে কার্পেটিং করার জন্য বরাদ্দ হয় ৮১ লাখ ৯৪ হাজার ৭২ টাকা। কাজের দরপত্র পায় মেসার্স ‘জয় মা’ ট্রেডার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

২০২২ সালের মে মাসের প্রথম দিকে তারা কাজ শুরু করে। কাজের শুরুতে রাস্তা খুঁড়ে ইটের খোয়া ফেলার পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন কাজ ফেলে চলে যান। ২০২২ সালের আগস্ট মাসে কাজটি শেষ হওয়ার কথা ছিল। সেই সময়সীমা শেষ হওয়ার প্রায় আড়াই বছর পেরিয়ে গেলেও বাকি কাজ শেষ করার উদ্যোগ নেই ঠিকাদারের।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, আড়াই কিলোমিটার সড়কের মধ্যে অনুমানিক ২ কিলোমিটারের মতো সড়ক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সংস্কারের নামে খুঁড়ে কেবল খোয়া ফেলে রেখে দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে কাজ বন্ধ থাকার কারণে সেসব খোয়াও সরে গিয়ে রাস্তার বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই সেসব গর্তে পানি জমে থাকে। বিভিন্ন ধরনের যানবাহন ঝুঁকি নিয়েই সড়কটি দিয়ে চলছে। ভ্যান, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনের ব্রেক চাপলে চাকা পিছলে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।

৬নং কয়রা গ্রামের বাসিন্দা মো. আবুল হাসান বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি দিয়ে প্রতিনিয়ত আমাদের উপজেলা সদরে যেতে হয়। এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন স্কুল -কলেজে ও প্রাথমিকের শিশুরা যাতায়াত করে। সংস্কারের কাজ শুরু হওয়ায় এলাকাবাসী অনেক খুশি হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন রাস্তা মেরামতের কাজটি বন্ধ থাকায় গ্রামের লোকজনের চলাচলে অনেক অসুবিধা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, সংস্কারকাজ শুরুর আগে সড়ক দিয়ে চলাচল করতে পারতাম। এখনতো চলাই দায়। সমনে শুকনো মৌসুম, ধুলায় জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়বে। কাজ বন্ধ করে ঠিকাদার উধাও। আমরা জরুরি ভিত্তিতে রাস্তাটি মেরামতের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

সড়কের পাশে বসবাসকারী শাছুজ্জামান (সেলিম) বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটি সংষ্কারের নামে ঠিকাদারের লোকজন কাজ ফেলে চলে গেছে। বর্ষা মৌসুমে যেমন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয় তেমনি শুকনো মৌসুমেও ধুলায় অতিষ্ঠ হয়ে যেতে হয়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ১জয় মা’ ট্রেডার্সের স্বত্তাধিকারী সপন কুমার বলেন, আমার ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে কাজটা শেষ করা সম্ভাব হয়নি। প্রথমে কাজটি সাব কন্ট্রাক্টের মাধ্যমে দিয়েছিলাম। সে কিছু কাজ করে বিল তুলে দেশের বাইরে চলে গেছে। এখন চুক্তিমূল্য অনুযায়ী কাজের মেয়াদকাল শেষ হওয়ায় নতুন করে মেয়াদকাল বাড়াতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কাগজপত্র জমা দিয়েছি। ডিসেম্বর মাসের মধ্যে আমি কাজটি শেষ করবো।

কয়রা উপজেলা প্রকৌশলী মো. দারুল হুদা বলেন, চুক্তি অনুযায়ী ২০২২ সালের আগস্ট মাসে এই রাস্তার সংষ্কার কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ঠিকাদারের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। তার কাজ বাতিলের জন্য সুপারিশও করেছি। তবে এতদিন মূল ঠিকাদার অন্য একজনকে দিয়ে কাজ করছিলেন। এখন তিনি নিজে এসে কাজের সাইড দেখে গিয়েছেন এবং কাজের মেয়াদকাল বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেছেন। ডিসেম্বর মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

এফএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।