খেলাপি প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ সুবিধা, শাস্তির মুখে এবি ব্যাংক

0
1


ব্যাংকখাতের বিষফোড়া খেলাপি ঋণের বিষ ক্রমে বাড়ছে। বিগত সরকার নানান পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বললেও সমস্যার ন্যূনতম উপশম হয়নি। ঋণ বৃদ্ধির একই ধারা অব্যাহত রয়েছে নতুন সরকারের আমলেও। এদিকে খেলাপি ঋণ এখন দুই লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। ব্যাংকখাতের খেলাপি ঋণ উদ্বেগজনহারে বাড়লেও এখনো কিছু কর্মকর্তা এটিকে আড়াল করার চেষ্টা করছেন। খেলাপি হয়ে পড়া প্রতিষ্ঠানকেই ব্যাংকের পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে বিশেষ সুবিধা। এগুলোর একটি এবি ব্যাংক।

সম্প্রতি ব্যাংকটি প্যাসিফিক মটরস লিমিটেডের খেলাপি ঋণের তথ্য গোপন করে বিশেষ সুবিধা দিয়েছে। আর মিথ্যা তথ্য দেওয়ায় এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জরিমানার মুখে পড়েছে ব্যাংকটি।

ব্যাংক সূত্র জানায়, প্যাসিফিক মটরস লিমিটেড খেলাপি হওয়ার পরও তাদের গ্যারান্টি সুবিধা দিয়েছে এবি ব্যাংক পিএলসি, যা ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ (২০২৩ সংশোধিত) এর ধারা ২৭ ক (৩) এর বিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। একই ধারার ক্ষমতাবলে সম্প্রতি ব্যাংকটিকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

তাদের মাল ছাড়ানোর জন্য গ্যারান্টি সুবিধা দিয়েছি। শুধু কাস্টমসকে একটা গ্যারান্টি সুবিধা দেওয়া হয়েছিল হান্ডেড পার্সেন্ট ক্যাশ মার্জিনের বিপরীতে। টাকা ডিপোজিট রেখে কাস্টমসে গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে, এছাড়া তেমন কিছু না- এবি ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মাহমুদুল আলম

আরোপিত জরিমানার অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুকূলে দাগকাটা চেকের মাধ্যমে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। জরিমানার অর্থ দিতে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ব্যাংকে রাখা ব্যাংকটির হিসাব থেকে আদায় করা হবে বলেও জানায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি কমিশনার অব কাস্টমস ও কাস্টম হাউজ চট্টগ্রামকে সরবরাহ করা গ্যারান্টিটি মেয়াদপূর্তিতে রহিত করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে এবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আফজালের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি। এ নিয়ে মন্তব্যের জন্য তার হোয়াটসঅ্যাপ ও মোবাইল ফোনে প্রশ্ন দিয়ে এসএমএস করা হলেও উত্তর পাওয়া যায়নি।

কথা হয় ব্যাংকটির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মাহমুদুল আলমের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আসলে আমরা তেমন কোনো সুবিধা দেইনি প্যাসিফিক মটরসকে। তাদের কাছ থেকে শতভাগ ক্যাশ নিয়ে, তাদের মাল ছাড়ানোর জন্য গ্যারান্টি সুবিধা দিয়েছি। শুধু কাস্টমসকে একটা গ্যারান্টি সুবিধা দেওয়া হয়েছিল হান্ডেড পার্সেন্ট ক্যাশ মার্জিনের বিপরীতে। টাকা ডিপোজিট রেখে কাস্টমসে গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে, এছাড়া তেমন কিছু না। এখানে একটা মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে। আমরা সেটা আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানিয়েছি।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, চলতি বছরের জুন প্রান্তিক শেষে ব্যাংকখাতে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। এসময়ে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১৬ লাখ ৮৩ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। মোট বিতরণ করা ঋণের ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ খেলাপি।

গত ১৬ বছরের মধ্যে বিতরণ করা ঋণ ও খেলাপি ঋণের সর্বোচ্চ অনুপাত এটি। গত বছরের জুন পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। সে হিসাবে গত তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৯ হাজার ৯৬ কোটি টাকা।

ইএআর/এমএইচআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।