Site icon Amra Moulvibazari

জুলাই আন্দোলনে দৃষ্টিহীন মাহবুবের পাশে রইলেন না স্ত্রীও

জুলাই আন্দোলনে দৃষ্টিহীন মাহবুবের পাশে রইলেন না স্ত্রীও


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছররা গুলিতে দুই চোখের আলো হারানো মাহবুব আলমের পাশে শেষ পর্যন্ত স্ত্রীও আর রইলেন না। বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটিয়ে চলে গেছেন তিনি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া এলাকায় চোখে গুলিবিদ্ধ হন মাহবুব আলম। আঘাতে তার চোখের নার্ভ ছিঁড়ে গেছে। সেই সঙ্গে বাঁ চোখের পর্দাও ফেটে গেছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, আপাতত আর দেখতে পাবেন না তিনি। জার্মানি কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে চিকিৎসা সম্ভব। কিন্তু আর্থিক সংগতি না থাকায় সেদিকে আর পা বাড়ায়নি পরিবার। এমন অবস্থার মধ্য দিয়েই দিন পার হচ্ছিল মাহবুব আলমের। এরইমধ্যে তার স্ত্রী সংসার ছাড়েন। সবশেষ পারিবারিক সমঝোতার মাধ্যমেই বিচ্ছেদ ঘটান স্ত্রী।

মাহবুব আলম বলেন, আমার বিষয়টি মানবিক হওয়ার পাশাপাশি বাস্তবতাও রয়েছে। আমার স্ত্রী বাস্তবতার বিষয়টি চিন্তা করেই হয়ত চলে গেছেন। যেহেতু তিনি চলে গেছেন, দেনমোহর তার প্রাপ্য। পারিবারিকভাবে আলোচনার মাধ্যমেই দেনমোহরের টাকা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা তার অধিকার। অন্যথায় তার কাছে আমি ঋণী থাকতাম। তিনি সুখী হোক সেই দোয়া করি। এ বিষয়ে এর চেয়ে বেশি কিছু বলার নেই আমার।

মাহবুবের মা হালিমা বেগম বলেন, ছেলের চোখ বাঁচাতে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পাঁচ দিন পর ২৩ জুলাই ভারতের চেন্নাইয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে আবার তার চিকিৎসা চলে থাইল্যান্ডে। ১৭ দিন সেখানে অবস্থানের পর গত ১৫ সেপ্টেম্বর দেশে ফিরে আসেন তারা। ওই সময় চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, মাহবুবের চোখের আলো ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

তিনি আরও বলেন, তার এই অবস্থার মধ্যে স্ত্রী চলে যাওয়াটা কষ্টকর। সে তার স্ত্রীকে অনেক ভালোবাসতো। তার স্ত্রী চলে গেলে আমরা তাকে আটকাতাম না। কিন্তু এই সময়ে চলে যাওয়ার কষ্ট হয়ত আমার ছেলেটা নিতে পারবে না। আমি মা হয়ে তার কষ্ট সহ্য করতে পারছি না। স্ত্রীর পরিবারের সদস্যরা অনেকটা চাপ দিয়েই দেনমোহরের টাকাসহ মেয়েকে নিয়ে গেছে।

মাহবুবের বাবা মশিউর রহমানও বেশ অসুস্থ। তিনি বলেন, সন্তান ভবিষ্যতে মা-বাবাকে পথ দেখিয়ে চালাবে, কিন্তু সেই সন্তানকেই মা-বাবার হাত ধরে চলতে হয়। এরইমধ্যে মাহবুবের চিকিৎসায় ১০ লাখ টাকার বেশি খরচ করা হলেও চোখের আলো ফেরেনি। চিকিৎসকেরা আশ্বাস দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র বা জার্মানিতে নিতে পারলে মাহবুবের চোখের আলো ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু আমাদের সেই সামর্থ্য নেই। এই সময়ে তার স্ত্রী চলে যাওয়ার কষ্ট হয়ত সে মেনে নিতে পারবে না।

গত বছরের ১৮ জুলাই বেলা ১১টা থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনে নগরের চাষাঢ়া শহীদ মিনার ও গোল চত্বরে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে ধাওয়া দেয় ও গুলি ছোড়ে। এসময় পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যানে ভাঙচুরের পাশাপাশি আগুন দেওয়া হয়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ আরও মারমুখী হয়ে এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে থাকে। ওই দিন পুলিশের গুলিতে দৃষ্টিশক্তি হারান মাহবুব।

মোবাশ্বির শ্রাবণ/এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।
Exit mobile version