Site icon Amra Moulvibazari

তুরস্কে বিরোধীদের দমনে ক্ষতিগ্রস্ত হবে অর্থনীতি

তুরস্কে বিরোধীদের দমনে ক্ষতিগ্রস্ত হবে অর্থনীতি


তুরস্কে চরম বিশৃঙ্খলা শুরু হয় ১৯ মার্চ একরেম ইমামোগলুকে গ্রেফতারের পর। তাকে গ্রেফতারের তিন দিনের মাথায় তুরস্কের শেয়ারবাজারের সূচক কমে ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ। এরপর ২৪ মার্চ তা ২ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে। তুরস্কের মুদ্রা লিরাও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।

কিন্তু তুরস্কের বৃহত্তম শহরের রাস্তায় কোনো শান্তি দেখা যাচ্ছে না। জনসমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও টানা ছয় দিন ধরে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে ১০ জন সাংবাদিকসহ এক হাজার ১০০ জনেরও বেশি লোককে আটক করা হয়েছে। ২৩ মার্চ আদালত ইমামোগলুকে হেফাজতে পাঠানোর পর ইস্তাম্বুলের টাউন হলের সামনে এক সমাবেশে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়।

তার গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে বহু মানুষ ব্যালট বাক্সের মধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। প্রায় এক কোটি ৫০ লাখ ভোটার আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিরোধী রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) প্রার্থী হিসেবে ইমামোগলুকে সমর্থন করেছেন। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানকে ইমামোগলুর গ্রেফতারে পেছনে জড়িত বলে মনে করা হয়। তিনি বলেছেন, উসকানি দিয়ে আমাদের নাগরিকদের শান্তি নষ্ট করা বন্ধ করুন।

পর্দার আড়ালে তুরস্কের কর্তৃপক্ষ দেশের অর্থনীতিকে রক্ষা করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। তুরস্কের মূলধন-বাজার নিয়ন্ত্রক স্টক মার্কেটে শর্ট-সেলিং নিষিদ্ধ করেছে। তাছাড়া গত সপ্তাহে মাত্র তিন দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তুর্কি লিরার বড় ধরনের পতন রোধ করতে ২৬ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ খরচ করেছে।

তুরস্কের অর্থমন্ত্রী মেহমেত সিমসেক-এর নেতৃত্বাধীন দল সাম্প্রতিককালে অর্থনীতিতে যে বিপর্যয় দেখা দিয়েছিল তা কিছুটা হলেও ট্রাকে রাখতে সক্ষম হয়েছে। ২০২৩ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে এরদোয়ান মূল্যস্ফীতি ও বিনিময় হার যাইহোক না কেন, সুদের হার কম রাখার ওপর জোর দিয়েছিলেন। পরে সিমসেক-এর অধীনে সরকার ব্যয় কমিয়েছে ও ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধিও কমিয়েছে। একই সঙ্গে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক উল্লেখযোগ্যহারে সুদেরহার বাড়ায় ও বৈদেশি মুদ্রার রিজার্ভকে ৯৭ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যায়।

এতে বিদেশি ও স্থানীয় বিনিয়োগকারীরা লিরার দিকে ঝুঁকেছেন। যার অবমূল্যায়ন অব্যাহত রয়েছে কিন্তু তা অনেক ধীর গতিতে। এখন দেশটিতে মূল্যস্ফীতিও কমেছে।

কিন্তু ইস্তাম্বুলের মেয়র ইমামোগলুকে গ্রেফতার পরবর্তী বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে সরকার নতুন করে কঠোর অভিযান শুরু করেছে। এমন অবস্থায় আর্থিক বিশ্লেষণ সংস্থা ইনটাচ ক্যাপিটাল মার্কেটসের পিওতর ম্যাটিস বলেছেন, অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারীর আস্থা মারাত্মকভাবে নাড়া খেয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বল্পমেয়াদে লিরাকে রক্ষা করতে পারে। এ ব্যাপারে এরদোয়ানের কাছ থেকে সবুজ সংকেত পাওয়া গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মুদ্রাটি রক্ষা করতে ও মূল্যস্ফীতির নতুন ঢেউ এড়াতে সুদের হার কমানোর প্রক্রিয়া থামাতে বা বাতিল করতে হতে পারে। অব্যাহত বিক্ষোভ ও নৃশংস দমনমূলক পদক্ষেপ অর্থনীতির ওপর আস্থায় আরও ঘাটতি পড়বে। এর মাধ্যমে সাধারণ তুর্কিদের ইমামোগলুর গ্রেফতারের মূল্য দিতে হতে পারে। বিক্ষোভ ধীর হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এক পর্যায়ে এরদোয়ানকেও এর মূল্য দিতে হতে পারে।

সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট

এমএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।
Exit mobile version