Site icon Amra Moulvibazari

গর্ভের শিশুটি কি ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত

গর্ভের শিশুটি কি ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত


জিনগত কারণে যখন শারীরিক ও মানসিক বিকাশ প্রভাবিত হয়, ওই অবস্থাকে বলে ডাউন সিনড্রোম। এ অবস্থায় আক্রান্ত মানুষের শরীরে স্বাভাবিকের চেয়ে একটি অতিরিক্ত ক্রোমোজোম (ট্রাইসোমি ২১) থাকে। আক্রান্ত ব্যক্তির সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে রয়েছে চ্যাপ্টা মুখাবয়ব, ছোট গঠনবিশিষ্ট শরীর, চোখের কোণে তির্যক আকৃতি, পেশির দুর্বলতা এবং শেখার সক্ষমতা কম থাকা। সঠিক যত্ন ও শিক্ষার মাধ্যমে অবশ্য তারা সমাজের অংশ হয়ে উঠতে পারে।

প্রতি বছর ২১ মার্চ বিশ্বব্যাপী পালিত হয় ‘বিশ্ব ডাউন সিনড্রোম দিবস’। সমাজে ডাউন সিনড্রোম আক্রান্ত ব্যক্তিদের অধিকার, অন্তর্ভুক্তি এবং স্বীকৃতি দিতে জাতিসংঘ দিনটিকে স্বীকৃতি দিয়েছে।

যেহেতু জন্মগতভাবে শিশুর বৃদ্ধি ও শারীরিক গঠনে ডাউন সিনড্রোম প্রভাব ফেলে, তাই জন্মের আগেই পরীক্ষা করে নেওয়া যেতে পারে যে গর্ভের শিশুটি ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত কি না। আগেই বলা হয়েছে, ২১ নম্বর ক্রোমোজোমের একটি অতিরিক্ত কপি থাকায় এই অবস্থা ঘটে। এটি শিশুর শারীরিক বৈশিষ্ট্য ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে পরিবর্তন আনে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য বলছে, বিশ্বে প্রতি ৮০০ শিশুর মধ্যে একটি শিশু ডাউন সিনড্রোম নিয়ে জন্ম নেয়। ডাউন সিনড্রোম শিশুদের মাংসপেশি শিথিল, উচ্চতা কম, চোখের কোন ওপরের দিকে ওঠানো, চ্যাপ্টা নাক, কান ছোট, হাতের তালুতে মাত্র একটি রেখা, জিব বের হয়ে থাকা ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। এ ছাড়া কানে কম শোনা, কথা বলতে দেরি হওয়া, কম বুদ্ধি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। জন্মগতভাবে কখনও কখনও এরা হার্ট ও থাইরয়েডের নিয়ে জন্মায়।

প্রতিরোধের উপায়

গর্ভাবস্থার প্রথম ২৪ সপ্তাহের মধ্যে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ডাউন সিনড্রোম শনাক্ত করা যায়। যেমন আলট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে গর্ভের শিশুর নাকের হাড় দেখা, মায়ের রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ডাউন সিনড্রোমের উপস্থিতি নির্ণয়, ভ্রূণের কোষ নিয়ে পরীক্ষার মাধ্যমে গর্ভের শিশুটি ডাউন সিনড্রোমে আছে কি না, তা সহজেই যাচাই করা যায়।

চিকিৎসা

বিশেষজ্ঞদের মতে, সময়মতো পরিচর্যা ও চিকিৎসার মাধ্যমে শারীরিক সমস্যাগুলো নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। উপযুক্ত পরিবেশ ও বিশেষ শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে বড় করতে পারলে ডাউন সিনড্রোম শিশুরা কর্মক্ষম হয়ে অর্থবহ জীবন যাপন করতে পারে। যেহেতু মায়ের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডাউন সিনড্রোম শিশু হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ে, তাই চিকিৎসাবিজ্ঞানে অধিক বয়সে, বিশেষ করে ৩৫-এর বেশি বয়সীদের মা হওয়াকে নিরুৎসাহিত করা হয়। কোনো মায়ের আগের বাচ্চা যদি ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত থাকে, তবে পরের বাচ্চা নেওয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

বিশ্ব ডাউন সিনড্রোম দিবস পালনের উদ্দেশ্য

এই দিবসের মূল লক্ষ্য হলো ডাউন সিনড্রোম সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রতি সহমর্মিতা গড়ে তোলা এবং তাদের সমাজে অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা। বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা এ উপলক্ষে সচেতনতামূলক কর্মসূচি, সেমিনার, র‍্যালি, ওয়ার্কশপ এবং সামাজিক প্রচারণা পরিচালনা করে।

ডাউন সিনড্রোম আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি

দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সমাজের অনেক ক্ষেত্রেই ডাউন সিনড্রোম আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব লক্ষ্য করা যায়। ভুল ধারণার কারণে অনেকেই তাদের প্রতি অবহেলা করেন বা তাদের ক্ষমতাকে খাটো করে দেখেন। বাস্তবতা হলো, যথাযথ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই ব্যক্তিরা শিল্প, সংগীত, ক্রীড়া এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে তারা স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করতেও সক্ষম।

পরিবার ও সমাজের করণীয়

ডাউন সিনড্রোম আক্রান্তদের যথাযথ বিকাশ ও অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে পরিবার ও সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাদের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব প্রদর্শন করা, মানসিক সমর্থন প্রদান করা এবং উপযুক্ত শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করা অত্যন্ত জরুরি।

আরএমডি/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।
Exit mobile version